শিরোনাম
অন্দর সাজাতে টেরাকোটা
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২০, ১৮:১৭
অন্দর সাজাতে টেরাকোটা
অনামিকা রায়
প্রিন্ট অ-অ+

একতাল মাটি দিয়ে তৈরি করা যায় কত কিছু। তার পর তা পুড়িয়ে নিলেই তৈরি টেরাকোটা।


লাতিন ‘টেরা’কথার অর্থ মাটি আর ‘কোটা’মানে পোড়ানো। আঠালো মাটির সঙ্গে খড়কুটো, তুষ মিশিয়ে কাদামাটি তৈরি করে তা থেকে তৈরি হয় নানাবিধ মূর্তি, সামগ্রী। তার পর রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি হয় বলে এর নাম টেরাকোটা। সুমেরীয়, মায়া, সিন্ধু সভ্যতার সময়ে টেরাকোটার নিদর্শন পাওয়া গেছে। মৌর্য ও গুপ্ত যুগেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়।


কী ভাবে তৈরি হয় টেরাকোটা?


পোরাস মাটি নেয়া হয় টেরাকোটার জন্য। হাতে চাপে মাটি দিয়ে নানা সামগ্রী তৈরি করা হয়। এর পরে রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি হয় টেরাকোটা। প্রায় ৬০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকে। আগে কড়া রোদে শুকিয়ে, তার পর আগুনে পোড়া ছাইয়ের গাদায় বেক করা হত বলে একে বেকড আর্থও বলে। মাটির মধ্যে যে লোহা থাকে, তা আগুনে পুড়ে লালচে খয়েরি বর্ণ ধারণ করে। তাই মাটির গঠনের উপরে নির্ভর করে এর রং পাল্টে যায় কমলা, খয়েরি, লালে।


টেরাকোটার থালা, বাটি, গ্লাসের মতোই তৈরি হয় প্রেশার কুকার, হাঁড়ি ইত্যাদি রন্ধনসামগ্রী। এর দু’টি ধরন আছে। গ্লেজ়ড আর নন-গ্লেজ়ড। গ্লেজ়ড হলে তা বেশ উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়, স্থায়ীও হয় বেশি দিন।


অন্দরসজ্জায়:


বাহারি নকশা করা পোড়ামাটির ফলকে সেজে উঠুক ঘরের দেয়াল। আছে ফুল-লতা-পাতা, আছে গ্রামীণ জীবনের ছবি আঁকা। এ ছাড়া পাওয়া যায় বিমূর্ত নানা নকশার টেরাকোটাও। ছোট ছোট বিভিন্ন মাপের টেরাকোটা প্রস্তুত অবস্থায় পাওয়া যায় মৃৎশিল্পের দোকানে। এ ছাড়া এমন মৃৎশিল্পের দোকান বা শিল্পীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে নিজের পছন্দমতো বানিয়ে নিতে পারেন মনের মতো টেরাকোটাও। সে ক্ষেত্রে খরচ করতে হবে প্রতি বর্গফুট হিসাবে। বসার ঘরের দেয়ালের কোনো একটা পাশে এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত লাগিয়ে নিতে পারেন টানা একটা টেরাকোটার কাজ। আবার শোবার ঘরের পেছনের দেয়ালেও রাখতে পারেন টেরাকোটা।


শোপিস


এখন সুন্দর সুন্দর মাটির শোপিস পাওয়া যায়। টেপা পুতুল, ছোট হাতি, ঘোড়া থেকে শুরু করে লোক-মোটিফের পোড়ামাটির নানা কাজ কিনতে পাওয়া যায় দোকানগুলোতে। কেউ চাইলেই এগুলো দিয়ে সাজাতে পারেন আপনার শোকেস। অথবা বসার ঘরের কোনো একটি কোনায় ছোট একটি নিচু টেবিল রেখে সাজাতে পারেন মাটির শোপিসে। এগুলোর দাম ৪০-৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকার মধ্যেই।


মাটির ব্যাংক


শুধু শখের বশে খুচরা পয়সা বা টাকা জমানোর জন্যই নয়, মাটির ব্যাংক দিয়ে সাজাতে পারেন ঘরও। বিভিন্ন ফল, ব্যাঙ, হাতি, ঘোড়াসহ নানা আকৃতির ব্যাংক পাওয়া যায় মাটির। এগুলোতেও ঘরের শোভা বাড়াতে পারেন আপনি। দাম পড়বে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।


ঘরোয়া নানান আড্ডায়-অনুষ্ঠানে জ্বালিয়ে দিন মাটির কয়েকটা ছোট্ট প্রদীপ। এ ছাড়া ব্যবহার করতে পারেন মাটির মোমদানিও।


দেয়াল সাজানো


অনেকেই ঘরে মাটির জিনিস রাখতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে বাড়িতে ছোট ছেলেমেয়ে থাকার কথা বলেন। তাঁরা চাইলেই কিন্তু দেয়ালে টাঙানোর উপযোগী মাটির নানান জিনিস কিনে সাজাতে পারেন ঘরের দেয়াল। পর পর তিনটি তিন সাইজের মাটির মাছ দিয়েই সাজানো যেতে পারে দেয়ালের একটা দিক। তার আগে শিশুর ছবি আঁকার প্যাস্টেল রঙে কয়টা ঢেউ এঁকে নিতে পারেন দেয়ালে। আর মাছের ওপরেই উড়িয়ে দিতে পারেন মাটির রঙিন প্রজাপতি। যেকোনো ঘরেই এগুলো ভালো লাগবে। দাম পড়বে ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।


মাটির ঘণ্টি


বসার ঘরের সিলিংয়ে কিংবা প্যাসেজের দরজায় ঝুলিয়ে দিতে পারেন টুংটাং মাটির ঘণ্টি। দুই বা তিনটি ঘণ্টি অথবা অনেকগুলো ঘণ্টি দিয়ে একটি সুন্দর চাইমও। ঘণ্টিগুলো সুতা বা ফিতে দিয়ে বেঁধে নিজের মনের মতো করে যেমন সাজাতে পারেন, তেমনি কিনে নিতে পারেন নানান ডিজাইনে বানানো এমন চাইমও। মিষ্টি একটা টুংটাং আওয়াজের এই মাটির ঘণ্টির দাম ২০ টাকা থেকে ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে।


বড় চাড়ি ছোট বাটি


মাটির পাত্রে স্বচ্ছ টলটলে পানি রেখে দিয়ে ঘর ঠান্ডা করার পদ্ধতি অনেক পুরোনো হলেও এখন তা আবার ফিরে এসেছে নগর জীবনেও। গরমের দিনে একটা বড় চাড়িতে পানি দিয়ে তা ঘরের মাঝখানে রেখে দিতে পারেন। আর তাতে ছোট ছোট ফুল ও ফুলের পাপড়ি ছেড়ে দিতে পারেন। ভাসাতে পারেন দু-একটা কাগজের নৌকাও। সন্ধ্যায় কয়েকটি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে দিলে ঘরের পরিবেশই পাল্টে যাবে।


আর ছোট ছোট মাটির বাটি অনেক কাজেই লাগে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বাটিতে রাখতে পারেন টুকিটাকি নানা জিনিস। বিভিন্ন আকৃতির একদম সাধারণ বা কিছুটা নকশা করা মাটির বাটির দাম ২০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।


ফুলের টব


টব তো মাটিরই হওয়া দরকার। এখন অনেক আকৃতির আর নানা নকশার টব পাওয়া যায়। আছে গোল ও চৌকো আকৃতির মাটির টবও। ওপরে-নিচে কিংবা সারা গা জুড়ে নকশা করা মাটির টব পাওয়া যায় বিভিন্ন রঙের। এসব টবে শুধু ফুল কিংবা পাতা বাহারই নয়, বারান্দাটা একটু বড় হলে লাগিয়ে দিতে পারেন কোনো একটা ফলের গাছও। ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন আপনার মনের মতো টব।


আয়না


দিনের মধ্যে সবারই একবার হলেও আয়নার সামনে যেতেই হয়। আর আয়নাতেও রাখতে পারেন মাটির কারুকাজের ছোঁয়া। গোল, চার কোনা—নানা আকৃতির আয়না পাওয়া যায় মাটির ফ্রেমে। খাবার ঘরের হাত ধোয়ার স্থানে কিংবা প্যাসেজেও রেখে দিতে পারেন একটা ছোট মাটির ফ্রেমের আয়না। এ ধরনের আয়নার দাম ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।


মাটির থালা-বাসন


পুরো ঘরদোরই যদি মাটির জিনিসে সাজিয়ে ফেলেন এই গরমের দিনে, তাহলে আবার খাবার টেবিলটাই বা বাদ যাবে কেন! আপনি চাইলেই বাসায় রেখে দিতে পারেন একটা মাটির ডিনার সেট। বিশেষ দিনে অতিথি আপ্যায়নে ব্যবহার করতে পারেন এই মাটির থালা-বাসন-গ্লাস বা কাপ-পিরিচ।


মাটির জিনিস ব্যবহারে সতর্কতা ও যত্ন


মাটির জিনিস ব্যবহারে একটু তো সতর্ক থাকতেই হবে। মাটির চাড়ি বা ফুলদানিতে পানি রাখলে তা অবশ্যই নিয়মিত পালটাতে হবে। কারণ পানি নোংরা হলে তাতে মশা হতে পারে।


আবার চাইলে ফুলদানির ভেতরে একটা পলিথিন দিয়ে তাতে পানি দিতে পারেন। এতে পাত্রে সামান্য পানি চুঁইয়ে পড়ার সুযোগ থাকলে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। আর মাটির জিনিসে ধুলোবালি একটু বেশিই চোখে পড়ে। তাই নিয়মিত শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে রাখতে হবে মাটির জিনিস। এসবে ভেজা কাপড় ব্যবহার না করাই ভালো।


যেখানে পাবেন


মাটির জিনিস এখন অনেক জায়গাতেই পাওয়া যায়। শিশু একাডেমির সামনে দোয়েল চত্বর, নিউ মার্কেট, ঢাকা কলেজের সামনে, ধানমন্ডি ৬ নম্বর সড়কের ফুটপাত, কলাবাগান, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটেও পাওয়া যায় মাটির জিনিস। তবে কিনতে হবে একটু দরদাম করে।


সবশেষে বলে রাখতে চাই একটা ছোট্ট টিপস। নানান ঘরোয়া আড্ডায়-অনুষ্ঠানে জ্বালিয়ে দিন মাটির কয়েকটি ছোট্ট প্রদীপ। এ ছাড়া ব্যবহার করতে পারেন মাটির মোমদানিও। আর শুধু নিজের ঘরের জন্যই নয় চাইলে বন্ধুকেও উপহার দিতে পারেন পোড়ামাটির এসব খাঁটি জিনিস।


বিবার্তা/অনামিকা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com