গুগল হাতড়ে ওষুধ খাওয়া কি ঠিক?
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ১০:৩১
গুগল হাতড়ে ওষুধ খাওয়া কি ঠিক?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শরীর খারাপ হল কি হল না, হাত চলে যায় ইন্টারনেটে। ফটাফট নিজের উপসর্গগুলি লিখে নেট দুনিয়ায় সমাধান হাতড়াই আমরা। চিকিৎসকের কাছে না গিয়েও যদি ওষুধটা বা পথ্যটা জেনে নেওয়া যায়, তা হলে ক্ষতি কী! সময় বাঁচে, আর পকেটও।


বিশ্ব জুড়েই এখন এই ট্রেন্ড চলছে। যখন যা কিছু হবে, সবই গুগলে গিয়ে টাইপ করে ফেলো। তার পর সার্চে ক্লিক করলেই যেন বিশ্বকোষ খুলে যাবে।


জীবনের প্রতিটা খুঁটিনাটি বিষয়ে উত্তর খোঁজার জন্য ইন্টারনেটেই ভরসা রাখছি আমরা। সে সম্পর্কের সমীকরণ বোঝা হোক বা রোগের চিকিৎসা— ষোলো আনা বিশ্বাস জিতে নিয়ে নিয়েছে নেট দুনিয়া।


আধুনিক প্রযুক্তির মায়াজালে জড়িয়ে বাস্তবটাই ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আর সেখানেই ঘনিয়ে আসছে বড় বিপদ।


সমস্যাটা ঠিক কোথায়? ধরুন, মাথাব্যথা হচ্ছে। কী ওষুধ খেলে ভাল বা কী ধরনের জেল লাগালে ব্যথা কমবে, গুগলে সার্চ করলেই নতুন এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) টুল একগাদা ওষুধের নাম দেখিয়ে দেবে।


তার মধ্যে কোনটা আপনার জন্য ভাল, তা না বুঝেই সেটা কিনে খেয়ে ফেললেন। পরে দেখা গেল, ওই ওষুধের জেরেই অন্য সমস্যা হচ্ছে আপনার।


ইদানীং এমন ঘটনা ঘটেছে যে, অনলাইনে ওষুধের নাম দেখে বা ডায়েট চার্ট অনুসরণ করে রোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছেন রোগী। চিকিৎসকের কাছে যখন যাচ্ছেন, তখন দেরি হয়ে যাচ্ছে অনেকটাই।


ওষুধপথ্য খোঁজার ব্যাপারেও কি অনলাইনের আধুনিক প্রযুক্তিকে বিশ্বাস করা যায়? কোনও জটিল রোগের চিকিৎসাও কি সঠিক ভাবে করে দিতে পারবে ডিজিটাল প্রযুক্তি? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সেটাই।


চলুন জেনে নিই, চিকিৎসক আর প্রযুক্তিবিদেরা কী মতামত দিচ্ছেন।


এক জন চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা করেন, কারণ রোগটার নাম জানা, রোগীই অচেনা। তাই চিকিৎসা কোন পথে হবে সেটাই আসল, এমনই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।


চিকিৎসকরা বলছেন, ‘‘নেট হাতড়ে নিজের চিকিৎসা নিজেই করার এই অভ্যাসই এখন একটা রোগ হয়ে গিয়েছে। এর নাম ‘ইডিয়ট সিনড্রোম’। কমবয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে এখন এই প্রবণতা বেশি। যদি নেট প্রযুক্তিই চিকিৎসা করতে পারত, তা হলে আর চিকিৎসকের দরকার পড়ত না। বই পড়ে বা গবেষণাপত্র দেখেই ওষুধ দিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু তা হয় না। রোগীকে দিনের পর দিন দেখে, তার উপসর্গ বুঝে, রোগের ধরন বুঝে তবেই এক জন চিকিৎসক সঠিক ভাবে চিকিৎসা করতে পারেন। প্রতিটা মানুষ একে অপরের থেকে আলাদা। তাই তাদের রোগের ধরন ও উপসর্গগুলিও আলাদা। চিকিৎসা পদ্ধতিও তাই এক গতে হবে না। সুবর্ণ গোস্বামীর পরামর্শ, ইন্টারনেট দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। রোগ হলে চিকিৎসকের কাছে যান। সঠিক ওষুধ খান।


মনের রোগ বুঝতেও আজকাল ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি বেড়েছে! সমীক্ষা বলছে, লকডাউনের সময়ে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সিরাই সবচেয়ে বেশি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নেট দুনিয়ায় সার্চ করেছিলেন।


এমনকি, দাম্পত্য কলহ, মানসিক চাপ থেকে বাঁচার উপায় জানতেও বিস্তর খোঁজাখুঁজি হয়েছে গুগলে। এখনও যে হচ্ছে না, তা নয়, বরং অনলাইনে মনের ব্যাধির ওষুধ খোঁজার হার এখন সবচেয়ে বেশি, এমনটাই বলছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।


শর্মিলার কথায়, অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা, মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার কিছু টোটকা গুগল দিতে পারবে ঠিকই, কিন্তু জটিল মনোরোগের চিকিৎসা করা কখনওই সম্ভব নয়। কারণ, একটা ওষুধের নানা রকম প্রয়োগ আছে। যে ওষুধ অবসাদের জন্য দেওয়া হয়, সেটি অন্য মানসিক রোগের জন্যও দেওয়া হতে পারে। কাজেই কোন ওষুধ কার জন্য ঠিক, সেটা একমাত্র চিকিৎসকই বুঝবেন। তা ছাড়া, চিকিৎসক যদি বোঝেন মনের অসুখ অনেক গভীরে, তখন রোগীর কাউন্সেলিং করানো হয়। রোগীর কথাবার্তা, আচার-আচরণ দেখে তবেই চিকিৎসা শুরু হয়। রোগীর মন ও মস্তিষ্কে কী চলছে, সেটা বোঝা খুব দরকার। প্রযুক্তি এই কাজটা করতে পারবে না। এর জন্য দীর্ঘ দিনের পড়াশোনা, অভ্যাস, বাস্তব থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতার দরকার হয়।


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে, কিন্তু চিকিৎসক হতে পারে না— এমনটাই মত চিকিৎসকদের। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে চিকিৎসার অনেক জটিল পদ্ধতি, রোগ নির্ণয়, ওষুধ আবিষ্কার ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারি।


এখন তো আধুনিক অস্ত্রোপচারে রোবোটিক্সের প্রয়োগ হচ্ছে। সেই যন্ত্র চালাচ্ছে এক জনই। তেমনই গুগলের এআই টুল কী উত্তর দেবে, তার প্রোগ্রামিং করছেন কোনও প্রযুক্তিবিদই। যন্ত্রের বুদ্ধি মানুষের বুদ্ধিকে ছাপিয়ে যায়নি এখনও।


টেলি মেডিসিন পরিষেবায় বহু দূর থেকেই রোগীকে দেখে ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও এক জন চিকিৎসকই থাকেন। কাজেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ভূমিকা ও দায়িত্ব সব সময়েই আগে থাকবে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com