শিরোনাম
অর্থপাচার মামলায় যুবলীগের খালেদ তিন দিনের রিমান্ডে
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২০, ১৪:৫১
অর্থপাচার মামলায় যুবলীগের খালেদ তিন দিনের রিমান্ডে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

অর্থপাচার আইনে করা মামলায় ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত ও বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৬ জুন) ঢাকা মহানগর হাকিম (ভার্চুয়াল আদালত) জিয়াউর রহমান শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে খালেদকে উপস্থিত দেখানো হয়। তার সাথে কারা কর্তৃপক্ষ ছিলেন। এসময় মতিঝিল থানার অর্থপাচার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।


মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক রাশেদুর রহমান। অপরদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


মতিঝিল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোতালেব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মতিঝিল থানার অর্থপাচার মামলায় রোববার খালেদকে গ্রেফতার দেখানো পূর্বক সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে সিআইডি। ওইদিন আদালত আবেদনটি উপস্থাপন করা হলে বিচারক আজ মঙ্গলবার এ বিষয় শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। শুনানি শেষে বিচারক তাকে অর্থপাচার মামলায় গ্রেফতার দেখানোপূর্বক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


এর আগে ৭ জুন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ইব্রাহিম হোসেন বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে খালেদের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করেন। মামলা নম্বর ৩(৬)২০। পরের দিন ৮ জুন ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ সিআইডির করা দুই মামলার এজাহার গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১২ জুলাই দিন ধার্য করেন।


মামলার অপর আসামিরা হলেন- আইয়ুব রহমান, আবু ইউনুস ওরফে আবু হায়দার, দীন মজুমদার ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজন। তবে খালেদ ছাড়া অপর উল্লিখিত আসামিরা অর্থপাচারে খালেদকে সহযোগিতা করেছেন মর্মে জানা যায়।


মামলার সূত্রে জানা যায়, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত অবৈধ প্রভাব বিস্তার ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর কমলাপুর রেলভবন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ঢাকা ওয়াসার ফকিরাপুল জোন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব প্রকল্পের কাজের টেন্ডার একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।


পছন্দমতো প্রকল্পের কাজ নিজের মালিকানাধীন ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপারস লিমিটেড, অর্ক বিল্ডার্স এবং অর্পণ প্রোপার্টিজের নামে এসব কাজ করতেন। অবশিষ্ট প্রকল্পের কাজের জন্য অন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২-১০ শতাংশ হারে নগদ চাঁদা আদায় করতেন।


খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা যেমন- মতিঝিল, সবুজবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাছের বাজার, কোরবানির পশুর হাট, সিএনজি স্টেশন, গণপরিবহন থেকে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায় ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অপরাধলব্ধ আয় করেন। রাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ ও বিক্রয় করে অবৈধভাবে লাভবান হন।


এছাড়া মতিঝিলের ‘ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে’ অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার মাধ্যমেও তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ আয় করেন। তার মালিকানাধীন ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপারস, অর্ক বিল্ডার্স এবং অর্পণ প্রোপার্টিজ থেকে তিনি অপরাধকার্য পরিচালনা করেছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। এসব অপরাধলব্ধ আয় তার নিজ নামে ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের হিসাবসমূহে লেনদেন করেন।


মামলার নথি সূত্রে আরো জানা যায়, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার এ৪, ১৯৫, উত্তর শাহজাহানপুর, ঢাকায় আরবি বিল্ডার্সের নির্মিত ফ্ল্যাট যার আয়তন ১২৫০ বর্গফুট, গুলশান-২ এ ৩৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং মোহাম্মদপুরে কাদেরাবাদ হাউজিংয়ে একটিসহ রাজধানীতে মোট তিনটি ফ্ল্যাট বা বাসার সন্ধান মিলেছে। এছাড়া তার নিজ নামে একটি ২০১৬ সালের মডেলের প্রাডো, একটি নোয়াহ গাড়ি আছে।


মামলায় উল্লেখ করা হয়, তিনি আয়ের উৎস গোপন করতে আইয়ুব রহমানের সহযোগিতায় মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করেন। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তকালেও মালয়েশিয়ার মাইব্যাংক ও আরএইচবি ব্যাংক, সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংক এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকের একটি এটিএম ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়।


সিআইডি অনুসন্ধানের তথ্য উল্লেখ করে জানায়, ২০১৮ সালের মে মাসে খোলা মালয়েশিয়ার মাইব্যাংক ও আরআইআইবি ব্যাংকের চারটি হিসাবে আসামি খালেদের নামে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫ লাখ ৫৭ হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত যার মধ্যে দুটি সঞ্চয়ী হিসাবে ২২ লাখ ৫৭ হাজার এবং দুটি এফডিআর হিসাবে মোট তিন লাখ রিঙ্গিত পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের ৪ মে ইস্যু করা মালয়েশিয়ার ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ৩ মে ২০২১। ভিসাটিতে ‘ MYS MY 2 HOME’ লেখা আছে, যা সেকেন্ড হোম ভিসা নামে অধিক পরিচিত। এই সেকেন্ড হোম ভিসার পূর্বশর্ত হিসেবে মালয়েশিয়ায় সে এফডিআর করেছে মর্মে জানা যায়।


শুধু তাই নয়, সিঙ্গাপুরে খালেদ অর্পণ ট্রেডার্সের নামে একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিপণনী প্রতিষ্ঠান খোলেন। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংকে মালিকানাধীন একই প্রতিষ্ঠানের নামে একটি চলতি হিসাব খোলেন। যেখানে ৫ লাখ ৫ হাজার সিঙ্গাপুর ডলারের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা শেয়ারহোল্ডার সিঙ্গাপুর নাগরিক আবু ইউনুস ওরফে আবু হায়দার ও আইয়ুব রহমানের সহযোগিতায় এ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যায়।


২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া নিজ নামে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকে আরও একটি হিসাব খোলেন, যাতে ১০ লাখ থাই বাথ জমা হয়। এ টাকাও আইয়ুব রহমানের সহযোগিতায় হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয়। থাইল্যান্ডে দীন মজুমদার সে টাকা তার হিসাবে জমা করেন।


উল্লিখিত তিন দেশের ব্যাংক হিসাবে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খালেদের মোট স্থিতির পরিমাণ প্রায় আট কোটি ৫০ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, যা আসামি আইয়ুব রহমান, আবু ইউনুস ওরফে আবু হায়দার, দীন মজুমদার ও অজ্ঞাত আসামিদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দেশের বাইরে পাচার করে।


আসামি খালেদের পাসপোর্টে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও চীনের ভিসা রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে তার ৭০ বার ভ্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত অপরাধে জড়িত থাকা ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনের দায়ে মতিঝিল, গুলশান থানায় মাদক, মানি লন্ডারিং, দুদক আইনসহ ছয়টি মামলা তদন্তাধীন।


উল্লেখ্য, রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ চালানোর অভিযোগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানের নিজ বাসা থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করে র্যাব। তার বাসা থেকে একটি অবৈধ পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি, ২০১৭ সালের পর নবায়ন না করা একটি শর্টগান ও ৫৮৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।


পরদিন দুপুরে তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। একইদিন র‌্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেন। অন্যদিকে মতিঝিল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন র‌্যাবের ওয়ারেন্ট অফিসার চাইলা প্রু মার্মা।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com