অফিসে কিংবা বাড়ি ফিরেও কম্পিউটারের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকেন। তারপর হাতের মুঠোয় ফোনটার দিকে চোখ তো রয়েছেই। এভাবেই ধীরে ধীরে আপনার চোখের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। দুর্বল হয়ে পড়ছে দৃষ্টিশক্তি।
আমাদের চোখের গঠন এতটাই জটিল যে, সেটা মাঝে মাঝে কল্পনাকে হার মানায়। চোখের কার্যপদ্ধতি অনেকটা ক্যামেরার পদ্ধতির মতোই। চোখের পাতা কাজ করে ক্যামেরার শাটারের মতো, চোখের ভেতরে আছে স্থিতিস্থাপক লেন্স যা দর্শনীয় বস্তুকে ফোকাস করে এবং তারপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে একসময় তা আমরা দেখতে পাই। এই প্রক্রিয়াকরণ চলে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই।
কয়েকটা সহজ নিয়ম মেনে চললে, চোখকে বহুদিন ভালো রাখা সম্ভব।
চোখের যত্নে করণীয়:
যারা ডেস্ক জব করেন বা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার এর কাজ যাদের করতে হয়, তাদের কম দূরত্বে বেশিক্ষণ ধরে ফোকাস বজায় রাখতে হয়, তাই দূরের দৃষ্টি খর্ব হয়ে যায়। ফলে মায়োপিয়া হবার চান্স থাকে।
বই পড়ার অভ্যেস থাকলে চোখের সাথে ৩০° কোন মেন্টেন করে পড়ুন ও বেশি টানা পড়বেন না। শুয়েশুয়ে বই পড়া ঠিক না। টিভি দেখুন মিনিমাম ১০ফুট দূরত্বে।
তাই টেবিলে বসে কাজ করার সময় ৩০মিনিট ছাড়া ছাড়া ব্রেক নিন ও দূরের জিনিস দেখুন। সবুজ গাছপালা দেখুন তাতে চোখ আরাম পাবে।
ল্যাপটপের মনিটর হোক বা ফোনের স্ক্রিন বা টিভির এলইডি ডিসপ্লে সবথেকেই ক্ষতিকর ব্লু রে বেরোয় যা আমাদের চোখের পিউপিলের বারোটা তো বাজায় সাথে অনিদ্রা ও মনসংযোগহীনতা ডেকে আনে।
তাই ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন নতুবা চোখ হয়ে যাবে শুস্ক। মিনিটে কমপক্ষে ১৫বার চোখের পলক ফেলা জরুরি।
পারলে গ্লেয়ার ফ্রি স্ক্রিন লাগান মনিটরে। তাতে ব্লু লাইট ফিল্টার হয়ে যাবে।
আমাদের অনেকের মধ্যেই অভ্যাস আছে ঘর অন্ধকার করে টিভি দেখার, তাতে নাকি আনন্দ ও মজা বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু আখেরে তা চোখের রড কোষের উপর মারাত্মক প্রেশার দেয়।
এর ফলে চোখের পেশীর উপর স্ট্রেন পড়ে ও চোখের রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চোখের ভিতরের আকার বিগড়ে যেতে পারে। তাই কম আলোতে কাজ করার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা খুবই কার্যকরী। আমলকী, হরতকি এবং বহেরা একটা ব্লেন্ডারে নিয়ে চূর্ণ করে ফেলুন। সকালে খালি পেটে পানির সঙ্গে মিশিয়ে ত্রিফলা চূর্ণ খেতে পারেন।
এটি চোখের বর্ণ পৃথক করার ক্ষমতা ও চোখের ভিতরের সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলোকে সুরক্ষিত করে ও চোখের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
চোখ ভালো রাখতে অতিরিক্ত মাছ মাংস ভক্ষণ প্রধান বাধক হয়ে দাঁড়ায়। সঙ্গে সবুজে অরুচি ও একটা বড় কারণ।
কিন্তু শাকসবজির সঙ্গে চোখের বোঝাপড়া খুবই নিপুণ। তাই চোখ বুজে গাজর, টমেটো, ব্রকোলি, বিন্স, পেপার, ফলমূল ও ড্রাই ফ্রুটস খান। সব ভিটামিন এর উৎস নিহিত রয়েছে এর মধ্যে।
চোখের সংবেদনশীলতা বাড়াতে ও শিথিলতা কমাতে সকালের সূর্যালোকের সমতুল্য কিছু হয় না।
তাই সকালে হাটতে বের হোন ও চোখ জুড়িয়ে সবকিছু আলোয় দেখুন। এতে আপনার স্বাস্থ্য ও ভালো থাকবে।
চোখে টান অনুভব করলে দুটি হাতের তালু ঘষে গরম করে ৩০ সেকেন্ড মতো চোখের পাতা বন্ধ করে তার উপর চেপে ধরুন। এটি একটি ইনস্ট্যান্ট টোটকা।
এটি চোখের জন্য কার্যকর ও নিরাপদ। চোখের স্পর্শকাতরতা কমবে ও সক্রিয়তা বাড়বে।
মাথা স্থির রেখে ক্লকওয়াইজ চোখের মণি ১০বার ও এন্টি ক্লকওয়াইজ ১০বার ঘোরান। এটি করলে চোখের লাল ভাব ও ভার হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।
চোখ বন্ধ করে চোখের মণি উপর থেকে নীচে ও নীচ থেকে উপরে তুলুন। এইভাবে ৫-১০বার করুন।
চোখের সামনে একটি কলম বা ফুল ধরে এগিয়ে আনুন যতক্ষণ না সেটার উপর চোখ তার ফোকাস হারাচ্ছে এবং সেটা ঘোলাটে দেখছেন। এরপর আস্তে আস্তে সেটা চোখের থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে সেটার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। এইভাবে কয়েক বার করতে থাকুন।
ডায়বেটিস রোগীদের অবশ্যই চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।
বিবার্তা/এসএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]