প্রকৃতি কিন্তু জানান দিচ্ছে শীতের বার্তার। বেশ শুষ্কতার ছোঁয়া লেগেছে চারিপাশে। নিঃসন্দেহে এই আবহাওয়াটা বেশ উপভোগ্য। তবে শীতে একটা বড় সমস্যা থেকেই যায়। এ সময়ে ত্বক বড় বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। স্নানের পর হাত-পা কেমন শুষ্ক লাগে, ঠোঁট শুকিয়ে আসে। এগুলোই জানান দিচ্ছে ত্বকে প্রয়োজন বিশেষ নজর। নিয়মিত যত্ন। নিয়মিত যত্ন না নিলে একেবারে নির্জীব, বয়স্ক লাগে দেখতে। তবে সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললেই শীতেও আপনার ত্বক থাকবে উজ্জ্বল।

অনেকের ক্ষেত্রে শীতে স্নান মানেই গরম জলে স্নান। কিন্তু নিয়মিত সেটা করা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তবে ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করা ভাল। এতে ত্বকের স্বাভাবিক তেলের মাত্রা বজায় থাকে।

বাড়ির বয়ষ্কদের এবং বাচ্চাদের এখনো স্নানের আগে তেল মাখিয়ে নেয়া হয় ভালো করে। এটা ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে বেশ উপকারী। তাই স্নানের আগে ভাল করে তেল মেখে নেয়া যায়। যাদের তেল মাখতে অসুবিধা তারা অলিভ অয়েল মাখতে পারেন। সরষের তেল বা নারকেল তেলও চলতে পারে। তেল মেখে মিনিট দশেক অপেক্ষা করে স্নান করে নিন।

অনেকেই নিয়মিত স্নান করতে চায় না। সেক্ষেত্রে ঈষদুষ্ণ জলে তোয়ালে ভিজিয়ে ভাল করে স্পাঞ্জ করে নিতে পারেন।

স্নানের পর অনেকেই তেল মাখেন। যাদের এ ব্যাপারে অনিহা তাদের জন্য ময়শ্চারাইজ়ার বাধ্যতামূলক। স্নানের পরে ভাল করে ময়শ্চারাইজ়ার মেখে নিতে হবে।

গরমকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেও, অনেকেই শীতকালে সেটা মাখার প্রয়োজন মনে করেন না। কিন্তু শীতকালে সূর্যের তেজ অনেক বেশি থাকে। তাই সানস্ক্রিন মেখে তবেই রোদে বার হওয়া ভাল।

শীতে প্রকৃতিও বড় বেশি রুক্ষ। বাতাসে আর্দ্রতা একেবারেই কমে যায়। ফলে ধুলো ওড়ে। ত্বক ময়লা হয় বেশি। ডিপ ক্লেনজ়ার দিয়ে দিনে দু’বার ত্বক পরিষ্কার করা দরকার।

স্কুল-কলেজ-অফিসের চাপে ত্বকের যত্ন নেওয়ার কথা মনেই থাকে না। বাড়ি ফিরে ভাল করে মুখ পরিষ্কার করে গোলাপজল দিয়ে ধুয়ে নিন। এ বার ভাল কোনও ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নিন। ত্বকও সারা দিনের ক্লান্তি কাটিয়ে আবার উজ্জ্বলতা ফিরে পাবে।

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে হাত-পা ভাল করে পরিষ্কার করে ময়শ্চারাইজ়ার লাগান।

শীতকালে জল খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এতে শরীর ড্রাই হয়ে যায়। ত্বকে এর প্রভাব পড়ে খুব বেশি। শীতকালেও বেশি করে জল খেতে হবে। সঙ্গে মৌসুমি ফল খান।

শীতকালে মাস্ক লাগালে ত্বক থাকে টানটান, মসৃণ ও নরম। অলিভ অয়েল, কলা, দই ও এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে বাড়িতেই মাস্ক তৈরি করে নিতে পারেন।

শীতের সময়ে ত্বকে মৃত কোষের সংখ্যা বাড়ে। সে জন্য নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন করাও দরকার। মুসুর ডাল বাটা বা বেসন দিয়ে স্ক্রাব করতে পারেন।

আপনার ত্বক তৈলাক্ত মানে এই নয় যে, শীতের দিনেও ত্বক তেলতেলে থাকবে। ঠিকমতো যত্ন না নিলে তৈলাক্ত ত্বকও রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এ জন্য মুখে ব্রণ বা কালো ভাব দেখা দিতে পারে। তাই শীতেও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য দরকার বাড়তি যত্ন। ঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করা প্রয়োজন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য। জেল বেসড সানস্ক্রিন নয়, ওয়াটার বেসড সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। ময়শ্চারাইজ়ারও ওয়াটার বেসড হতে হবে। এ ধরনের ত্বকে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইট হেডসের সমস্যা থাকে। শীত কালে যা প্রকট হয়। তাই এ সময়ে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

শীতকালে ঠোঁট ফেটে যাওয়াটা আরও একটা বড় সমস্যা। ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাতে পারেন। গ্লসি লিপস্টিক লাগালেও ঠোঁট নরম থাকে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে লিপবামও ব্যবহার করা যায়।

শীতের ছাপ দেখা যায় ত্বকেও। তাই সময় থাকতেই সচেতন হলে এড়ানো যায় ত্বকের শীতকালীন সমস্যা। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ত্বককে সময় দিন। ত্বকের উপযোগী প্রসাধনী ব্যবহার করুন ও ঠিকঠাক পরিচর্যা করুন।

বিবার্তা/অনামিকা/জাই