শিরোনাম
সুস্থ থাকতে পিরিয়ডের সময় কী খাওয়া উচিত আর কী নয়
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২১, ১৭:১৩
সুস্থ থাকতে পিরিয়ডের সময় কী খাওয়া উচিত আর কী নয়
অনামিকা রায়
প্রিন্ট অ-অ+

প্রতিটা মেয়ের মধ্যেই থাকে অপরিসীম সহনশীলতা, আর লড়াকু মানসিকতা, কোনো ক্ষেত্রে তা প্রকাশ পায় আবার কখনো ছাই চাপা আগুন হয়ে থাকে। কিন্তু মেন্সট্রুয়াল সাইকেলের ওই চারটে দিন যেন সব মেয়েকেই কাবু করে দেয়। পেটে ব্যথা, মুড সুইং, বমিভাব-সহ বিভিন্ন উপসর্গ লেগেই থাকে এই চারদিনে। শুয়ে বসে থাকারও যে উপায় নেই।


তাই আজকের আলোচনার বিষয় কিভাবে সঠিক ডায়েট দ্বারা আমরা এই কয়েকদিনের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারি। প্রথমে দেখি এই সাইকেলের তিনটি ভাগ-


১) মেন্সট্রুআল বা ফলিকুলার ফেজ
২) ওভিউলাসন ফেজ
৩) লিউটিয়াল ফেজ


প্রথম ধাপ ফলিকুলার ফেজ এর সময় হলো পিরিয়ডের প্রথম তিন থেকে ছয় দিন।। এই সময় ক্লান্তিভাব, পেটে ব্যথা, মাসল ক্র্যাম্পিং ইত্যাদি দেখা যায় যার প্রধান কারণ হলো হরমোনের তারতম্য যেমন এই ফেজে প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেনের মাত্রা দেহে সবচেয়ে কমে যায় যা ক্লান্তিভাবের প্রধান কারণ। ডায়েটের মাধ্যমে আমরা এই উপসর্গ গুলিকে সম্পূর্ণ নিরাময় করতে না পারলেও কিছুটা কমাতেই পারি।


১. আয়রন:


আয়রনের অন্যতম কাজ হলো দেহে লোহিত কণিকা তৈরি ও রক্তবাহের মধ্যদিয়ে সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করা। এই সময় রক্তক্ষরণের জন্য দেহে আয়রনের মাত্রা কিছুটা হ্রাস পায়, আর আমাদের দেশের মহিলারা এমনিতেই বেশিরভাগ সময়ে আয়রনের ঘাটতি জনিত রক্তাল্পতার সমস্যায় ভুগতে থাকে। তাই এই সময় আয়রন যুক্ত খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, বিভিন্ন বিনস, লেনটিল , সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি প্রচুর পরিমানে ডায়েটে রাখতেই হবে। আর লোহার কড়াইতে রান্নার কথা তো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা সবসময়তেই বলে। বাকি দিন গুলো সম্ভব না হলেও এই কয়েকটা দিন লোহার কড়াইতে রান্নার চেষ্টা করুন, তফাৎটা বুঝতে পারবেন নিজেরাই।


২. ভিটামিন সি:


আয়রনের শোষণে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে ভিটামিন সি, এছাড়াও এটি আন্টি অক্সিড্যান্ট যা শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল নিষ্কাশনেও সাহায্য করে। তাই ডায়েটে থাকুক প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য যেমন সবুজ শাকসবজি, লেবু জাতীয় ফল, দিনে একটা করে আমলকি বা পেয়ারা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি।


৩.ক্যাফিন :


এই কয়েকটা দিন একদম দূরে থাক ক্যাফিন বা ট্যানিন যেমন চা ও কফি। এগুলোতে উপস্থিত পলিফেনল দেহে আয়রনের মাত্রা কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয়। এছাড়াও ক্যাফিন হল একপ্রকার ভ্যাসোকোনস্ট্রিক্টর যা পেটে মাসল ক্র্যাম্পিংয়ের অন্যতম কারণ।


৪. শাকসবজি ও ফল:


ডায়েটে থাকুক প্রচুর শাকসবজি ও ফল যা শুধু প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করবে তাই নয়, প্রচুর ফাইবারের উপস্থিতির জন্য কনস্টিপেসন ও দূর করবে।


৫. হালকা ব্যায়াম:


শুনতে অবাক লাগলেও এই সময় হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা কিন্তু আপনার মুডকে নিমেষে ঠিক করে দিতে পারে, বিভিন্ন স্ট্রেচিং, সূর্য নমস্কার, প্রাণায়াম সহ অল্প হাঁটা এন্ডডরফিন হরমোন নিঃস্বরণ করে যা মুড ভালো রাখতে বিশেষ উপযোগী।


৬. ড্রাই ফ্রুটস:


বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস যেমন খেঁজুর, কিসমিস ইত্যাদি যেমন আয়রন সরবরাহ করবে তেমনি দেহে এক্সট্রা ক্যালোরির চাহিদাও মেটাবে।তাই নির্ভাবনায় থাকুক ডায়েটে এই ড্রাই ফ্রুটস।


এরপর বলব দ্বিতীয় ধাপ অর্থ্যাৎ অভিউলাসন ফেজের কথা, যা পিরিয়ডের ১৪-১৭দিন চলে। এই সময় একদম রোজের ব্যালান্সড ডায়েটে থাকুন, সঙ্গে চলুক নিয়মিত শরীরচর্চা। তৃতীয় ধাপ চলে ১৭ থেকে ২৮ দিন, এই সময় দেহে পরিণত ডিম্বাণু নিঃসৃত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আবার শুরু হয় প্রি মেন্সট্রুআল সিম্পটমস, যেমন- মুড সুইং, ব্রণের সমস্যা, তলপেটে টান ধরা ইত্যাদি।


আরেকটি উপসর্গ ও দেখা যায় এই সময় তা হল কার্বোহাইড্রেট ক্রেভিং অর্থ্যাৎ দিনের বেশিরভাগ সময়ে কার্বোহাইড্রেট খাবার ইচ্ছে এর ফলে এই ফেজে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কিন্তু সবচেয়ে বেশি। তাই প্রচুর ফাইবার ও জল কিন্তু খেতেই হবে, এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সাথে শরীর আর্দ্র ও থাকবে। এই তিনটি ধাপেই উপরোক্ত খাবারগুলি ছাড়াও আরও যে কয়েকটি খাবার রাখতেই হবে সেগুলোও দেখে নিন-


১: আদা:


আদাতে রয়েছে এন্টি ইফেক্টিভ ধর্ম যা কিনা এই সময় দেহের প্রতিটা কোষ কে সজীব ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।


২. হলুদ:


হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন সাহায্য করে মাসল ক্র্যাম্পিং কমাতে, তাই উষ্ণ গরম দুধ বা হারবাল চা এর সাথে রোজ ডায়েটে থাকুক হলুদ।


৩. ডার্ক চকলেট:


এতে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন। আয়রনের উপকারিতার সাথে সাথেই ম্যাগনিয়াম কিন্তু প্রি মেন্সট্রুআল উপসর্গ গুলি কমাতে সাহায্য করে।


৪. হেলদি নাটস:


বিভিন্ন হেলদি নাটস যেমন আলমন্ড, আখরোট ইত্যাদি তে রয়েছে গুড ফ্যাট, প্রোটিন, ও ম্যাগনেসিয়াম। তাই উপকারিতাও কিন্তু অপরিসীম।


৫. রেড মিট ও ভাজাভুজি:


রেড মিটে থাকে প্রচুর প্রোস্টাগ্ল্যানডিন হরমোন যা কিনা মাসল ক্র্যাম্পিং এর জন্য দায়ী। এছাড়াও অল্প ভাজাভুজিই কিন্তু এই কয়েক দিনে এসিডিটি তৈরি করতে পারে, যতটা সম্ভব বর্জন করুন তাই।


৬. সিড সাইকেল:


বর্তমানে মেন্সট্রুআল সাইকেল নিয়ে যতটা গবেষণা চলছে তার অন্যতম বিষয় হলো সিড সাইকেলের উপকারিতা এই সময়। সাইকেলের বিভিন্ন ফেজে বিভিন্ন সিড প্রয়োগ করা হয় হরমোনের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে।


পিরিয়ডের প্রথম থেকে ওভিউলেশন পর্যন্ত প্রতিদিন :


১ টেবিল চামচ পাম্পকিন সিড + ১ টেবিল চামচ ফ্ল্যাক্স সিড-এই দুই সিডের মিশ্রণ দেহে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ায় এবং ফ্ল্যাক্স সিডে উপস্থিত লিগন্যান ইস্ট্রোজেন বাইন্ডার হিসাবেও কাজ করে। ফলে সামঞ্জস্য থাকে হরমোনের।


লিউটিয়াল ফেজ-


প্রতিদিন এক টেবিল চামচ সান ফ্লাওয়ার ও এক টেবিল চামচ সিসেম সিড-- এতে রয়েছে প্রচুর জিঙ্ক ও ভিটামিন ই, ও সেলেনিয়াম যা দেহে প্রোজেস্টেরণের মাত্রা বাড়িয়ে হরমোনের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখে, এবং মূলত সেলেনিয়াম লিভারকেও অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেনের থেকে ডিটক্স করে।


উপরোক্ত কয়েকটি সাধারণ বিষয় মাথায় রাখলেই কিন্তু মেন্সট্রুআল সাইকেলের এই কয়েকটা দিনেও প্রাণবন্ত থাকতে পারব আমরা।


বিবার্তা/এসএ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com