শিরোনাম
ওসিরা নিজেরা বিচার বসায় কীভাবে?: হাইকোর্ট
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০৩
ওসিরা নিজেরা বিচার বসায় কীভাবে?: হাইকোর্ট
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

‘ওসি সাহেবরা সব জায়গায় কোর্ট বসিয়ে দেন। ওসি কী সালিশ করতে বসেছেন? তারা সুবিধামতো হলে মামলা নেবেন, অথচ টাকা ছাড়া থানায় একটা জিডিও হয় না।’


সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় মামলা না নেয়ায় অভিযোগে দায়ের করা রিটের শুনানিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথা হাইকোর্ট বলেছে।


রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই মন্তব্য করেন।


আদালতে রিট করেন সাতক্ষীরার বাসিন্দা ফজলুর করিম। তার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শামসুল হক কাঞ্চন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।


শ্যামনগর থানায় মামলা না নেয়ার প্রসঙ্গে আদালত বলেছে, ওসি মামলা নিলেন না কেন? আমরা রুল দিয়ে দেখি কেন তিনি মামলা নিলেন না। ওসিরা যেখানে সেখানে কোর্ট বসায়, রাতে কোর্ট বসায়। এতো সাহস তারা কোথায় পায়? তারা নিজেরা বিচার বসায় কীভাবে?’


কিছু পুলিশের জন্য গোটা পুলিশের বদনাম হয় উল্লেখ করে আদালত আরো বলেছে, ১৩ হাজার পুলিশ যারা থানায় বসেন, তাদের জন্য গোটা পুলিশের বদনাম হয়। অথচ অনেক পুলিশ খুব কষ্ট করে দিনযাপন করেন, আমরা দেখি। অথচ অনেক পুলিশের আবার দেখি সুন্দর সুন্দর বাড়ি। দেশটা কি চোরের দেশ হয়ে গেছে?


সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম শুনানির শুরুতে বলেন, মামলা না নেয়ার ঘটনা আংশিক সত্য।


ওসির মীমাংসার প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি বাদীর পারিবারিক বিরোধ হওয়ায় ওসি সাহেব সালিশের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তির কথা বলেছিলেন। এটা শোনার পর আদালত বলেন, পুলিশের কাজ তো এটা না। পুলিশের কাজ ঘটনার সত্যতা যাচাই করে মামলা নেওয়া। পরবর্তী তদন্তে যদি ঘটনা মিথ্যা প্রমাণ হয় তাহলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাদ দেবে।


এ সময় অ্যাডভোকেট শামসুল হক কাঞ্চন জানান, জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউসুফ আলীসহ কিছু লোক সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার সোরা গ্রামের মোহাম্মদের ফজলুর করিমের বাড়িতে গিয়ে তাকে মারধর করে। এসময় তারা নগদ দুই লাখ টাকা, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি স্বর্ণের চেন ও ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে। যাওয়ার সময় তারা বাড়ির সীমানা প্রাচীরও ভেঙে ফেলে। হামলার সময় শ্যামনগর থানার ওসিকে ফোন দিয়ে সাহায্য চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। এরপর ফজলুর করিম কালীগঞ্জ সার্কেলের এএসপিকে ফোনে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি ৯৯৯-এ ফোন করে সাহায্য চাইলে শ্যামনগর থানার একজন এএসআই ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।


এরপর ঘটনাস্থল থেকে ওসিকে ফোন করে বাদী ফজলুর করিমকে কথা বলতে বলেন এএসআই। ওসি তখন ফোনে ফজলুর করিমকে বলেন, ওপর মহলে নালিশ করিস, তোর মামলা হবে না। কোর্টে মামলা কর।


তখন ফজলুর করিমের বাবা অনুনয়-বিনয় করলে ওসি বলেন, কাল সকালে আবার তদন্ত হবে। সে কথা মতো, শ্যামনগর থানার এসআই মরিুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে বলেন, মামলা হবে না। পারলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে মীমাংসা করে নিতে হবে।


কিন্তু ফজলুর করিম এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের কাছে সব ঘটনা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।


সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার শ্যামনগর থানার ওসিকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে লিখিত নির্দেশ দেন। এরপরও ওসি কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ৩ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ফজলুল করিম। এরপর ১০ মার্চ প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিষয়টি খোঁজ নিতে মৌখিক নির্দেশ দেন আদালত।


পরবর্তীতে মঙ্গলবার পুনরায় (২ এপ্রিল) রিটের শুনানি করতে গিয়ে ঘটনার আংশিক সত্যতা পাওয়ার তথ্য আদালতকে অবহিত করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম। এরপর আদালত এই মামলার প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য আগামী রবিবার দিন ধার্য করেন।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com