রাজধানীর দুই থানার পৃথক চার মামলায় আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীরের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মঙ্গলবার তিনদিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর রাজধানীর গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দশ দিন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পাঁচ দিন এবং পল্লবী থানায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ও প্রতারণার মামলায় সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান পল্লবী থানায় দুই মামলায় আট দিন এবং ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী গুলশান থানার দুই মামলায় ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হেলেনা জাহাঙ্গীর আইপিটিভির নামে অবৈধভাবে স্যাটেলাইট টিভি চালাতেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন কাওরানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুই সহযোগীকে গ্রেফতারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা টেলিভিশন ২০১৮ সাল থেকে হংকংয়ের একটি ডাউন লিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছিল। ফ্রিকুয়েন্সির জন্য হংকংকে প্রতি মাসে প্রায় ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করতেন তিনি। তবে হংকং থেকে বরাদ্দ ফ্রিকুয়েন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচারের কোন বৈধ অনুমোদন নেই।
এর আগে রাজধানীর গাবতলী থেকে হাজেরা খাতুন (৪০) ও সানাউল্ল্যা নূরী (৪৭) নামে হেলেনার এই দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তির মানহানি অভিযোগ রয়েছে।
গ্রেফতার দুজন সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, হাজেরা হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন মিরপুরে একটি গার্মেন্টসের অ্যাডমিন (এইচ আর) পদে চাকরি শুরু করেন। ২০১৬ সালে তিনি ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের’ ডিজিএম হিসেবে নিয়োগ পান। ‘জয়যাত্রা টিভি’র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জিএম (অ্যাডমিন) হন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ তার আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন।
সানাউল্ল্যা নুরী জয়যাত্রা টিভি’র প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নির্দেশনায় প্রতিনিধিদের সমন্বয় সাধন করতেন। প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। এলাকাতে তার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তিনি গাজীপুর গার্মেন্টস সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে এর একটি অংশ জয়যাত্রা টিভিতে দিতেন বলে জানান। এ ছাড়াও তিনি গাজীপুর ও আশপাশের এলাকার অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচার নিশ্চিত করতেন।
প্রসঙ্গত, ২৯ জুলাই রাত ৮টার পর হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডের বাসভবনে অভিযান শুরু করে র্যাব। দীর্ঘ চার ঘন্টা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ৩০ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র্যাব।
এ দিন গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আসামি হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এই রিমান্ড শেষে আজ নতুন করে আরো ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেন আদালত।
বিবার্তা/আবদাল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]