শিরোনাম
কথা দাও তুমি রাখবে কাছে...
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:৫৯
কথা দাও তুমি রাখবে কাছে...
মডেল: আমির পারভেজ ও জাকিয়া ইমি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভালোবাসা আসলে সমস্ত শুভ ও সৃষ্টির শক্তি। এটা শুধুমাত্র জৈবিক বা শারীরিক ব্যাপার নয়। আবার শুধুমাত্র মানসিক বিষয়ও নয়। এটা ঠিক যে সবাই ভালোবাসে, সবাই প্রেমে পড়ে। তবে সবার প্রকাশভঙ্গি একরকম হয় না। খুব সহজ কিছু বিষয় আপনার ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে যথেষ্ট।


ভালোবাসার অনুভূতিটা কি এভাবে ব্যক্ত করা যায়!.... মন আকঁছে তোমার ছবি ধীরে ধীরে ... মন ডাকছে তোমারই নাম ধীরে ধীরে... টুকরো সুখের নকশাতে মেঘে তোমায় ভাসাতে ... জেগেছে ঘুমানো আশায় ... স্বপ্ন বিভোর ঝর্ণাতে মেঘে তোমায় ভাসাতে মেশাবো ভালোবাসায় ... কথা দাও তুমি রাখবে কাছে... কথা দাও তুমি থাকবে কাছে।


যদিও বিজ্ঞানীরা গবেষণায় প্রাণ-রসায়নের নানা বিক্রিয়াকেই ভালোবাসা হিসেবে প্রমাণ করেছেন, তবু ভালোবাসার স্থান মানুষের জৈবিক স্তরের উপরে। ভালোবাসা, যা মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে নেই। তাহলে একসময় মনের মানুষটিকেই চিরতরে হারিয়ে ফেলবেন। আর একবার সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে ফেললে কখনোই কারো সঙ্গে আপনি সেই ভালোবাসা অনুভব করতে পারবেন না।


আমাদের সবার ভালোবাসার ধরন একই রকম না। কেউ অনেক চঞ্চল, তিনি চান সবাইকে জানিয়ে দিতে তার ভালোবাসার কথা, কেউ অনেক চুপচাপ ও নীরবে ভালোবেসে যান। কেউ চান ভালোবাসাটা নিজেদের মাঝেই থাকুক আর কেউ না জানুন। কিন্তু একজন মানুষের সঙ্গে যখন একই ছাদের নিচে থাকা শুরু হয়, তখন কিংবা একটা নির্দিষ্ট সময় পর এই ভালোবাসার রূপ বদলাতে শুরু করে। আপনার জন্য ক্যানডি কিনে আনা ছেলেটি এখন আপনার জন্য আর ক্যানডি কিনবে না বা টিফিনের টাকা জমিয়ে যেই মেয়েটি আপনার পছন্দের ঘড়ি কিনে দিয়েছিলো, সেই মেয়েটির ভালোবাসার ধরনও কিন্তু পাল্টে যায়।


তাহলে কি একটা সময় পর আর ভালোবাসা থাকে না? অবশ্যই থাকে, তবে এই ভালোবাসার রূপ পাল্টে যায়। ভালোবাসার এই রূপ পাল্টে যাওয়াটা অনেকের কাছেই ধাঁধার মতো। অনেকেই ভাবতে শুরু করি, সে আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসে না। সে আর আগের মতো নেই। এসব ক্ষেত্রে আসলে কি ভালোবাসা হারিয়ে যায় নাকি সেটি আরও দৃঢ় হয়?


কৈশোর কিংবা তরুণ বয়সের প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে আবেগের পরিমাণ বেশি থাকে, তখন সম্পর্কের জন্য উভয়েই সর্বোচ্চ করতে চায়। কিন্তু যখন আমাদের মাঝে পরিপক্বতা আসে তখন আমাদের ভালোবাসার আবেগের সঙ্গে আরও অনেক কিছু যোগ হয়। যেমন: মমতা, দায়িত্ববোধ, শ্রদ্ধা। তখন হয়তো ছেলেবেলার পাগলামিগুলো কেউ করে না কিন্তু এমন অনেক কিছুই করে, যা আসলেই একটা সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যেহেতু আমরা ‘আকাশের চাঁদ এনে দেব’ বা ‘তোমার জন্য জীবন দিয়ে দেব’ ধরনের ভালোবাসায় অভ্যস্ত হয়ে যাই, তাই আমাদের চোখ তখন অনেক ভালো কিছুও এড়িয়ে যায়।


মোহের সময়
এই সময়টা তখনকার, যখন একজন মানুষকে নতুনভাবে চেনা হয়। তার সবকিছুই ভালো লাগবে তখন আপনার। আপনি তখন আপনার সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি থাকবেন শুধু ওই মানুষটার জন্য। কিন্তু এটা খুব কম সময়ের জন্য। কেননা, আপনি তখনো আপনার ভালোবাসার মানুষের ত্রুটি বা খারাপ দিকগুলো জানেন না। জানলেও শুধু ভালো দিকটাই চোখে পড়ে। বলা হয়, এটা যেকোনো সম্পর্কের সবচেয়ে সুন্দর সময়।


দায়িত্ব
এই সময়টা তখন আসে, যখন ভালোবাসার মানুষকে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আপনি ঠিক করে ফেলেন এই মানুষই সে, যার সঙ্গে সারা জীবন কাটাতে চান। এই সময় অনেকেই দায়িত্বের চাপ নিতে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সময়ে সম্পর্কের ফাটল ধরে। কিংবা আপনি যদি বিবাহিত হন সে ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে সেই সময়, যখন আপনারা ভাবছেন আপনাদের একটি সন্তান হোক কিংবা আপনারা খুব স্থায়ী কিছু করার জন্য তৈরি হচ্ছেন। এই সময়টা যেহেতু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়িত্বটাকে অনেক বেশি বড় করে দেখা হয়, যেটায় ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। মূলত ভালোবাসা থাকে বলেই কিন্তু আপনি বা আপনার সঙ্গী অনেক বেশি গুরুত্বের সঙ্গে সময়টা পার করতে চান।


দ্বিধা
অনেক দিন ধরে পেতে থাকা অবহেলা বা দায়িত্বের চাপে পড়া মনটা এই সময় অস্থির ও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। ভালোবাসার সম্পর্কে থাকা দুজন মানুষ এই সময় ভাবতে থাকেন, ‘আমি এই মানুষকে ভালোবাসিনি’ বা ‘সে অনেক বদলে গিয়েছে’। আবার যাঁরা সংসারে আছেন, তাঁরা ভাবতে পারেন, ‘শুধু সংসারের জন্য এত কিছু করলাম তাও আমি কী পেলাম’ বা ‘নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছি কিন্তু আমার জন্য কি সে ভাবে?’ এই সময়টায় ভালোবাসা প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কিন্তু অনেকেই ভুলে যান, এটা সম্পর্কের ব্যাপার—এখানে দুজনেই ছাড় দেবেন। অনেকেই এই সময় বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তবে যাঁরা একটু স্থির থেকে সম্পর্কটা চালিয়ে নিয়ে যান, তারাই বুঝতে পারেন এই সময়ের ভালোবাসা এমনই হবে। কেননা ভালোবাসা না থাকলে কেউ ওসব প্রশ্নের কথা ভাবতেন না।


স্থিরতা এবং সহমর্মিতা
এই সময়টায় কমবেশি সবাই বুঝতে শুরু করেন সেই ক্লাসের পাশের চেয়ারে বসা ছেলেটা জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ কিংবা যেই মেয়েটির মন খারাপ দেখে সাইকেল চালিয়ে তার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা হতো, তাকে আসলেও এতটা বছর পরও কত ভালোবাসেন। কিন্তু এই অনুভূতি সবার হয় না, কেননা সবাই এই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না বা পারেন না। বুঝতে পারেন ভালোবাসাটা সব সময়ই ছিল, কেবল রূপ পাল্টেছে। এর বাইরে আর কিছুই নয়।


মানুষের জীবনের প্রয়োজনেই কামনা-বাসনা, চাওয়া-পাওয়া ভালোবাসার প্রয়োজনীয় জৈবিক উপাদান। ভালোবাসা সুন্দর জীবনের কারণেই খুব প্রয়োজন। অমর ইংরেজ কবি কীটস বলে গেছেন, 'ভালোবাসা যে পেল না, আর ভালোবাসা যে কাউকে দিতে পারল না, সংসারে তার মতো দুর্ভাগা নেই'।


বিবার্তা/শারমিন


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com