শিরোনাম
আদুরি নির্যাতনে গৃহকর্ত্রী নদীর যাবজ্জীবন
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০১৭, ১১:৪২
আদুরি নির্যাতনে গৃহকর্ত্রী নদীর যাবজ্জীবন
আদুরি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

গৃহকর্মী আদুরিকে (১১) নির্যাতন করে মৃত ভেবে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার ঘটনায় করা মামলায় গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকা পাবেন আদুরি। অপর আসামি নদীর মা ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

 

মঙ্গলবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার এ রায় ঘোষণা করেন।

 

এসময় ট্রাইব্যুনালের এজলাসকক্ষে উপস্থিত ছিল আদুরি। সঙ্গে ছিলেন তার মা সাফিয়া বেগম, খালা শাহিনুর বেগম ও মামা মামলার বাদী নজরুল চৌধুরীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদুরী ও তার পরিবারের সদস্যরা।

 

মামলার দুই আসামির মধ্যে গ্রেফতার গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায়ের পর তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জামিনে থাকা অপর আসামি নদীর মা ইশরাত জাহানও আদালতে ছিলেন।

 

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারা ও ডিওএইচএস তেলের ডিপোর মাঝামাঝি রেললাইন সংলগ্ন একটি ডাস্টবিনের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় কঙ্কালসার ও মৃতপ্রায় গৃহকর্মী আদুরিকে। উদ্ধারের সময় তার শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। মারধর, গরম খুন্তি ও ইস্ত্রির ছ্যাঁকা, ব্লেড দিয়ে শরীরে আঘাত, মাথায় কোপ, খেতে না দেয়া- কিছুই বাদ যায়নি নির্যাতনের তালিকা থেকে।

 

প্রায় দেড় মাস আদুরিকে চিকিৎসা দেয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুস্থ অবস্থায় যখন তাকে রিলিজ দেয়া হয় তখনও সে ভালোভাবে কথা বলতে পারত না। শরীর প্রচণ্ড দুর্বল ছিল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ওই বছরের ৭ নভেম্বর পটুয়াখালী জেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের নিজ গ্রামে ফিরে যায় আদুরি।

 

ওই ঘটনায় একই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় নওরীন জাহান নদী, তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মাসুদ, মাসুদের দুলাভাই চুন্নু মীর ও তাদের আত্মীয় রনিকে আসামি করে মামলা করা হয়। তবে পুলিশি তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিট থেকে মাসুদ, চুন্নু মীর ও রনির নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, তদন্তে নদীর মা ইসরাত জাহানের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় নতুন করে তাকে আসামি করা হয়।

 

মামলার পর ২৬ সেপ্টেম্বরই গ্রেফতার করা হয় নদীকে। সেই থেকে নদী কারাগারে আছেন। জামিনে ছিলেন তার মা ইসরাত জাহান।

 

গ্রেফতারের পর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদুরিকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করে ওই বছরের ১ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নদী। আদুরিও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

 

২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী ও তার মা ইসরাত জাহানকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেন পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কুইন আক্তার। ২০১৪ সালের ৬ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। মামলাটির বিচারকাজ চলাকালে ১৩ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। 

 

গত ৯ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।

 

বিবার্তা/আছিয়া/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com