সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারের চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, যত বড় বিজনেসম্যান হোক না কেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে হয়ে যাননি। একটা সীমা থাকা দরকার। ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে গ্রিন লাইন পরিবহনের সব গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে। সব গাড়ি সিজ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করে রাসেলকে টাকা দেয়া হবে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ কথা বলেছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় গ্রিন লাইনের ব্যবস্থাপককে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

রাসেলকে বুধবারের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। টাকা দেয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার তা আদালতকে জানাতে বলা হয়েছিল।

শুনানির শুরুতে রিটের পক্ষের আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, গ্রিন লাইন পরিবহনের কেউ কোনো যোগাযোগ করেননি, টাকাও দেননি।

এ সময় গ্রিন লাইন পরিবহনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অজিউল্লাহ আদালতকে বলেন, আমি সব সময় তাদেরকে আদালতের আদেশ জানিয়ে এসেছি।

আদালত বলেছে, এর মালিক কে? অজিউল্লাহ বলেন, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন। আদালত জানতে চান, কোথায় আছেন এবং কবে আসবেন? অজিউল্লাহ বলেন, আমি জানার চেষ্টা করছি।

আদালত এরপর বলেছে, ব্যবসা তো বন্ধ নেই, ব্যবসা তো চলছে? ম্যানেজারকে ডাকেন। ম্যানেজারের কাছ থেকে পজিটিভ কিছু না পেলে আমরা গ্রিন লাইন পরিবহনের সব বাস সিজ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করব। আমরা সব স্টপ করে দেব। একটা সীমা থাকা দরকার। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে হয়ে যাননি।

পরে আদালত দুপুর ২টার মধ্যে গ্রিন লাইনের ব্যবস্থাপককে আদালতে হাজির হতে বলেন। দুপুর ২টার পর এ বিষয়ে আদালতে শুনানি হবে।

গত ৩১ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিন লাইন পরিবহনের করা আবেদন খারিজ করে রবিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেলের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা।

এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করেন। পরে আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।

রাসেল সরকারের বড় ভাই আরিফ সরকার বাসচালক কবির মিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় গত বছরের ২৮ এপ্রিল মামলা করেন।

বিবার্তা/জাকিয়া

>>পা হারানো রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার আদেশ বহাল