শিরোনাম
হাত পায়ের নখ সুস্থ আছে তো?
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:০০
হাত পায়ের নখ সুস্থ আছে তো?
রূপচর্চা
প্রিন্ট অ-অ+

নখ আসলে আমাদের দেহের এক ধরনের মৃতকোষ। এই মৃতকোষ কেরাটিন নামের এক প্রকার প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। নখের দিকে ভালো করে শেষ কবে তাকিয়েছেন? এর মধ্যে খেয়াল করে দেখেছেন নিজের নখ? হাত-পায়ের নখই তো শুধু, একভাবে না একভাবে তো থাকেই নাকি? এভাবে ভাবতে গেলে, আমাদের নাকের ছিদ্রও তো সামান্য। তবে সেটা না থাকলে জীবনটা বাঁচানো যেতো নাকি?।


তাই শরীরের বাকী সব অংশের সাথে মনোযোগ দিয়ে নখেরও যত্ন নেয়া উচিত। বিশেষ করে শীতের দিনে পা এবং নখ দুটোর অবস্থায়ই হয়ে পড়ে শোচনীয়। তার মধ্যে যদি আপনার থাকে নখ ভেঙ্গে যাওয়া বা রঙ পরিবর্তনের মতো সমস্যাগুলো হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। সাধারণত স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিন নখের কিছু যত্ন তো আমাদের নেওয়াই উচিত।



সাধারণত স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিন নখের কিছু যত্ন তো আমাদের নেওয়াই উচিত;


ভেঙ্গে যাওয়া নখ
আপনার নখটি কি মাত্রাতিরিক্ত ভঙ্গুর? জন্মগতভাবেই অনেকের নখ পাতলা এবং ভঙ্গুর হয়ে থাকে। তবে তার মানে এই নয় যে, এর কোনো প্রতিকার নেই। যদি আপনার নখ অনেক বেশি ভঙ্গুর হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে এর কারণ বোঝার চেষ্টা করুন। সম্ভাব্য কারণগুলো হতে পারে-


অতিরিক্ত পানি এবং সাবানের ব্যবহার, বংশগত সমস্যা, রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ, রোগব্যধি।


ভঙ্গুর নখের সমাধান
নখের ভঙ্গুরতা বেশ বিরক্তিকর তবে সচেতন থাকলে আর কিছু নিয়ম মেনে চললেই আপনার নখের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যেহেতু পানি বা রাসায়নিক পদার্থ নখের ভঙ্গুরতাকে বাড়িয়ে তোলে, তাই চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব এই দুটো ব্যাপারের হাত থেকে দূরে থাকতে। পানি বা রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করার সময় হাতে গ্লাভস পরুন। নখ সংক্রান্ত বাজে অভ্যাসগুলোকে ঝেটিয়ে বিদায় করে দিন।অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।সেই সাথে চেষ্টা করুন প্রচুর পানি পান করার এবং নখকে আর্দ্র রাখার। নখ আর্দ্র রাখতে ভেসিলিন বা তেল ব্যবহার করতে পারেন।



নখের রঙ বদলে যাওয়াও অনেক সময় হতে পারে আমাদের শারীরিক নানা সমস্যার প্রকাশ;


কেবল নখের ভঙ্গুরতা নয়, নখের রঙ বদলে যাওয়াও অনেক সময় হতে পারে আমাদের শারীরিক নানা সমস্যার প্রকাশ। শরীরের ভেতরে বাসা বাঁধা কোনো রোগ খুব সহজেই আক্রান্ত করে ফেলে আপনার নখটিকেও। দেখুন তো আপনার নখের রঙ বদলেছে কিনা!


নখের রং কেমন হওয়া উচিত?


সাধারণত, নখের রঙ হালকা গোলাপী হওয়াটাই শ্রেয়। এতে বোঝা যায় যে, আপনার নখ সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। আর সেই সাথে সুস্থ আছেন আপনিও। কিন্তু অনেকের নখের রঙ একটু আলাদা হয়ে থাকে। আর সেক্ষেত্রেই দেখা দেয় বিপত্তি।


ফ্যাকাশে রঙ


নখের ফ্যাকাশে রঙ মানেই আপনি অসুস্থ। আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত না থাকার প্রমাণ হচ্ছে ফ্যাকাশে নখ। সাধারণত রক্ত না থাকার কারণে হলেও ডায়াবেটিস বা ফুসফুসের কোনো সমস্যা থাকলে নখের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।



কালচে রঙ


অনেকের নখের ভেতরে রংটা একটু কালচে আকার ধারণ করে। এটা মোটেও ভালো কোনো ব্যাপার নয়। এর অর্থ আপনার নখের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। আপনার শরীরে সঠিকভাবে রক্ত চলাচল না করতে পারার চিহ্ন এটি। এছাড়াও ভিটামিনের অভাব ও ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবেও এমনটা হতে পারে।


হলদেটে নখ


নখে ছত্রাক আক্রমণ করলে নখের রঙ হলদে হয়ে যায়। যদি নখ অনেক বেশি পুরু হয়ে ওঠে আর হলুদ রং ধারণ করে, তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনার নখে ছত্রাক আক্রমণ করেছে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছেই যাওয়াটাই শ্রেয়।


নীলচে নখ


মাঝেমাঝে যদি দেখেন আপনার নখের রঙ নীল হয়ে গিয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে।


নখে সাদা রঙ


অনেকের নখের ভেতরে মাঝেমাঝেই সাদা রঙের ছোপ দেখা যায়। ঠাট্টা করে বলা হয়, এই ছাপ থাকা মানে তার হাতের রান্না অনেক ভালো! কিন্তু আসলেও কি তাই? একদম না। নখে এরকম সাদা ছোপ থাকার মানে হচ্ছে আপনার শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন নেই। সেক্ষেত্রে দেরী না করে আপনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।



নখে এরকম সাদা ছোপ থাকার মানে হচ্ছে আপনার শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন নেই;নখের রঙ নানারকম হতেই পারে। তবে সেগুলোর পেছনে থাকা কারণকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। যদি বেশি সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে ঝুঁকি না নিয়ে সোজা চলে যান চিকিৎসকের কাছে আর পরীক্ষা করে ফেলুন।


ঘরে বসেই নখের যত্ন


এতক্ষণ লেখাটি পড়ে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, নখ আমাদের শরীরের কত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আর তাই এর যত্নটাও অনেক বেশি গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ঘরে বসে নখের যত্ন কীভাবে নেবেন।


আমন্ড অয়েল ব্যবহার


আমন্ড অয়েল বা বাদামের তেল নখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই নখের উপরে প্রতিদিন খানিকটা আমন্ড অয়েল নিয়ে ম্যাসাজ করুন। তাতে করে নখ এবং নখের চারপাশ সুস্থ থাকবে। এছাড়া প্রতিদিন আমন্ড অয়েলের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে তারপর নখে তুলো দিয়ে ঘষে দেখতে পারেন। নখ মজবুত হয়ে উঠবে। নখের কোনার চামড়া উঠে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে সেটাও দূর হবে।



নখের মেনিকিউর-পেডিকিউর করান মাসে ১৫ দিন পর পর। শীতকালে নখের ভঙ্গুরতা বেড়ে যায়। তাই চেষ্টা করুন নখ যাতে শুষ্ক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার। নখের ময়েশ্চার নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন।


নখ বারবার ভেঙ্গে গেলে তাতে পেট্রোলিয়াম জেলী লাগান। তাতে কাজ না হলে রসুনের কোয়া দিয়ে ঘষে দেখতে পারেন, কাজে দেবে। নখের ভঙ্গুরতা কমে আসবে আর নখ পাবে সুস্বাস্থ্য।


শীতে নখ বেশ ময়লা হয়ে পড়ে। তাই এ সময় কুসুম গরম পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়ে আঙ্গুল ডুবিয়ে রাখুন। তারপর হালকা ঘষে ময়লা তুলে ফেলুন। তাতে করে নখ সুন্দর ও সুস্থ থাকবে।


সবার নখের সাথে সব আকৃতি যায় না। তাই আপনার নখে কোন আকৃতি মানাবে, কোনটা স্বাস্থ্যগতভাবে ক্ষতিকর হবে না সেসব মাথায় রেখে তারপরেই নখ কাটুন। নখ কাটার সময় ভালো মানের নেইল কাটার ব্যবহার করুন ।


আপনি বুঝতে না পারলেও প্রতি মাসে আমাদের এক ইঞ্চির দশ ভাগের এক ভাগ নখ বৃদ্ধি পায়। আর এই বৃদ্ধির দিক দিয়ে এগিয়ে থাকে হাতের আঙ্গুলের নখ। নখ হাতের হোক কিংবা পায়ের, খেয়াল রাখুন আর যত্ন নিন সঠিকভাবে। আপনার একটু সতর্কতাই হয়তো ভবিষ্যতের বড় কোনো বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে আপনাকে।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com