শিরোনাম
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যায় মিল নেই কেন: হাইকোর্ট
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০১৯, ২১:০৬
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যায় মিল নেই কেন: হাইকোর্ট
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় সরকারি ও বেসরকারি হিসাবে কোনো মিল নেই বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। হাইকোর্ট প্রশ্ন রেখে বলেন, মৃত্যুর হিসাবে এতো গরমিল কেন?


বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার (১৮ আগস্ট) এ সংক্রান্ত শুনানিতে এমন মন্ত্রব্য করেন।


আদালত বলেন, ইতিমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। শরিয়তপুর থেকে একজন ঢাকায় এসে মারা গেল। হাসপাতালে সাধারণ মানুষ সেবা পাচ্ছে না। আমাদের একজন স্টাফ চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরত এসেছে। কাগজে-কলমে সবকিছুই বলে ঠিক আছে, কিন্তু গোয়ালেতো গরু নেই।


আদালত আরো বলেন, ডেঙ্গু এখন মহামারী পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু এটা মোকাবেলা করার জন্য দক্ষতা এবং মানসিকতা দেখা যাচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশনের যে দায়িত্ব ছিল সেটা তারা যথাযথ পালন করেনি। ওষুধে মশা মরছে না। এমনকি বাজারের মশা মারার ওষুধেও কাজ করছে না। শুনানি শেষে আদালত কোনো আদেশ দেননি।


আদালত বলেন, ডেঙ্গু দমনে সময় মতো পদক্ষেপ নিলে এমন পরিস্থিতি হতো না। ডেঙ্গু নিধনে মানসিকতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। কাগজে-কলমে সবকিছুই ঠিক আছে, আদতে ডেঙ্গু নিধনে কিছুই পুরোপুরি ঠিক নেই। মিডিয়ায় এসেছে কিছু কিছু হাসপাতালেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।


গত ২৫ জুলাই ডেঙ্গু পরীক্ষায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিষয়টি আদালতকে অবহিত করতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেয়া হয়। সেই মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।


রবিবার প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি ইতিপূর্বে আর হয়নি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশে সমস্ত ডাক্তারের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তারা ঈদের মধ্যেও রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। সর্বমহল থেকে এর প্রশংসা করা হয়েছে। ৪০টি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের চেষ্টা এখনো অব্যাহত।


তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যে ওষুধ আমদানি করা হচ্ছে এর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ সব ওষুধ দ্রুত হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।


এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার সঙ্গে সরকারি আর বেসরকারি হিসাবের কোনো মিল নেই। এমন গরমিল কেন?


আদালত বলেন, ইতিমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। শরিয়তপুর থেকে একজন ঢাকায় এসে মারা গেল। হাসপাতালে সাধারণ মানুষ সেবা পাচ্ছে না। আমাদের একজন স্টাফ চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরত এসেছে। কাগজে-কলমে সবকিছুই বলে ঠিক আছে, কিন্তু গোয়ালেতো গরু নেই। ডেঙ্গু এখন মহামারী পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু এটা মোকাবেলা করার জন্য দক্ষতা এবং মানসিকতা দেখা যাচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশনের যে দায়িত্ব ছিল সেটা তারা যথাযথ পালন করেনি। ওষুধে মশা মরছে না। এমনকি বাজারের মশা মারার ওষুধেও কাজ করছে না। শুনানি শেষে আদালত কোনো আদেশ দেননি।


এ সময় আদালত উপস্থিত মিডিয়াকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা রিপোর্ট লেখা বা পরিবেশনের ক্ষেত্রে আরো সতর্কতা অবলম্বন করবেন। কোনোভাবেই যেন বাইরে ভুলবার্তা না যায়। সেদিন আমরা বলেছি, ‌তারা পাবলিক সার্ভেন্ট অব কান্ট্রি’ আর কোনো কোনো মিডিয়ায় এসেছে এরা ভিআইপি নয় চাকর। এ বিষয়ে আমরা আগামী ২২ আগস্ট বিস্তারিত বলব।


পরে ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে- এর একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন আজ হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। আদালত সবকিছু বিবেচনা করেছেন। আদালত সারা দেশে ছড়িয়ে যাওয়া ডেঙ্গু জরুরি ব্যবস্থায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছেন। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব যেন কমানো যায় এবং কেউ যেন নতুন করে আক্রান্ত না হয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলেছেন। শুনানির পর এর ওপর কোনো রুল ইস্যু করেননি ।


তিনি বলেন, আমি আদালতে বলেছি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের চেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশে সমস্ত ডাক্তারের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তারা ঈদের মধ্যেও রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। সর্বমহল থেকে এর প্রশংসা করা হয়েছে।


ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার আরো বলেন, বিদেশ থেকে যে ওষুধ আমদানি করা হচ্ছে এর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ সব ওষুধ দ্রুত হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। উনারা (আদালত) নতুন করে কোনো নির্দেশনা দেননি।


এর আগে ডেঙ্গু পরীক্ষা বাবদ অতিরিক্ত ফি আদায় বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। তখন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন, রোগীর কাছ থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি আদায় যৌক্তিক সীমায় থাকতে হবে। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালের ধার্যকৃত ফির মধ্যে একটু পার্থক্য থাকতে পারে। তবে সেটা আকাশ-পাতাল ব্যবধান হতে পারবে না।


সে সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার আদালতকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে কোনোভাবেই ফাইভ স্টার হোটেল হতে দেয়া যাবে না। সহনীয় পর্যায়ে ফি ধার্য করতে হবে।


এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আমরাও চাই রোগীরা যেন অতিরিক্ত ফি আদায়ের নামে হয়রানির শিকার না হয়।


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com