শিরোনাম
‘দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরতে চাই’
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩৬
‘দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরতে চাই’
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত তথ্যপ্রযুক্তির বৃহত্তম প্রদর্শনী সফটএক্সপোতে এবার প্রায় দুইশো দেশি-বিদেশি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে বলে বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপে জানিয়েছেন ‘বেসিস সফটএক্সপো-২০১৮’-এর আহ্বায়ক ও বেসিস পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল।


সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ বেসিস কার্যালয়ে বিবার্তার সাথে খোলামেলা আলাপ করেন জনাব সোহেল। আগামী ২২-২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হতে যাওয়া চার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন বিবার্তার প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ।



বিবার্তা : দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা কেমন?


মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল : ভালো-খারাপ দু'টাই আছে। ভা্লোটা হচ্ছে, মার্কেট ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। আগে যারা সফটওয়্যার কিনতে চাইত না, এখন তারা চাইছে। সরকার অ্যাগ্রিমেন্ট করতে চাইতো না, এখন করছে।


আর খারাপ দিক হচ্ছে সরকারের পলিসির কারণে কিছু বিদেশি কম্পানির সাথে একটা অসম যুদ্ধ করতে হচ্ছে। সরকারের পারচেজ পলিসি ঠিক না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সরকারের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারি না। কারণ, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ছোট। পাঁচ মিলিয়ন ডলারের টার্নওভার আমাদের কারও নেই। তাই দেশি কোনো কম্পানি কাজ করতে পারছে না। ফলে বাইরের কম্পানি কাজটি নিয়ে যাচ্ছে।


আরেকটি খারাপ দিক হচ্ছে, ব্যাংক বা অন্য কোনো ফাইন্যান্স কম্পানি এই প্রজেক্টে লোন দিতে চায় না। এ কারণে সফটওয়্যার কম্পানিগুলো বড় ধরনের কাজগুলো নিতে এবং করতে পারে না।



বিবার্তা : গত বছরের বেসিস সফটএক্সপো তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কি ধরনের প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন?


মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল : সফটওয়্যার মেলার প্রভাব অন্য মেলার মতো ঠিক তখনই পড়ে না, এর প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদী। গার্মেন্টসসহ আমাদের দেশীয় কম্পানিগুলো আমাদের কাছে আসছে তাদের কম্পানিগুলোকে অটোমেশন করতে। দেশীয় অনেক কম্পানি ভাবতো তাঁরা বাইরে থেকে প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে কাজ করবে। কিন্তু এই মেলার ফলে অনেকেই এখন জানতে পারছে যে আমরা আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে সক্ষম। তাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে এবং সফটওয়্যার কম্পানিগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কাজ করছে। এই মেলার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে যে, আইটি নিয়েও ক্যারিয়ার গড়া যায়।


বিবার্তা : এবারের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যটা তাহলে কী?


মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল : বেসিস সফটএক্সপোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা সরকারের কাছে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা। মেলায় সবাই আসবে, দেখবে এবং জানবে যে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা দক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান ও সফটওয়্যার প্রস্তুত করতে সক্ষম। তারা শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরে ইউরোপ-আমেরিকায়ও কাজ করছে। সফটএক্সপোর মাধ্যমে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর আস্থা বহুগুণ বাড়বে বলেই বিশ্বাস আমার।



বিবার্তা : এই আসর থেকে আপনাদের প্রত্যাশা কি?


মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল : প্রত্যাশা অনেক। আমরা চাই নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সরকারকে সাহায্য করতে। সরকার তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়নে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। সফটওয়্যারের যে ৩০টি পলিসি আছে ওই জায়গা নিয়ে কাজ করতে চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে পলিসি আরো পরিমার্জিত করে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায় বেসিস।


এ ছাড়াও আমরা আধুনিক টেকনোলজি নিয়ে আলোড়ন ফেলতে চাই। আমরা যে টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছি এখন কিন্তু তা আর নেই। বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা এই বিষয়গুলো জানাতে চাই। এই বিষয়গুলো জানানো হলে, আমাদের দেশের কম্পানিগুলো এবং শিক্ষার্থীরা তা বুঝতে এবং লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।


বিবার্তা : চারদিনব্যাপী প্রদর্শনীতে কি কি কার্যক্রম থাকছে?


মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল : প্রদর্শনী এলাকাকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রয়েছে সফটওয়্যার সেবা প্রদর্শনী জোন, উদ্ভাবনী মোবাইল সেবা জোন, ডিজিটাল কমার্স জোন, আইটিইএস ও বিপিও জোন। হবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক ৩০টিরও বেশি সেমিনার, যেখানে বক্তব্য দেবেন শতাধিক দেশি-বিদেশি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।


দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্যে থাকছে বি-টুবি ম্যাচমেকিং সেশন। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই নিজেদের ব্যবসার প্রসার করতে পারবেন। পাশাপাশি থাকবে আইটি জব ফেয়ার জোন, যেখান থেকে দেশি-বিদেশি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের সুযোগ মিলবে। থাকছে ইনোভেশন জোন, যেখানে বেসিস স্টুডেন্ট ফোরামের শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রজেক্টগুলো তুলে ধরবেন। থাকবে মানবসদৃশ রোবট বঙ্গবীর, ব্যাংরোসহ আরো অনেক উদ্ভাবনী প্রজেক্ট।


কেউ যদি তার পণ্য উদ্বোধন করতে চায়, তার ব্যবস্থাও থাকছে।



বিবার্তা : কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেও কেন ছাত্র-ছাত্রীরা সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি পাচ্ছে না?


মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল : দেখা যায় যে, ছাত্র-ছাত্রীরা কম্পিউটার সায়েন্স পড়ছে কিন্তু তারা তাদের বিষয়গুলো বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে না। কারণ, তাদের কারিকুলাম ও কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিষয়ের কোনো মিল নেই। কারিকুলামগুলো যদি ইন্ডাস্ট্রির সাথে বসে ঠিক করা হয় তাহলে বাস্তবে তাকে কাজে লাগানো সম্ভব। অলরেডি আমরা এটা নিয়ে একাডেমি ও ইন্ডাস্ট্রির সাথে বসেছি এবং কাজ করছি। ফাইনাল ইয়ারে একজন স্টুডেন্ট ইন্টার্নশিপ করে। এটা তার পরীক্ষার একটি অংশ। কিন্তু আমরা কাজ করছি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাটাচমেন্ট নিয়ে, যা একজন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন স্টুডেন্ট যে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবে তার পুরা এক বছরের একটি অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে। এই ব্যবস্থাটা যদি থাকত তাহলে একজন স্টুডেন্ট বুঝতো যে তার কি ধরনের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com