পলিপ মানেই ক্যানসার নয়। তবে তা বিপজ্জনক হওয়ার আগেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
নাকের দু’টি গহ্বরে মাংসপিণ্ড বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা যে, শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ, ওই মাংসপিণ্ড বা পলিপ কেটে বাদ দিতে হবে। কিন্তু সার্জারি যে এই রোগের একমাত্র পথ, তা নয়। বরং আগেভাগে সচেতন হলে সার্জারির দরকারও পড়ে না। নাকের পলিপ বা নেজাল পলিপের দৃষ্টান্ত কম নয়। তবে শরীরের অন্য অংশেও পলিপ হতে পারে।
পলিপ কী?
শরীরের যে নালি বা গ্রন্থিগুলি টিউবের আকারবিশিষ্ট, তাদের মধ্যেই সাধারণত পলিপের জন্ম হয়। এটি এক ধরনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এই মাংসপিণ্ডের গায়ে মিউকাস মেমব্রেন, অসংখ্য রক্তনালি থাকে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের মতে, 'এগুলি দেখতে অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো বা আঙুরের ছাড়ানো খোসার মতো। হাফ ইঞ্চি মতো উচ্চতা। তবে যে কোনও পলিপের একটি কাণ্ড বা গোড়া থাকে। সেটা দেখলে বোঝা যায়, এর উৎস কোথায়।'
কোন কোন অঙ্গে পলিপ হতে পারে?
নাক:
নাকের দু’টি গহ্বরে পলিপ হওয়ার ঘটনা খুব চেনা। অনেক সময়ে পলিপ আকারে এত বড় হয়ে যায় যে, নাকের একটি গহ্বর প্রায় বন্ধ করে দেয়। সাইনোসাইটিসের নানা উপসর্গ যেমন, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বারবার জ্বর, সর্দি, শ্বাস নিতে না পারা, পলিপ হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
কোলন ও রেক্টাম:
নেজ়াল পলিপের মতো কোলনের পলিপও খুব বেশি দেখা যায়। নাকের পলিপ বাইরে থেকে দেখা গেলেও, কোলনের পলিপ বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। রেক্টাম বা পায়ুদ্বারেও এটি হতে পারে। তাই এই দু’টি ক্ষেত্রে রোগী অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে পারেন। আসলে পলিপের গায়ে যে রক্তনালি থাকে, সেগুলি ফেটে গিয়ে রক্ত পড়তে পারে, যা অনেক সময়ে মলের সঙ্গে নির্গত হয়। নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সময় ছাড়াও যোনি দিয়ে রক্তপাত হতে পারে, যার কারণে রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে পলিপ ধরা পড়তে পারে।
ইউটেরাস এবং সার্ভিক্স:
মহিলাদের জননাঙ্গ ইউটেরাসে পলিপ হতে পারে। একে বলা হয় ইউটেরাইন পলিপ। ইউটেরাসের নীচে সার্ভিক্সেও পলিপ হতে পারে। অনেক সময়ে পলিপ বড় হয়ে গেলে ভ্যাজাইনা বা যোনির বাইরে থেকেও দেখা যায়।
গল ব্লাডার:
পলিপ হতে পারে পিত্তথলিতেও। শরীরের যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি বটুয়ার মতো দেখতে অর্থাৎ কিছুটা খালি জায়গা থাকে, সেখানেই পলিপ হতে পারে।
চিকিৎসার প্রাথমিক শর্ত
পলিপ থাকা মানেই তা কেটে বাদ দিতে হবে, এমন নয়। তবে শরীরে তা অন্য সমস্যা তৈরি করলে চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে। কোলনের পলিপ অনেক সময়ে ক্যানসারে পরিণত হয়। সে সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। যে কোনও ধরনের পলিপে ক্যানসারের আশঙ্কা আছে কি না, তা চিকিৎসকেরা প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করেন।
নাকের পলিপের চিকিৎসা
নাকের পলিপ বড় হয়ে গিয়ে বাধা সৃষ্টি করলে তা বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। ইএনটি বিশেষজ্ঞর মতে, এই চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, নেজ়াল পলিপের মূল চিকিৎসা হয় লোকালাইজ়ড স্টেরয়েড দিয়ে। তার সঙ্গে কিছু ওরাল স্টেরয়েড। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পলিপের আকার বড় হলে স্টেরয়েড স্প্রে আসল জায়গায় পৌঁছতে পারে না। তখন রোগীকে সার্জারি করে পলিপ বাদ দিতে বলা হয়, যাতে পরবর্তী কালে স্টেরয়েড জায়গামতো পৌঁছতে পারে।
যাঁদের অ্যালার্জি, অ্যাজ়মা রয়েছে, তাঁদের পলিপ ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি। তাই পলিপ রোগীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।
পলিপ কেন হয়?
এর কারণ সম্পর্কে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত নন। তবে চিকিৎসকদের মতে, যাঁরা বেশি ধূমপান করেন, কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, দুশ্চিন্তা করেন, সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে কোলনের পলিপ হওয়ার দৃষ্টান্ত দেখা গিয়েছে। তবে এই ফ্যাক্টরগুলি থাকলেই যে পলিপ হবে, তা নয়। নাকের পলিপের ক্ষেত্রে সাধারণত সংক্রমণের যোগ নেই। তবে ফাঙ্গাল পলিপ বা অ্যানট্রোকোঅ্যানাল পলিপের কারণ সংক্রমণই।
পলিপ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং একবার হলে চিকিৎসকের কথামতো চলাই এই রোগের প্রধান চিকিৎসা।
বিবার্তা/এসএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]