শিরোনাম
মন খারাপের দাওয়াই
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:০৯
মন খারাপের দাওয়াই
মডেল: আমির পারভেজ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সবারই মন খারাপ হয়। কারও কারণে, কারও অকারণে। কমবেশিও হতে পারে তার পরিমাণ। অফিসে বস কিংবা সহকর্মীর কোনো কথায় কিংবা ক্লাসে-ক্যাম্পাসে বন্ধুর আচরণে। মন খারাপ হতে পারে পরীক্ষার ফলের জন্যও। তবে অনেকে আছেন যাদের অল্পতেই মন খারাপ হয়ে যায়।


মানুষের ব্রেনের একটা সমস্যা কি জানেন তো? আমাদের ব্রেন বাস্তব ও কল্পনার পার্থক্য ধরতে পারে না। ব্রেনের গঠন জটিল কিন্তু পলিসি সহজ। আর তাই আমরা হাসির জিনিস দেখলে/শুনলে হাসি। কান্নার হলে নিজের অজান্তেই কাঁদি! মন খারাপ হওয়াটা আপনার দোষ না। হঠাৎ কোন দৃশ্য, ঘটনা, কথা কিংবা স্মৃতি- আপনার ব্রেনকে নাড়া দিতেই পারে।


‘যেসব মানুষের অল্পতে মন খারাপ হয়ে যায় সাধারণের তুলনায়, তাদের সামাজিক দক্ষতা কম। তারা যদি নিজেদের আরও সামাজিক করে, অন্যান্য সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকে, তাহলে আর অল্পে মন খারাপ হবে না। অনেকের আবার ব্যর্থতাকে গ্রহণ করে নেওয়ার ক্ষমতাও কম।’



অনেকেই তো আছেন, যাদের নিজেদের জীবন, নিজেদের চারপাশ নিয়ে মন খারাপ থাকে। ‘আমরা অনেকে আছি যারা শুধু আমাদের চারপাশের নেতিবাচক বিষয় দিয়ে প্রভাবিত। চারপাশের ইতিবাচক বিষয়গুলোর দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত। যে কোনো বিষয়েই ইতিবাচক থাকা উচিত।’


অনেক বেশি মন খারাপ থাকলে তা স্বাভাবিক কাজকর্মের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে থাকে। কাজে ঠিকমতো মন বসে না, এবং দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার এই আবেগটি যখন কাজ করতে থাকে তখন যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয় তাও পরবর্তী জীবনের জন্য খারাপ হয়।


মন খারাপ ভালো করার উপর আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে অনেকাংশে। তাই চলুন দ্রুত মন ভালো করে ফেলার কিছু উপায় জেনে নেয়া যাক ঝটপট।


ধর্মীয় কাজে মনযোগ
ধর্মীয় কাজে মনযোগ দিতে পারেন মন ভাল হয়ে যাবে। আপনি ওযু করে সামান্য সময় কোরআন তেলাওয়াত করেন। দেখবেন- আশা করি মন ভালো হয়ে যাবে।


বড় করে শ্বাস নিন
যখন অনেক বেশি মন খারাপ হবে তখন তা আমাদের মস্তিষ্কে চাপ ফেলবে এবং মানসিক অশান্তি ও চাপ বাড়তে থাকবে। এই জিনিসটি দূর না করতে পারলে মন ভালো হবে না। তাই বড় করে শ্বাস নিন ও ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এতে মস্তিষ্ক রিলাক্স হবে ও মানসিক চাপ কমতে থাকবে। সেই সাথে কমবে মন খারাপের মাত্রাও।


পানি পান করুন
অনেক সময় ডিহাইড্রেশনের জন্য আমাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং মন খারাপটি আরও বেশি করে আমাদের সামনে চলে আসে। তাই মন খারাপ দূর করতে পানি পান করে নিন এক নিঃশ্বাসে ১ গ্লাস। পানি পানের ফলে অনেকটা হালকা হয়ে যাবে মন।


চিৎকার করে নিন
সাইকোলজিস্টদের মতে আমরা যখন চিৎকার করি তখন আমাদের মস্তিষ্কে যে হরমোনের সৃষ্টি হয় তা মন খারাপের বিষয়টি দূর করে দেয়। তাই অনেক বেশি মন খারাপ লাগলে চিৎকার করুন একলা বসে, আপন মনেই। অথবা লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদবেন না। চিৎকার করেই কেঁদে নিন খানিকক্ষণ।


সিনেমা দেখতে যান
সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। সিনেমা হলে যাওয়া সম্ভব না হলে ল্যাপটপেই সবচেয়ে প্রিয় বা কোনো মজার হাজির সিনেমা দেখতে পারেন।


রান্না করুন
আপনি যখন বিষণ্ন থাকবেন তখন, নিজের পছন্দের মজার কোনো খাবার খেয়ে নিন। বিশেষ করে চকলেট ধরণের কিছু খাবার। এতে করে ভালোলাগা আপনাআপনি উৎপন্ন হবে। কারণ পছন্দের কিছু করলে এবং খেলে মস্তিষ্কে ‘সেরেটেনিন’ নামক ভালোলাগার হরমোন উৎপন্ন হয়।


হঠাৎ একটি ছোট্ট উপহার
উপহার পেলে কার না মন ভালো হয়? কোনো উপলক্ষ থাকলে তো একে অন্যকে উপহার দেওয়াই হয়। নিজের মনের শান্তির জন্য কিছু করা উচিত। এতে করে নিজ থেকেই মন খারাপ দূর হয়ে যাবে। এর জন্য যে আপনাকে অনেক খরচ করতে হবে তা কিন্তু নয়। একটি ফুল বা ছোট্ট একটি কার্ডই মন খারাপ দূর করে দিতে পারে।


পুরোনো স্মৃতি মনে করুন
ছোটবেলায় ডায়েরি লিখতেন নিশ্চয়ই! এই অভ্যাসটি প্রেমিককে খুশি করার জন্যও কাজে লাগাতে পারেন। সম্পর্কের শুরু থেকে কোথায় কোথায় বেড়াতে গিয়েছেন, মজার কোনো স্মৃতি আরও একবার মনে করুন। একসঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তের ছবিও ব্যবহার করতে পারেন। কয়েক পাতার একটি চিঠি লিখে পুরোনো যেকোনো ভালো স্মৃতি মনে করুন।


প্রশংসা!
প্রশংসা ও ভালোবাসা হচ্ছে এমন দুটি জিনিস, যা যেকোনো মানুষের মন নরম করে দেয়। নিজেকে ছোট মনে করা বন্ধ করুন। নিজের সঙ্গেই নিজে শেয়ার করুন। মন খারাপ থাকলে নিজের সঙ্গেই নিজেই প্রশংসা করুন, দেখবেন একসময় ঠিকই মন খারাপ দূর হয়ে গেছে।


বাইরে কথাও ঘুরতে চলে যান
মন ভালো করার আরেকটি ভালো উপায় হচ্ছে এক জায়গায় বসে না থেকে ঘুরে আসা। বাসায় বসে থাকা কিংবা অন্য কোনো স্থানে বসে থাকলে মন ভালো হবে না মোটেই। বেড়িয়ে পড়ুন। ঘোরাঘুরি এবং হাঁটাহাঁটির মধ্যমে ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার মাধ্যমেও মন খুব দ্রুত ভালো হয়ে যায়।


এছাড়াও বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন, সবাই একসঙ্গে খেলা দেখতে পারেন, গান করতে পারেন। সব মিলিয়ে সময়টাকে উপভোগ করতে পারেন।


একচেটিয়া মেয়েদের প্রশংসা করতে করতে আমরা অনেকেই হয়তো ছেলেদের ভালো দিকগুলো দেখার চেষ্টা করি না।



খুব অল্পসংখ্যক ছেলে আছে, যারা তাদের সম্পূর্ণ জীবনটা শুধু নিজের জন্য বাঁচে। অধিকাংশ দিনই পার করে অন্যের আবদার-শখ মেটাতে গিয়ে। আমরা মেয়েরা জীবনটাকে যত কঠিন মনে করি, জীবনটা হয়তো ততটা কঠিন নয়। আমাদের কখনো বলা হয় না ভালো চাকরি করতে হবে, তোমার আয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে আরো পাঁচটি মানুষ। তাদের থাকা-খাওয়া তোমাকেই দেখতে হবে। তবে বোঝাপড়া থাকলে সবই ঠিক থাকে।


ছেলেদের মন খারাপ করতে হয় না। কাঁদতে হয় না। এই কথাগুলো ছোটবেলা থেকেই চলে আসছে। বলা হতো, আরে তুমি মেয়ে নাকি যে কাঁদ! অসহায় পুরুষ মানুষ। না আছে মন খারাপের স্বাধীনতা, না আছে কাঁদার। তাদের কষ্ট হয়, কান্নাও পায়; কিন্তু তারা তাদের অনুভূতি লুকাতে জানে। তাদের প্রতিটি দিন কষ্ট করতে হয়। ভালো রেজাল্ট থেকে ভালো চাকরি পর্যন্ত একটা দিন তাদের এমনি এমনি কাটে না। চাকরি পেয়েও শান্তি আছে কি? ছেলে চাকরি পেয়েছে এবার সংসারের হাল ধরবে। পুরুষের জীবনে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। তবে সব কিছুই কিন্তু এক ধরনের বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে সবাইকেই মানতে হবে।


আর সবকিছুর পরও যদি মন খারাপ হয়ে যায় তখন কী করবেন? কারও কথায় মন খারাপ হয়ে গেলে সেই মুহূর্তেই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। না ভেবে তাকে কোনো পাল্টা উত্তর দেওয়ারও দরকার নেই। কেন বলেছেন কথাটি সেটি ভাবতে পারেন। আর একান্তই বুঝতে না পারলে সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করে নেন—কেন কথাটি বলেছে আপনাকে। কষ্ট পেয়ে থাকলে সেই ব্যক্তিকেও বুঝিয়ে বলতে পারেন।



মন যেহেতু আপনার খারাপ ভালোটাও তো আপনারই তাই না। এর উপর কি আবার কারো কোনো জোর আছে নাকি? তবে যাই বলেন ছেলেদের থেকে মেয়েদের মায়া বেশি। ভালোবাসাটাও বেশি। কেউ কাউকে ছাড়া চলতে পারবে না।


এ বিশ্বে যা কিছু চিরকল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী/ অর্ধেক তার নর। এটাই চিরসত্য।


বিবার্তা/শারমিন


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com