শিরোনাম
কিশোর বয়সের হতাশা কাটবে বাবাদের ভূমিকায়
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০১৭, ২০:০১
কিশোর বয়সের হতাশা কাটবে বাবাদের ভূমিকায়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শিশুর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক বৃদ্ধি হল শারীরিক বিকাশ। আর মানসিক বিকাশ হল আচার ব্যবহার, চিন্তা চেতনা,কথা বলা, অনুভূতি ও ভাবের আদান-প্রদানের ক্ষমতা অর্জন। একটি শিশুর জন্ম থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই এই তিনটি কাঠামো তৈরি হয়ে যায়।


বর্তমান সময়ে দিনে দিনে যৌথ পরিবারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং একক পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আবার বাবা-মা দুজনই চাকরি করার সুবাদে হয়তো সন্তানকে খুব বেশি সময় দিতে পারছেন না। এ কারণে পারিবারিক বন্ধন ও সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের মানসিক যোগাযোগও কমে যাচ্ছে। তাই শিশু-কিশোরের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ছাড়া শিশু তথা মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়।


বাবা-মায়ের প্রভাব রয়েছে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। নতুন এক গবেষণায় বলা হচ্ছে- যেসব পিতা-মাতা বিষণ্নতায় ভোগেন, তাদের সন্তানদের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে মায়েদের তুলনায় বাবার হতাশা বা বিষণ্নতার প্রভাব বেশি পড়ে।


কিশোরদের বিষণ্নতা বা হতাশা কাটানোর চিকিৎসায় তাদের পিতার ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন যুক্তরাজ্যের কয়েকজন গবেষক।


দু’টি একাডেমিক জার্নাল Early Childhood Research Quarterly ও Infant and Child Development এ প্রকাশিত গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সন্তানের আচরণগত বহিঃপ্রকাশ ও সামাজিক আচরণে বাবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


গবেষণায় উঠে এসেছে, বাবার অভিভাবকত্ব সম্পর্কিত মানসিক চাপ শিশুর জ্ঞানগত ও ভাষাগত উন্নয়নে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যদিও দুই-তিন বছর বয়সী শিশুদের বেলায় সবসময় মায়ের প্রভাবের কথা বিবেচনায় আনা হয়। কিন্তু এ বয়সে মেয়ে শিশুদের চেয়ে ছেলে শিশুদের ভাষা শিক্ষার ওপর বাবার প্রভাব অনেক বেশি থাকে।


ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন বা ইউসিএল যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের প্রায় ১৪ হাজার পরিবারকে নিয়ে এ গবেষণা চালিয়েছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, কিশোর বয়সের হতাশা বা বিষণ্নতা কাটানোর জন্য অভিভাবকদের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। কোনো সন্তানের বাবার মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ থাকলে তা নিয়ে তাদের চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।


ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ডা. গেমা লুইস এ গবেষণা কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়েছেন।


ডা. লুইস বলেছেন, ‘যেহেতু মায়েরাই সন্তানের সঙ্গে বেশি সময় কাটান তাই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসায় মায়েদের দোষারোপ করার একটা প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, এক্ষেত্রে বাবাদের ভূমিকা আরো বেশি সামনে আনা প্রয়োজন।’


তিনি আরো বলেন, ‘আপনি যদি কোনো সন্তানের পিতা হন, আর যদি আপনার মধ্যে কোনো বিষণ্নতা থাকে যার চিকিৎসা আপনি কখনো নেননি-তাহলে সেটার প্রভাব আপনার সন্তানের ওপর পড়তে পারে।’ বিষণ্নতায় আক্রান্ত পুরুষদের চিকিৎসকের কাছে যেতে করেন ডা. লুইস।


আয়ারল্যান্ডের ছয় হাজার পরিবার এবং যুক্তরাজ্যের আট হাজার পরিবারের ওপর এ গবেষণা কার্যক্রমটি চালানো হয়, মূলত কিছু প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে। এতে ৭, ৯ এবং ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু ও তাদের অভিভাবকেরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়। যেখানে নিজেদের অনুভূতির বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয় তারা।


শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের মানসিক উপসর্গ ও অনুভূতির বিষয়ে জেনে সে অনুযায়ী বিষণ্নতার ধরন ঠিক করে গবেষক দল। ওই গবেষণার ফলাফলে গবেষকেরা দেখতে পান, পিতার বিষণ্নতার সাথে শিশু-কিশোরের বিষণ্নতা বা হতাশার উপসর্গ ও ধরনের মধ্যে মিল আছে।


মনে রাখতে হবে যে, সন্তানের ব্যক্তিত্ব, মূল্যবোধ, আদর্শ গঠনে বাবা-মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। তাই সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে তাকে পর্যাপ্ত সময় দিন, তাকে আপনি কতটা ভালবাসেন এবং তাকে নিয়ে যে আপনি চিন্তা করেন এটা তাকে বুঝতে দিন। সন্তানের চলার পথে তার বন্ধু হোন।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com