
এক দশক আগে রহিম স্টিল মিলসে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার (২ জুন) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য রিটটি কার্যতালিকায় রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. লুৎফুর রহমানের (রাসেল) পক্ষে ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ এটি দায়ের করেছেন।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘রহিম স্টিল মিলে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু ক্ষতিপূরণ ও বিচারের অপেক্ষায় স্বজনরা’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি রিটে যুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, এক দশকে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয় রহিম স্টিল মিলসে। ২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে একটি অনুসন্ধান প্রকাশিত হয়। একটি জাতীয় দৈনিক ‘রহিম স্টিল মিলে মৃত্যুকূপ/ ১০ বছরে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু: অসুস্থ দুই শতাধিক’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ভুক্তভোগীদের কাছে ছুটে যায়। পরিবেশবাদীরাও সোচ্চার হন। শ্রমিক সংগঠনগুলো বিবৃতি দেয়। রাজধানীতে মিছিল ও মানববন্ধন করে। ‘কলকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর’ তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে তদন্ত চালায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অতিরিক্ত জেলা জজ শরীফ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের উচ্চতর কমিটি গঠন করে তদন্ত করে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরিবেশ অধিদপ্তর রহিম স্টিল মিলের প্রাণঘাতি কোয়ার্টজ উৎপাদনকারী ‘মৃত্যুকূপ’ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে বেশ তোড়জোড় চললেও কিছু দিন যেতেই মিলিয়ে যায় সব তৎপরতা। প্রতিবেদন প্রকাশের পর ৮ বছর অতিক্রম হতে চললেও আলোর মুখ দেখেনি প্রতিবেদনগুলো।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘রহিম স্টিল মিলস লিমিটেডের’ ক্রাশিং সেকশনে কাজ করে ১০ বছরে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ কিংবা মৃত্যুপথযাত্রী আরও দুই শতাধিক। প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিক হিসেবে যিনি ২ মাস কাজ করেন, তার মৃত্যু অবধারিত। রুলিং মিল এবং পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ‘কোয়ার্টজ পাউডার’। চুনা পাথর, বরিক পাউডার, পটাশিয়ামসহ কয়েক ধরনের কেমিক্যালের সংমিশ্রণে উৎপাদন করা হতো কোয়ার্টজ পাউডার। এ পাউডার এক সময় ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হতো। পরে রহিম স্টিল মিলস কর্তৃপক্ষ নিজেরাই পাথর মেশিনে গুঁড়া করে কোয়ার্টজ পাউডার উৎপাদন শুরু করে। প্রয়োজনীয় টুকুন নিজেরা ব্যবহার করে বেশিরভাগ বিক্রি করা হয় অন্যান্য রি-রোলিং মিলস, সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও পার্টিকেল বোর্ড ফ্যাক্টরিতে।
যদিও রোলিং মিলে পাথর গুঁড়া করার কোনো অনুমোদন ছিল না। প্রতিবেদককে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োক্যামেস্ট্রির তৎকালীন প্রফেসর ডা. ইকবাল আর্সালান জানিয়েছিলেন, কোয়ার্টজ’র ডাস্ট মানব দেহে প্রবেশ করলে ফুঁসফুঁসে রক্ত জমে যায়। চোখ শুকিয়ে যায়। ডার্মাটাইটিজ, আর্থাটাইটিজ হয়। লক্ষণ স্বরূপ আক্রান্ত শ্রমিকের শ্বাসকষ্ট, রক্তবমি, চর্মরোগ, চুলকানি, জ্বর ও শীর্ণকায় হয়ে যান। চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে মৃত্যু। কোনো ওষুধেই কাজ না হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি হয়ে গেছে এক ‘অচেনা রোগ’। অচেনা রোগে নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও উপজেলার বাঘরি দক্ষিণপাড়া গ্রামে এক পরিবারেই মৃত্যু হয় ৪ শ্রমিকের। উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়ন, সনমানদী, কাঁচপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মারা যান ১২ জন। বাঘরি পশ্চিমপাড়া গ্রামের মারা যান তোতা মিয়া, আবুল কাসেম, গুলবাহার, নূরুল ইসলাম, জাহের আলী।
বাঘরি উত্তর পাড়া, দক্ষিণপাড়া এবং পূর্ব পাড়ায় মারা গেছেন আরও অন্তত ১১ জন। নাজিরপুর বাংলাবাজার গ্রামে মারা গেছেন কয়েকজন। এসব নীরব মৃত্যু নিয়ে তখন রহিম স্টিল মিলসের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো জবাব মেলেনি।
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]