শিরোনাম
বন্ধন দৃঢ় করতে সময় দিন পরিবারকে
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:১২
বন্ধন দৃঢ় করতে সময় দিন পরিবারকে
মডেল : আমির পারভেজ, জাকিযা ইমি, আঞ্জুমান আরা বকুল
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে আপনি-আমি-আমরা সবাই ব্যস্ত। ছুটতে ছুটতে, চলতে-চলতে অনেকেই ভুলে যাই আমাদের চারপাশ এবং পরিবারকে। মাঝে মাঝে তো ভুলে যাই নিজেকেই। ব্যবসা-বাণিজ্যে, চাকরিতে বা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য সবাই দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছি সময়ের রথে চড়ে। পরিবারকে সময় দেয়ার সময় কোথায়? এই সমস্যা প্রায় সব পরিবারের। সময়ের পরিক্রমায় প্রাত্যহিক জীবন যাপন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে।


কর্মব্যস্ততার জালে আটকে থাকা শফিকুর রহমান বলেন, ‘সন্তানদের লেখাপড়া চলাকালে রাতের খাবার একসঙ্গে খাওয়া হতো। কিন্তু এখন অফিস থেকে ফিরতেই রাত প্রায় ১১টা বেজে যায়। তারপরও বন্ধের দিনগুলোতে আমরা অন্তত একটি বেলা একসঙ্গে খাবার টেবিলে বসতে চেষ্টা করি। অনেক সময় সেটাও সম্ভব হয় না। এতে দূরত্ব বাড়ছে সন্তানদের সঙ্গে।’



অফিস থেকে বাড়ি ফিরেও স্বস্তি নেই। ঘরে ফিরে পরিবারের সদস্যরা যে যার মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সামাজিকতা রক্ষায় ব্যস্ত। পাশে থাকা মানুষটিকে খেয়াল করার সময় নেই।


নিশ্বয়ই ভাবছেন, এ আবার কেমন কথা। পরিবারের সঙ্গেই তো আছি। যা কিছু করছি পরিবারের জন্যই তো। হ্যাঁ, কষ্ট করছেন- কথাটি ঠিক। কিন্তু, আপনি জানেন না সঙ্গে থাকা মানেই কাছাকাছি থাকা নয়। সব কাজ করছেন ঠিকই কিন্তু আসল কাজ করছেন না। আপনি কি আপনার সন্তানকে যথেষ্ট সময় দেন?


ওরা কি আপনার প্রতি নির্ভয়। আপনার সঙ্গে সমস্যা, সুখ-দুঃখ শেয়ার করে। স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা কি আপনাকে বলে। সন্তানের দিকে তাকালে ওদের ভেতরটা বাবা-মায়ের কাছে আয়নার মতো পরিষ্কার দেখা যাবে।


সারাদিনের কাজের শেষে বাসায় ফিরে ক্লান্ত তো লাগবেই, তবু সন্তানের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলুন। দিনটি তার কেমন কেটেছে জানতে চান। স্কুলে মজার কিছু ঘটলো কি না, নতুন কোন বন্ধু হলো কি না, সেসব নিয়ে আলাপ করুন।


সবসময় শুধু পড়াশোনা নিয়ে আলাপ করবেন না। এতে তার পড়াশোনার প্রতি বিরক্তি চলে আসতে পারে। পড়াশোনার বাইরে কোন নতুন বই, শিশুতোষ সিনেমা তার ভালো লাগলো কি না জেনে নিন। ছুটির দিনগুলোতে তাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান। সম্ভব হলে মা-বাবা দুজনে একসঙ্গে যান। সন্তান খুশি থাকবে।


আজকাল ভাইবোনেরাও নিজেদের মধ্যে গ্রুপ চ্যাটে কথা বলে। অর্থাৎ, পরিবারের সদস্যরাও ভার্চুয়াল বন্ধনে আবদ্ধ। এতে প্রভাব পড়ছে সামাজিক সম্পর্কগুলোতে। সামাজিক অবক্ষয়েরও কারণ হয়ে উঠেছে ভার্চুয়াল সম্পর্ক।


ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আমিরুল ইসলাম আমির বলেন, সারাদিন ক্যাম্পাসের ক্লাস শেষে, গ্রুপ স্টাডি, কোচিং, এরপর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। আর সময় কোথায়? বাসায় গিয়ে কোনো রকম ঘুম দিলেই বাঁচি। এখন ব্যাপার হলো এভাবে কতোদিন চলবে। আমাদের আসলে ভুলে গেলে হবে না যে বাড়িতে অপেক্ষায় পরিবারের বাকি মানুষগুলো বসে আছে, অপেক্ষা করছে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শাহনেওয়াজ আরেফিন বলেন, প্রাযুক্তিক উন্নয়নের সুবাদে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকলেও মায়ের হাতের রান্না থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হই আমরা। তিন চার মাস পর পর বাড়ি গেলে নিজের বাড়িতে নিজেকেই অতিথি মনে হয়। এদিকে যদি হয় এমন অবস্থা তাহলে এই মায়ার দুরত্বের প্রভাব পড়ে মানসিকতায়। পরিবারের প্রতি দুরত্বই কিন্তু অনেক হতাশাগ্রস্থ করে ফেলে জীবনকে।


মনোবিদেরা বলছেন, সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের মূলমন্ত্র- পরিবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটনো। এই পারিবারিক সময় যে খুব আয়োজন করে কাটাতে হবে এমন কোনো কথা নেই।


হাফিংটন পোস্টের এক প্রবন্ধে বলা হয়, টেলিভিশন, ট্যাব,স্মার্টফোন আর ল্যাপটপ ব্যবহারের মধ্যদিয়ে খাবার টেবিলে জায়গা করে নিয়েছে প্রযুক্তি। এসব ডিভাইস দূরে সরিয়ে খাবার টেবিলে গল্প করুন পরিবারের সব সদস্য মিলে। বাবা-মায়েরই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে একে পারিবারিক নিয়মে পরিণত করতে।



পরিবারের নিজেদের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে মাসে অন্তত একদিন সবাই মিলে ঘুরতে যান। এছাড়াও কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এতে আত্মীয়তার বন্ধনও দৃঢ় হবে।


পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে বাচ্চাদের যোগাযোগ তৈরি করুন। এতে ছোটদের মধ্যে পারিবারিক মূল্যবোধ তৈরি হবে। মাঝে মধ্যে পুরনো ফ্যামিলি অ্যালবাম দেখুন সবাই মিলে। স্মৃতিচারণেও বর্তমান প্রজন্ম পারিবারিক ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত হয়।


পরিবারে দাদা -দাদি ও নানা-নানির আদর পাওয়ার সৌভাগ্য হয় না অনেকের। মুরুব্বিদের কাছে না পাওয়ার বেদনাটা ঝাপসা বরাবরের মতোই। পারিবারিক মুল্যবোধ তৈরিতে বয়োজ্যেষ্ঠদের অভাব বোধ করতে হবে।


এছাড়া ধর্মীয় অনুশাসন চর্চার মাধ্যমেও আমরা নতুন প্রজন্মকে জীবন বোধ সম্পর্কে জানাতে পারি। ধর্মীয় অনুশাসনে পারিবারিক বন্ধনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।


হাহাকারের জীবনে পরিবারই শেষ আশ্রয়স্থল, সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে সবসময়। এই যে এত কর্মযজ্ঞ, তার সবই পরিবারের জন্য। তাই খেয়াল রাখতে হবে, কাজ যেন পরিবারকে অবহেলার কারণ না হয়ে ওঠে।


একজন মানুষ যত বড় হোক না কেন তার মূল গ্রথিত থাকে পরিবারেই। পরিবারের সুখ-দুঃখ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। পরিবারের সুখই হচ্ছে প্রকৃত সুখ। তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি বিশেষ করে শিশুদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। তাদের ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাতে একদিকে যেমন আপনি ভাল থাকবেন তেমনি দেশটাও সুনাগরিকে ভরে যাবে। একজন সুনাগরিকই পারে দেশটাকে বদলে দিতে।


বিবার্তা/শারমিন


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com