শিরোনাম
বাদল ফরাজির মুক্তি নেই!
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০১৮, ১৬:৩৮
বাদল ফরাজির মুক্তি নেই!
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

অপরাধ না করেও ভারতের আদালতে হত্যামামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় বাংলাদেশের বাদল ফরাজিকে। দীর্ঘ ১০ বছর সেই দণ্ড ভোগ করার পর তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে ঢাকা আসার অর্থ এই নয় যে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দেশেও তাকে কারাগারেই রাখা হয়েছে। তাঁর স্বজনদেরও বিমানবন্দরে তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। সব মিলিয়ে মনে করা হচ্ছে, বাদল ফরাজি নামের হতভাগ্য মানুষটির বহু দূর।


দিল্লি থেকে বাদল ফরাজিকে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাদেশ পুলিশের একটি দল বিমানযোগে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। সেখান থেকে তাকে সোজা কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।


কারাসূত্র জানায়, তাঁকে বন্দী বিনিময় চুক্তির অধীনে ফেরত আনা হয়েছে, তাই সাধারণ নিয়মে তাঁকে বাংলাদেশের কারাগারেই বাকি শাস্তি ভোগ করতে হবে।


২০০৮ সালের ৬ মে দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল ভারতের পুলিশ। তাকে ধরতে সীমান্তেও সতর্কতা জারি করা হয়। কিন্তু নামের প্রথম অংশের (বাদল) মিল দেখেই ২০০৮ সালে জুলাই মাসে ভারতে যাওয়ার পথে বাদল ফরাজিকে ধরে ফেলে বিএসএফ-এর ''বিজ্ঞ'' সদস্যরা। পরে ওই খুনের মামলায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদল ফরাজিকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লির ততোধিক বিজ্ঞ আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। মহাবিজ্ঞ দিল্লি হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে। শুধু নামের অগ্রভাগের মিলের কারণে খুন না-করেও ''খুনী'' বনে যাওয়া বাদল ফরাজি আর যায় কোথায়? তার স্থান হয় দিল্লির তিহার জেলে।


বিনাদোষে এই সাজা মেনে না-নিয়ে বাদল ফরাজি দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টও বাদল ফরাজির আবেদন খারিজ করে দেয়। ফলে গত ১০ বছর ধরে তিনি দিল্লির তিহার জেলে বন্দী থাকেন। ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই দণ্ডের বিরুদ্ধে এবং বাদল ফরাজির মুক্তির জন্য সোচ্চার ছিল। অবশেষে বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ নিয়ে বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে তাকে ফিরিয়ে আনলো।


বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের কাছে ফারুকী রোডের বাসিন্দা আবদুল খালেক ফরাজি ও শেফালি বেগমের ছেলে বাদল ফরাজি। তখন সবে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র বাদলের ইচ্ছা ছিল তাজমহল দেখার। সেই ইচ্ছা পূরণের জন্যই ভারতে যাওয়ার উদ্যোগ নেয় সে। ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই সব বৈধ প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হরিদাসপুর সীমান্তে প্রবেশের পরপরই তাকে আটক করে বিএসএফ। হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে না পারার কারণে বিএসএফের কর্মকর্তাদের তিনি বোঝাতেই পারেননি যে, খুনের অভিযোগ যে বাদলকে খোঁজা হচ্ছে তিনি সেই ব্যক্তি নন।


‘তাকে যেন আর জেল খাটতে না হয়’


শুক্রবার বিকেলে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে বাদল ফরাজির জন্য অপেক্ষা করেছিলেন তাঁর মা-বোন এবং পরিবারের সদস্যরা। কথা ছিল বিমানবন্দরে বাদলের সঙ্গে তাঁদের দেখা হবে। কিন্তু সে আশাও পুরণ হয়নি তাদের।


বাদলের বড় বোন আকলিমা বেগম বলেন, ‘‘আমাদের পুলিশ আগেই জানিয়েছিল, বিমানবন্দরে দেখা করার সুযোগ দেবে। কিন্তু দেয়নি। ভিআইপি গেট দিয়ে না বের করে আরেক গেট দিয়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যায়। আমার মা বাদলের দেখা না পেয়ে কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা এসেছিলাম বাদলের সঙ্গে দেখা করতে।''


বাদল ফরাজিরা পাঁচ ভাই-বোন। বাবা বেঁচে নাই। তাঁর বড় বোন আকলিমা আক্তারই এখন সংসার দেখেন। আকলিমা বলেন, ‘‘বাদল যখন ভারতে যায়, তখন সে ক্লাস এইটের ছাত্র। সে তো বিনা দোষে ভারতের কারাগারে ১০ বছর জেল খেটেছে। তার জীবন থেকে ১০টি বছর হারিয়ে গেছে। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, এবার যেন তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তাকে যেন আর জেল খাটতে না হয়।''


‘রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে’


মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘ভারতে আদালতে যে দণ্ডপ্রাপ্ত, সেই দণ্ড থেকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতও তাকে রেহাই দেয়নি। তাই সাধারণ নিয়ম হলো, দণ্ডের বাকি মেয়াদ সে বাংলাদেশের কারাগারে ভোগ করবে। তবে যেহেতু সে বাংলাদেশের নাগরিক, তাই এখন চাইলে সে এ দেশের আইনের আশ্রয় নিতে পারে। এ আইনে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করলে তিনি কারাদণ্ডের বাকি মেয়াদ থেকে রেহাই পেয়ে মুক্তি পেতে পারেন।'' সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com