শিরোনাম
ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
প্রকাশ : ২৭ মে ২০১৯, ১৫:৩৩
ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ফেনীর সোনাগাজি থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত।


সোমবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আসসামস জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন।


এর আগে রবিবার তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।


ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন পিবিআই সদর দফতরের সিনিয়র এএসপি রিমা সুলতানা।


তিনি জানান, তদন্ত শেষে রবিবার সাইবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।


পিবিআই জানায়, ১৫ এপ্রিল সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আদালতে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্তে প্রতিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।


মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে করা মামলায় যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তার সব কটির সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পিবিআইপ্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।


তিনি বলেন, অভিযোগপত্রে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।


তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, ২৭ মার্চ রাফিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এমন অভিযোগ উঠলে রাফিকে থানায় ডেকে নেন তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করার সময় রাফির বক্তব্য ভিডিও করেন তিনি। এ সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে রাফি ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন রাফি।


ওসি যখন ভিডিও করছিলেন, তখন রাফি তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। ওই সময় ওসি আপত্তি করে বলেন, মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও। এ সময় তিনি রাফিকে উদ্দেশ করে আরো বলেন, এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, ওসি মোয়াজ্জেম আপত্তিকর ভাষায় একের পর এক প্রশ্ন করছিলেন রাফিকে। পরবর্তী সময়ে ওসির মোবাইল থেকে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।


এদিকে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন রাফিকে হেনস্তা করেও ক্ষান্ত হননি। রাফির গায়ে দুর্বৃত্তরা কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে তিনি আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছিলেন। এ কাজে এসআই ইকবাল হোসেন ওসিকে সহায়তা করেন।


এ ঘটনায় ওসিকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। এদিকে রাফি হত্যার ঘটনায় ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম সরকারেরও গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি। তাকেও বদলি করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলমান রয়েছে।


প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। বোরকা পরিহিত কয়েকজন কৌশলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।


এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ রাফি। এর আগে ২৭ মার্চ রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


পর দিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ পর্যন্ত রাফি হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ২২ জনের মধ্যে সিরাজউদ্দৌলাসহ ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।


বিবার্তা/তাওহীদ/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com