শিরোনাম
বাবা মানে নির্ভরতার আলিঙ্গন
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:১৫
বাবা মানে নির্ভরতার আলিঙ্গন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ধরুন আপনার জন্মদিন আজ। সবাই আপনাকে উইশ করছে... হ্যাপি র্বাথ ডে। কিন্তু আপনার এই শুভ দিনটিতে কেউ কি কখনো বলেছেন আজকের দিনটা বাবা শুধু তোমার জন্য। তোমার জন্যই আমার পৃথিবীতে আসা। তারপর তোমার হাত ধরে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা। আমার এগিয়ে যাওয়াও তোমার জন্যই। আমার পৃথিবীজুড়ে শুধু তুমিই বাবা।


হ্যাঁ বলেছেন হয়তো কিন্তু একথা শুধু বললেই হয় না কাজেও দেখিয়ে দিতে হয়। প্রতিদিনই আমরা বাবার নির্দেশনা ও আদর্শই অনুসরণ করি। কিন্তু আজকের বাবাকে নিয়ে আলাদা করে কিছু বলতেই হয়, কি বলেন?


পিতাই স্বর্গ, পিতাই ধর্ম এবং পিতাই পরম তপস্যা, পিতা প্রীত হলে সকল দেবতা প্রীত হন' শাস্ত্রের এ বাণী থেকে উপলব্ধি থেকে করা যায় বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা ও দায়িত্ব কতটুকু। গ্রীক কবি হোমার আরও বাড়িয়ে বলেছেন- 'সেই জ্ঞানী সন্তান, যে তার বাবাকে জানে।'


বাবা শব্দটির মধ্যে বিশালতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। পাওয়া যায় নির্ভরতার আলিঙ্গন। বাবা মানে আশ্রয়। বাবা মানে একটি বট বৃক্ষ। বাবা মানে এক টুকরো ছাদ। মাথার ওপর বিশাল আকাশ। বাবা কখনও সন্তানকে বুঝতে দেন না কীভাবে তিনি তার সন্তানের মুখে অন্ন জোগান দেন।


একটি শিশু যখন অপিরিচিত এই পৃথিবীতে, সম্পূর্ণ একা, তখন বাবাই দেন ভরসা। জীবনে চলার পথে বাবাই বলিষ্ঠ সাহচর্য দেন, দেন সঠিক পথের দিশা, একইসঙ্গে ভাল কাজে দেন অনুপ্রেরণা। আরও দেন জীবনে এগিয়ে যাওয়ার ছবক। তাইতো বাবা শব্দটি নিরাপত্তা আর পরম নির্ভরতার প্রতীক।


একটি শিশু জন্ম নেয়ার পর বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে কত কিছু না চেনাতে হয়। ঐ দূরের গাছগাছালি, বিশাল নীলাকাশ, আর চড়–ই-বাবুই পাখির কাহিনী আরও কত কী! কিন্তু কখনো তাকে শেখাতে হয় না এটা তোমার বাবা, এটা তোমার মা। প্রকৃতি তাকে চিনিয়ে দেয় পরম নির্ভরতার প্রতীক বাবা-মাকে।


বাবা মানে ত্যাগের পাহাড় স্বপ্ন গড়ার কাজে, কষ্টগুলো লুকিয়ে রাখেন সকাল-দুপুর-সাঁঝে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, বাবার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাই আদর্শ ও ভালো বাবার কিছু গুণের কথা নিম্নে আলোচনা করা হলো;


একজন দায়িত্বশীল ও যত্নবান পুরুষই আদর্শ বাবা। সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব কম থাকে। ছেলে-মেয়ের সঙ্গে সবসময় বন্ধুর মতো আচরণ করেন।


আদর্শ বাবা কাজে যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, সন্তানকে নিয়মিত সময় দিয়ে থাকেন। পড়াশোনায় সাহায্য করেন, বেড়াতে নিয়ে যান।


আদর্শ বাবা ছুটির দিনে একসঙ্গে খেলা বা বাড়ির কাজ একসঙ্গে করে থাকেন। সন্তানের ছোট ছোট বিষয়েও অনেক গুরুত্ব দেন।


আদর্শ বাবার স্ত্রীর সঙ্গে মাঝে মধ্যে মতের অমিল হতেই পারে, কিন্তু তার কুৎসিত রূপটি কখনোই সন্তানের সামনে আনেন না।


ভালো বাবা ছেলে-মেয়েদের দোষগুণ নিয়ে মজা করেন না। তাদের কোনো ভুল হলে তা শুধরে দিতে চেষ্টা করেন।


আদর্শ বাবা সংসারের কাজ-কর্ম, ছেলে-মেয়েদের দায়িত্ব সব মায়ের ওপর চাপিয়ে দেন না। বরং তিনি পরিবার সামাল দিয়ে স্ত্রীকে সাহায্য করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। এমন ব্যবহারের মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের কাছে আপনার সম্পর্কে একটি ভালো মেসেজ পৌঁছায় এবং সন্তানও এভাবেই বেড়ে ওঠে ও ভালো গুণের অধিকারী হয়।


বাবা হয়েও মাঝে মাঝে মায়ের তথাকথিত দায়িত্বগুলো পালন করলে সন্তানের সঙ্গে আপনার বন্ধন আরও মজবুত হয়ে উঠবে।


এবজন ভালো বাবা শিশুকে গড়ে উঠতে সাহায্য করেন। দায়িত্বশীল বাবা হিসেবে সন্তানের ডায়পার বদলান, গোসল করান, জামাকাপড় বদলান, ঘুমপাড়ানোর মতো কাজকে মেয়েলি বলে তুচ্ছ করেন না। বরং স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য নিজেই এ কাজগুলো করেন।


সন্তানের বিভিন্ন শখ এবং সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।


আদর্শ বাবা সন্তানের সামনে ধূমপান করেন না। কারণ তারা মনে করেন সিগারেটের ধোঁয়া সন্তানের হার্টের ক্ষতি করে। তার সন্তানের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তারা ধূমপায়ী হলেও তা ধীরে ধীরে ছেড়ে দেন।


সন্তানকে কোনো বিষয়ে কথা দিলে শত কষ্ট হলেও ভালো বাবা তা রাখার চেষ্টা করেন। বাবার শত ব্যস্ততা থাক না কেন, তারপরও সন্তানের ছোট ছোট চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।


সন্তানের ক্লাস টেস্টের পড়া তৈরিতে সাহায্য করেন। শুধু তাই নয় বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচের আগাম প্রস্তুতিতেও সাহায্য করে থাকেন বাবা। সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সব রকম চেষ্টা করে থাকেন তিনি।


সন্তানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে থাকেন আদর্শ বাবা। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছাকে সন্তানের মাধ্যমেই পূরণ করার চেষ্টা করে থাকেন তিনি। তবে কোনো কিছু চাপিয়ে দেন না। সন্তানের দক্ষতা ও মেধা অনুযায়ী তাকে এগোতে তিনি আলোর পথ দেখান।


আদর্শ বাবা সন্তানকে শাসন করেন আদরে। সন্তানকে কড়া শাসন না করে নিয়ন্ত্রণ করেন নমনীয়ভাবে।


সন্তানের জীবনে যতই সাফল্য আসুক না কেন বাবার ভালবাসার ছায়া থেকে কেউ দূরে সরে যেতে চায় না। সন্তান যত বড়ই হোক সেতো তার সন্তান। অভিমান আর অবহেলার পরিমাণ যত বেশিই হোক না কেন বাবার স্নেহের দরজাটা সবসময়ই খোলা থাকে সন্তানের জন্য। তাই বাবাই হতে পারেন সন্তানের সবচেয়ে বড় বন্ধু। বাবাকে অনেক কথাই খুব সহজে বলা যায়। সদিচ্ছা নিয়ে বাবার সাথে মিশতে পারলে বাবা হয়ে উঠে সারা জীবনে ছায়ার মতো বন্ধু।


বিবার্তা/শারমিন


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com