শিরোনাম
জেনারেশন গ্যাপ বনাম মা-বাবা ও সন্তান
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৫২
জেনারেশন গ্যাপ বনাম মা-বাবা ও সন্তান
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সময়ের সাথে সাথে আমাদের বয়স বেড়ে যায়, বাড়ে জ্ঞানের পরিধি। পরিণত বয়সেই কেবল একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ বুঝতে পারে যে তার ছেলেবেলা পেরোনোর সময়কার বাবা-মায়ের কথাগুলোই কতটা না খাঁটি ছিল!


অথচ বাড়ন্ত বয়সের ছেলে-মেয়েরা কম বেশি সকলেই ভেবে থাকে যে, তাদের বাবা-মায়েরা টেকনোলজিক্যাল সীমানা থেকে বহু দূরে বা কাছে থাকলেও নিশ্চয়ই তাদের আমলের চিন্তা-ভাবনাগুলোর সাথে বর্তমান আমলের ধ্যান-ধারণার বিশাল তফাৎ। আসলেই কি তা ঘটে? নাকি এর পেছনে অন্য কারণও কাজ করে?


অনেকেরই অভিমত পোষণ করেন যে, টেকনোলজির দ্রুত উন্নয়নই জেনারেশন গ্যাপের অন্যতম একটি কারণ। প্রথমেই জেনে নেয়া যাক জেনারেশান গ্যাপ আসলে কী?


জেনারেশন গ্যাপ, সাম্প্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত কিন্তু কম গুরুত্ব পাওয়া একটি সামাজিক সমস্যা। এই জেনারেশন গ্যাপ মূলত দ্রুত গতির উন্নতির ফল মাত্র। বর্তমানে উন্নয়ন ধারা অতি দ্রুত গতির হওয়াতে বিশেষত প্রবীণ বা বয়োজ্যেষ্ঠরা এই ধারার সাথে তাল মিলাতে না পেরে পিছিয়ে পড়ার কারণেই সৃষ্টি হয় গ্যাপ। একেই আমরা জেনারেশান গ্যাপ বা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের পার্থক্যও বলতে পারি।


জেনারেশন গ্যাপ পিতামাতা ও সন্তানের মধ্যে দূরত্বের দেয়াল তৈরি করে। এই সমস্যাটি নিয়ে বাবা-মায়েরা সচেতন না হলে বিকটাকার ধারণ করতেই পারে। এমনও হতে পারে আপনার সেই ছোট্ট সোনামনি বড় হতে হতেই আপনার চোখের সামনেই বখে যাচ্ছে, অথচ আপনার একটু সতর্কতা তার পথ চলার রাস্তা আরও সুন্দর করে দিতে পারতো। তাই নয় কি?


কর্মজীবী বাবা-মায়েরা সময়ে-অসময়ে নিজেদের ইচ্ছা সন্তানের উপর চাপিয়ে দেয়ার ফলে দূরত্ব তৈরি হয়। আবার এমনও বাবা-মা আছেন যারা বন্ধুসুলভ না। সন্তানদের স্বাধীনতা দিতে চান না। সন্তানদের কোনো রকম মতামতে আগ্রহ দেখাতে চান না। সন্তানদের ভুল থেকে শিখে নেয়ার সুযোগ দেন না। সব ক্ষেত্রে কড়া শাসন আর নজরদারীতেই বিশ্বাসী।


বলতে পারেন যে, সন্তান কিছু চাওয়ার আগেই তা আপনি এনে দিচ্ছেন। অনেক টাকা খরচ করে সন্তানকে নামীদামী স্কুলে পড়াচ্ছেন, টিউটর দিচ্ছেন। জীবন যাপনের আয়োজনে আপনি কোনো দিক থেকেই কমতি রাখছেন না।



এতোকিছুর পরও প্রশ্ন আপনার মনে হতে পারে - কেন সৃষ্টি হবে এই জেনারেশান গ্যাপ? বাবা-মায়েরা সন্তানদের দৃষ্টিতে তাদের মতো করে কথা বলেন না বা শুনতে চান না। বাবা-মায়েরা কেবল সন্তানদের দোষ খুঁজে বের করতেই উঠে পড়ে লেগে থাকেন। বাবা-মায়েরা সর্বদা ব্যস্ত থাকেন তাদের নিজেদের সন্তানদের সঙ্গে অন্যদের তুলনা করার মাঝেই। এগুলো খুব সাধারণ সমস্যা। সুতরাং সমাধানও আপনারই হাতে।


দূরত্ব কমাবে স্পর্শ
সন্তান বড় হয়ে গেলে পিতা-মাতা থেকে দূরত্ব তৈরি হয়। প্রতিদিন অন্তত একবার আপনার সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিন বা বুকে জড়িয়ে ধরুন। আপনার মমতা মাখানো স্পর্শ দূরত্ব কমাতে দারূণভাবে আপনাকে সাহায্য করবে।


পছন্দের সমর্থন
সন্তানদের পছন্দ-অপছন্দ বাবা-মায়ের চেয়ে ভিন্ন হতেই পারে। সেটিকে নেতিবাচক ভঙ্গিতে না দেখে আপনার সন্তানকে বুঝতে চেষ্টা করুন। সে যদি ভুল হয়, তবে ধীরে ধীরে শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন। টিনএজ বয়সে সন্তানের ব্যতিক্রমধর্মী অদ্ভুত চিন্তাগুলোকে হেলা না করে মূল্যায়ন করুন। একইসঙ্গে তার পছন্দের যে জিনিসগুলো আপনার কাছে ভাল লাগে তা প্রকাশ করুন।


পরষ্পরের বন্ধন গভীর
নিজের ইচ্ছে কখনও সন্তানের উপর চাপিয়ে দেবেন না। অনুরূপভাবে সন্তানদেরও মাথায় রাখা খুব জরুরী যে পৃথিবীতে একমাত্র বাবা-মা ব্যতীত আর কেউ সন্তানদের ভালো বৈ খারাপ কখনই চাইতে পারেন না। সুতরাং সন্তানদের উচিত পিতা-মাতা কোনো কাজে নিষেধ করলে তা কেন করছে সেটা বুঝতে চেষ্টা করা এবং মানিয়ে চলা।


সময় সচেতনতা
আপনার কর্মব্যস্ততার মাঝেও কিছুটা সময় সন্তানের জন্য বরাদ্দ রাখুন। এই সময় দেয়াটাই আপনার সন্তানকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। সন্তানের সাথে গল্প করুন, খেলা করুন, বাজারে যান; তাতে সামাজিকতাও সে আপনার কাছ থেকেই শিখে নেবে। কর্মব্যস্ত দিনের পর সন্তানের সাথে আনন্দকর কিছু ভালোবাসার মুহূর্ত জেনারেশন গ্যাপ কমিয়ে আনতে পারে।


বিশ্বাস ও আস্থাবান
যেকোনো সম্পর্কের সবচেয়ে বড় ভিত্তি হলো বিশ্বাস৷ বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়৷ বিশ্বাসের ভিত্তিটা এমনভাবে গড়ে তুলুন যাতে আপনার সন্তানও তা বুঝতে পারে। সন্তানকে সময় দিন, পরষ্পর পরষ্পরের ভালবাসা অর্জন করুন।


আলোচনায় উৎসাহী
সবসময় প্রয়োজনীয় কথাই যে বলতে হবে তা কিন্তু নয়, মাঝে মাঝে অপ্রয়োজনীয় কথাও বলুন সন্তানের সঙ্গে। এতে দূরত্ব কমে সন্তানের মানসিক, শারীরিক অবস্থাও আপনার অগোচোরে থাকবে না। তবে বারবার একই রকম কথা থেকে বিরত থাকুন। পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনে।


বাস্তববাদী
সন্তান চাওয়ার সাথে সাথেই সব কিনে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। দেখুন সেটা সন্তানের প্রয়োজন আছে কিনা? প্রয়োজন বুঝে বিচার করুন।


ভুল থেকে শিক্ষা
বাবা-মায়েদের মাথায় রাখা উচিত আপনার সন্তানও দোষে-গুণে একজন মানুষ। সন্তান ভুল করলেই বকা না দিয়ে বলুন যে, ভুল করা মানে হেরে যাওয়া নয়, ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটা জরুরী।


আচরণ প্রধান হাতিয়ার
কঠিন পরিস্থিতিতেও আপনার আচরণের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। সন্তানকে অধিক শাসন করা থেকে বিরত থাকুন। একইভাবে সন্তানদেরও এই ব্যাপারে মনে রাখা জরুরী যে ছোঁড়া তীর আর মুখের কথা কখনও ফেরত আসে না।


বন্ধু নির্বাচনে দৃষ্টি


বাড়ন্ত বয়সে সন্তানকে বন্ধু বাছাইয়ে সহযোগিতা করুন।সরাসরি বাঁধা তৈরি না করে বরং কিভাবে সুস্থ বন্ধুত্ব মানুষকে সহযোগীতা করে, কী কী উপকার হয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। সন্তানরা কাদের সাথে মিশছে সে বিষয়েও সচেতন থাকুন।


বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সন্তানকে সাথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি সর্বদা তার পাশে আছেন তা বুঝতে সন্তানকে সাহায্য করুন। এতে করে বাবা-মা ও সন্তানের মাঝে কখনও দূরত্ব বাসা বাঁধতে পারবে না।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com