প্রতিদিন কমবেশি সবাই বাহিরে যাই আর যারা চাকুরী করি তাদের তো রোজ দিনই পরিপাটি পোশাক পড়ে বাহিরে যেতে হয়। সে নারী কিংবা পুরুষই হোক প্রত্যেককেই পোশাকের ব্যাপারে সচেতন হতে হয়। অনেকেই ফিটফাট থাকতে পছন্দ করেন। এর জন্য জামাকাপড় ইস্ত্রি ছাড়া পড়েনই না। তারা মনে করেন, পোশাক-আশাক ইস্ত্রি করা না হলে সৌন্দর্য্য তেমন একটা ফুটে উঠে না। অবশ্য অনেকেই অফিস-আদালত কিংবা অনুষ্ঠানাদিতে ইস্ত্রি করা কাপড় ছাড়া বেরই হন না।
পোশাক পরিপাটি বলতে দামি নামী পোশাক নয় কিন্তু যেমন ধরন আপনি যে পোশাকটা ক্যারি করছেন সেটা হালকা রঙের এবং অবশ্যই ইস্ত্রি করা হয়ে হবে তবে যায়গা ভেদে আপনি রঙের ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন কিন্তু যেখানেই যান না কেনো আপনার পোশাক অবশ্যই ইস্ত্রি করে পরতে হবে নাহলে আপনার পোশাক পরিপাটি মনে হবে না। অনেক সময় আমরা নিজেরাই কাপড় বাসায় ইস্ত্রি করি কেননা লন্ড্রি দেয়ার সময় বা আনার সময় থাকে না।
এ ক্ষেত্রে নিজের হাতেই তুলে নিতে হয় ইস্ত্রি আবার সময় নেই বলে বাড়ির অন্যকে নিতে হয় এ দায়িত্ব। এখানেই কাপড় পুড়িয়ে ফেলার ভয়টা কাজ করে। অনেকেই জানেন না কোন কাপড় কত তাপমাত্রায় ইস্ত্রি করতে হয়। ফলে এই না জানার কারণে পছন্দের পোশাকটি যায় নষ্ট হয়ে।
কিন্তু আপনি কি জানেন? কাপড় ইস্ত্রি করার বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে। আর এসব নিয়ম মেনে চললে কাপড়ের মান দীর্ঘদিন অটুট থাকে। আর আজ আমরা আপনাদের ইস্ত্রি ব্যাপারেই কিছু নিয়মের কথা জানিয়ে দিবো আশা করি তা আপনাদের কাজে আসবে।
চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ইস্ত্রি করার সঠিক কিছু নিয়ম:
(১) পোশাক টেবিলে ইস্ত্রি করতে পারেন। টেবিল না থাকলে মেঝেতে কাঁথা বিছিয়ে তার উপর সুতি মোটা কাপড় বিছিয়ে ইস্ত্রি করুন।
(২) কাপড় ইস্ত্রি করার আগে খেয়াল করুন সুতি, সিল্ক, জর্জেট, লিনেন, অর্থাৎ কোন ধরনের কাপড় ইস্ত্রি করছেন। কাপড়ের ধরন বুঝে ইস্ত্রির তাপমাত্রা নির্ধারণ করুন। সাধারণত ইস্ত্রির গায়েই কাপড়ের ধরন অনুযায়ী কত তাপমাত্রা প্রয়োজন তা লেখা থাকে।
(৩) অ্যারারুট কিংবা মাড় দেয়া কাপড় পানি ছিটিয়ে ইস্ত্রি করুন। তা না হলে কাপড় পুড়ে অথবা ফেঁসে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
(৪) যাদের বডি স্প্রে বা পারফিউম সরাসরি গায়ে ব্যবহার করলে এলার্জি কিংবা অন্যান্য সমস্যা হয়, তারা কাপড় আয়রন করার সময় কাপড়ের উপর একটু পারফিউম ছিটিয়ে নিয়ে আয়রন করুন। এতে ঐ গন্ধ অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে এবং গায়ে সরাসরি পারফিউম ব্যবহারের ঝামেলা থেকেও রক্ষা পাবেন।
(৫) মসৃণ চকচকে সার্টিন বা ক্র্যাপজাতীয় কাপড় সব সময় আরেকটি হাল্কা ভেজা সুতি কাপড়ের ভাঁজের মধ্যে রেখে তারপর ইস্ত্রি করুন।
(৬) ব্লক, হ্যান্ডপেইন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট করা কাপড় উল্টো দিক থেকে ইস্ত্রি করুন। তাহলে কাপড়ের রঙ নষ্ট হবে না।
(৭) সুতি কাপড় খুব গরম ইস্ত্রি দিয়ে ইস্ত্রি করবেন না,এতে কাপড়ের রং জ্বলে যায়। সব সময় উল্টো দিকে আয়রন করুন এবং তুলে রাখার আগে আয়রন করার সময় যদি পানি ব্যবহার করে থাকেন, তবে তা বাতাসে শুকিয়ে নিন।
(৮) ব্লাউজ বা শার্ট ইস্ত্রি করার সময় প্রথমে হাতা ও কলার প্রথমে ইস্ত্রি করুন তারপর বাকিটুকু ইস্ত্রি করুন।
(৮) কুশন উল্টো করে ইস্ত্রি করুন। টেবিল ম্যাটে মনোগ্রাম থাকলে উল্টো দিক থেকে ইস্ত্রি করুন।
এবার জেনে নিন কোন ধরনের কাপড় কত তাপমাত্রায় ইস্ত্রি করবেন:
সুতির কাপড়
ইস্ত্রি না করলে সুতির জামাকাপড় পরাই যায় না। সুন্দরভাবে ইস্ত্রি করতে চাইলে তাপমাত্রা রাখুন ৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তারপর সমানভাবে ইস্ত্রি করতে থাকুন।
পলিয়েস্টার কাপড়
ইস্ত্রির তাপমাত্রা ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে পলিয়েস্টার কাপড়ের পোশাক। তাই তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখুন।
সিল্ক
সিল্কের জামাকাপড় মানেই সেটি খুব হালকা, সূক্ষ এবং কোমল। তাই ইস্ত্রি করতে হবে খুব যত্নে, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। খেয়াল রাখবেন সিল্কের জামাকাপড় ইস্ত্রি করার সময় তাপমাত্রা যেন কোনভাবেই ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি না হয়।
লিনেনের কাপড়
এই ধরনের ফেব্রিক সবচেয়ে বেশি কুঁচকে যায়। তাই ৪৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ইস্ত্রি করতে হবে লিনেনের জামাকাপড়।
সিফন জর্জেট
এই ফেব্রিক খুবই মিহি হয়। ইস্ত্রি না করলেও চলে। তবে যদি ইস্ত্রি করতেই হয় সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন তাপমাত্রা যেন ২৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি না হয়।
লাইক্রা
এই ধরনের ফেব্রিক ইস্ত্রি না করাই ভাল। তবে যদি ইস্ত্রি করতেই হয় সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রা যেন কোনভাবেই ২৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি না হয়।
রেয়ন
সুতি বা লিনেনের থেকেও কিছুটা পাতলা হয় এই ফেব্রিক। অল্পতেই কুঁচকে যায় এর তৈরি জামাকাপড়। এই ফেব্রিকে তৈরি জামাকাপড় ইস্ত্রি করার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে রাখুন।
উল
উলের পোশাক ইস্ত্রির সময় তাপমাত্রা ঠিকঠাক না থাকলে সেটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই উলের পোশাক ইস্ত্রির সময় তাপমাত্রা যেন কোন ভাবেই ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি না হয়।
কাপড় ইস্ত্রি করা হলে ঘণ্টাখানেক কাপড় ঠাণ্ডা করে তারপর আলমিরাতে রাখুন। এতে কাপড় ভালো থাকবে দীর্ঘদিন। যে পোশাকই পরুন না কেন, তা যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটি হয়। পোশাক পরিষ্কার করার পর তা সুন্দর করে ইস্ত্রি করুন।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]