
আপনার ছোট্ট শিশুকে আরো বেশি পুষ্টিকর খাবার কীভাবে খাওয়াবেন, সেই কথা ভাবতে ভাবতে যদি আপনি ক্লান্ত হয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে প্রথমেই আপনাকে বলে দিই, এই সমস্যা আপনার একার নয়। প্রত্যেক অভিভাবক রোজ এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেন যে কীভাবে তাঁদের সন্তানের ছোট্ট পেটে এমন খাবার পৌঁছে দেবেন যা একাধারে তাজা এবং অবশ্যই পুষ্টিকর হয়। অবিরাম স্ন্যাক খাওয়া এবং অকারণ ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেয়ে পেট ভরানোর অভ্যাস একবার হয়ে গেলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।
তবে, শিশুরা এই বয়সে যেহেতু নতুন নতুন খাবারের স্বাদ পেতে শুরু করে, তাই তারা স্বভাবত যে খাবারটা বেশি পছন্দ করছে, সেই বিষয়ে খুঁতখুঁতে হতে পারে। এর ফলে তাদের মধ্যে বিশেষ কোনও পুষ্টির অভাব তৈরি হতে পারে যা হয়তো বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু এই ধরনের পুষ্টির অভাবের ফলে আপনার সন্তান খিটখিটে হয়ে উঠতে পারে I কম খিদে পাওয়া, মাথাব্যথা বা সব সময় ঘুম পাওয়া, পেশী এবং হাড়ের দুর্বলতা দেখা দেওয়া, প্রায়শই পেটে সংক্রমণ হওয়া বা আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যদি তারা উপযুক্ত পুষ্টি না পায়।
প্রত্যেক বাবা-মা নিজের সন্তানের জন্য সেরা জিনিসটা চান। এর ফলে তাঁরা সর্বদা এমন জিনিস খুঁজতে থাকেন যা শিশুকে সঠিক পুষ্টি প্রদান করবে এবং তার পাশাপাশি বাচ্চা সেটা ভালোবেসে খাবে। ছোট্ট শিশুদের পক্ষে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে এই বয়সে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, পাশাপাশি তাদের শারীরিক, মানসিক এবং ভাবাবেগের ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
ছোট বয়সে শিশুদের পুষ্টি কেন খুব গুরুত্বপূর্ণ?
একদম শিশুকালে, এমনকী প্রি-স্কুলে যাওয়ার বয়স অর্থাৎ ২-৫ বছর বয়স পর্যন্ত আপনার সন্তান কী খাচ্ছে, তার একটা বড়সড় প্রভাব পড়ে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের উপরে। তাদের জীবনের এই সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ এবং সম্পূর্ণ পুষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে তাদের মস্তিষ্ক, হাড়, দাঁত, এবং তাঁদের মনের বিকাশের জন্য। এই কারণেই এই সময়ে আয়রন, আয়োডিন, ভিটামিন এ (A) এবং অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের প্রাথমিক বছরগুলিতে প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের কোটা মেটাতে সহায়তা করার অন্যতম প্রধান উপায় হল বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো।
প্রাথমিক পর্যায়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শিশুদের ভালো খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, আপনার সন্তানের শরীরে ভিটামিন এ (A), আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি (D)-এর মতো জরুরি উপাদানের অভাব না হওয়া নিশ্চিত করতে পারে। এই বয়সেই এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন যা আপনার সন্তানকে দীর্ঘ দিন ফিট এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। শুধুমাত্র এই ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাবজনিত সমস্যার জন্য, লক্ষ লক্ষ শিশু বুদ্ধির বিকাশে দেরি, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শারিরীক বিকাশ ও বৃদ্ধির না হওয়ার মতো সমস্যার মুখোমুখি হয়।
কোনো কোনো জরুরি জিনিস প্রত্যেক শিশুর পাওয়া উচিত?
স্কুলে যাওয়ার আগে শিশুর শরীরে পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন যার মধ্যে থাকবে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেলস, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট। যে সমস্ত শিশুরা এই পাঁচ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি তাদের শৈশবে সঠিক পরিমাণে পায়, তাদের মানসিক বিকাশ উন্নত হয় এবং পরবর্তী কালে ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটাই কমে যায়। এক মুহূর্ত ভেবে দেখুন, আপনি কি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেন যে আপনার ছোট্ট সোনা এই পাঁচ ধরনের পুষ্টির প্রত্যেকটি উপযুক্ত পরিমাণে পাচ্ছে?
● খাদ্যশস্য যেমন চাল, গম, রাগি, রুটি
● তাজা ফল
● সবজি, এর মধ্যে সবুজ পাতা-যুক্তগুলি অন্তর্ভুক্ত
● প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার যেমন, ডিম, সামুদ্রিক খাবার, পোলট্রি, বীন্স এবং মাংস
● ডেয়ারি প্রোডাক্ট যেমন, দুধ, চিজ ও দই
বহু অভিভাবকের কাছেই তাঁদের বিভিন্ন কাজের মধ্যে প্রতিদিন বাচ্চার জন্য এত ধরনের খাবার সঠিক পরিমাণে খাওয়ানো কষ্টসাধ্য বিষয় হতে পারে। সমস্যা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে, যদি আপনার দুষ্টু পুঁচকেটা দুই মিনিট এক জায়গায় শান্ত হয়ে না বসে, খাওয়ার বদলে খেলতে পছন্দ করে, কিংবা সব্জি দেখলেই যদি খেতে না চায়।
বাচ্চা স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে না চাইলে কী করা উচিত?
বাচ্চা যদি পুষ্টিকর খাবার খেতে না চায়, তাহলেও আপনাকে এমন একটি উপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করতে হবে যাতে আপনার সন্তানের শরীরের দৈনিক পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়। এর জন্য কয়েকটি সহজ সমাধান হল:
- শিশুর সামনে নানা ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প রাখুন, ফলে সে যেটাই বেছে নিক না কেন, তাতে শরীরের উপকারই হবে।
- তাঁদের সামনে উপযুক্ত উদাহরণ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরুন এবং নিজে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে শুরু করুন। বাচ্চারা অনেক কিছু দেখে শেখে।
স্বাস্থ্যকর খাবারগুলির মজার মজার নামকরণ করুন, যেমন- ম্যাজিকাল পাওয়ার মটরশুঁটির স্যুপ, মুশি স্মুশি আলু বা টুটি ফ্রুটি মিল্কশেক। বাচ্চারা ভালো গল্প আর মজাদার নাম, খুবই পছন্দ করে।
- বাচ্চা একটু বড় হলে তাকে খুব সহজ কিন্তু স্বাস্থ্যকর কিছু খাবার বানাতে শেখান। বাচ্চারা শেফ সাজতে ভালোবাসে !
- জাঙ্ক ফুডের পরিবর্তে, শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক নিজের কাছে রাখুন, যাতে শিশুরা সেটাই পছন্দ করতে শুরু করে।
- দিনের সবচেয়ে জরুরি খাবার- ব্রেকফাস্টে অবশ্যই কিছু পুষ্টিকর Cereals রাখার চেষ্টা করুন। এর ফলে ছোট বাচ্চার ডায়েটে দৈনিক পুষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাবও পূরণ হবে।
বিবার্তা/এসএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]