শিরোনাম
‘শিগগিরই ডিসিএল ল্যাপটপ ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টের কাজ শুরু’
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:৫১
‘শিগগিরই ডিসিএল ল্যাপটপ ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টের কাজ শুরু’
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

''১৯৯৮ সালে দেশে আমরাই প্রথম ড্যাফোডিল ডেস্কটপ পিসি নিয়ে দেশীয় ব্র্যান্ড শুরু করি। তখন আমাদের কোনো ল্যাপটপ ছিল না। স্টুডেন্টদের টার্গেট করে ডেস্কটপ পিসি নিয়েই শুরু হয় আমাদের দেশীয় ব্র্যান্ডের যাত্রা। তবে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আইসিটি মার্কেটে আমাদের ডেস্কটপ পিসির যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং মার্কেট শেয়ারিংয়ে বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে।''


সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের (ডিসিএল) কার্যালয়ে বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার জাফর আহমেদ পাটওয়ারী।


দীর্ঘ আলাপে তিনি জানান ড্যাফোডিল ডেস্কটপ পিসি থেকে কীভাবে ডিসিএল ল্যাপটপ, ডিসিএল মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট বাজারজাত করা শুরু করে। ডিসিএল ব্র্যান্ডের এসব ডিভাইস ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিক নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিবার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরছেন- উজ্জ্বল এ গমেজ।


বিবার্তা : শুরুর দিকে মার্কেটে লোকাল ব্র্যান্ডের অবস্থা কেমন ছিল?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : ড্যাফোডিল ডেস্কটপ পিসি নামে আমাদের দেশীয় ব্র্যান্ডের যাত্রা শুরু হলেও পরে ল্যাপটপ বাজারজাত করা শুরু করি। তখন ফ্লোরা পিসি নামে একটা ব্র্যান্ড মার্কেটে আসছিল। অন্যদিকে ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে দোয়েল পিসি ল্যাপটপ যাত্রা শুরু করে। দোয়েলকে নিয়ে আমরা অনেক আশাবাদী ছিলাম। দেশীয় ব্র্যান্ড দোয়েল যদি দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়, সফল হয়, তাহলে আমরা যারা ছোট পরিসরে দেশীয় ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছি আমাদের একটা বড় প্লাটফর্ম তৈরি হয়ে যেতো, দেশীয় ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হয়ে যেতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, মার্কেটে দোয়েল সেই আশানুরূপ অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। এটা প্রযুক্তিপণ্য মার্কেটে দেশীয় ব্র্যান্ড ল্যাপটপের জন্য একটা নেতিবাচক প্রভাব হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থতিতে দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে ড্যাফোডিল ডেস্কটপ পিসি মার্কেটে শুরু থেকেই একটা ভালো অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। অবশ্য ডেস্কটপ পিসি মার্কেটে যেভাবে স্থান দখল করে আছে, ল্যাপটপে সেটা করতে পারিনি। দোয়েল সফল না হওয়ার কারণেই মার্কেটে অন্য দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ফলে সফলও হতে পারেনি।



বিবার্তা : দেশীয় ব্র্যান্ডের ল্যাপটপে ক্রেতাদের আগ্রহ নেই কেন?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : এটা অনেকটা নির্ভর করে ক্রেতার রুচি, পছন্দ ও ল্যাপটপ ব্র্যান্ডের আস্থার উপর। আমাদের দেশে ল্যাপটপের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড আর দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে প্রাইসিংয়ে তেমন পার্থক্য থাকে না। অবশ্য পার্থক্য থাকার কোনো সুযোগ নাই। কেননা টেকনোলজিক্যাল দিক থেকে দেখা যায় অনেকটা একই। আমরা সবাই ইন্টেল বেইজ প্রসেসর ব্যবহার করি। ল্যাপটপ মার্কেটে সবাই শতভাগই এই প্রসেসর ব্যবহার করি। একটা আন্তর্জাতিক মানের ল্যাপটপ ব্র্যান্ড ডেল, এইচপি ইন্টেলের প্রসেসর, র‌্যাম, হার্ডডিস্ক এসব যা ব্যবহার করে লোকাল ব্র্যান্ডও তা-ই ব্যবহার করি। এইচপি, ডেল যেমন ওএম প্রোডাক্ট আমাদের ড্যাফোডিল পিসি ল্যাপটপ, দোয়েল ল্যাপটপও ওএম প্রোডাক্ট। এখন প্রাইস গ্যাপ না থাকাতে কাস্টমারও চিন্তা করল যে, আমরা ৪০ হাজার টাকা দামের একটা ল্যাপটপ নেব তো এইচপির দামও যা, একটা লোকাল ব্র্যান্ডের দামও হয় তো ৫০০-১০০০ এমন কি ২০০০ টাকা কম। এই কমের জন্যও কেউ দেশীয় ব্র্যান্ড নিতে চায় না। নেয় বিদেশী ব্র্যান্ডই। যার জন্য দেশী ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের বাজারের এই অবস্থা।


বিবার্তা : মার্কেটে হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে ওয়ালটন এগিয়ে কেন?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : এর কারণটা হলো, তারা বিদেশ থেকে যে র ম্যাটারিয়ালস ইম্পোর্ট করে তাতে সরকারের পক্ষ থেকে ২০%-৩০ ট্যাক্স ফ্রি দেয়া হয়। আর একই প্রোডাক্টটা যখন ব্র্যান্ড হয়ে আসে তখন ৩০% ট্যাক্স দিতে হয়। এই ৩০% গ্যাপেই মার্কেটে ওয়ালটন ১০ মাইল এগিয়ে থাকে। এই গ্যাপের কারণেই ওয়ালটন মার্কেটে দ্রুত প্রস্ফুটিত হয়েছে। শুধু ওয়ালটনই না, দেশে আরো কয়েকটি কম্পানি একইভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। র ম্যাটারিয়ালস ইম্পোর্টের ক্ষেত্রে সরকার যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে এটাই এই জায়গাটা পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছে।



বিবার্তা : আইটি পণ্যের বাজারে সরকারের ভূমিকা কেমন?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : এখন অবশ্য সরকার লোকাল ব্র্যান্ডকে প্রোমোট করার এবং তাদেরকে বিভিন্ন সুবিধা দেবার চিন্তা করছে। এটা আশার কথা। যেটা হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে সরকার করে আসছে। কিন্তু আইটি পণ্যের ক্ষেত্রে এটা এখনো চিন্তার মধ্যেই আছে। কম্পউটারের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে বিষয়ট বুঝতে একটু বেশি সময় লেগে গেছে। এখন সরকার এ বিষয়ে চিন্তা করছে। দেশীয় ব্র্যান্ড প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে উৎসাহিত করছে।


বিবার্তা : আইটি পণ্যের বাজার ধরে রাখার জন্য করণীয় কী বলে মনে করেন?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : এখন হোম অ্যাপ্লায়েন্সের মতো কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও সরকারকে একই জিনিসটা অ্যাপ্লাই করতে হবে। বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোতে ট্যাক্স বসাতে হবে। আর লোকাল ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে তাদের র ম্যাটেরিয়ালস আমদানির ক্ষেত্রে যদি ট্যাক্স ফ্রি পায় তাহলে ব্যবসায় একটু সাশ্রয়ী হবে। কেননা বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর যে ইনভেস্টমেন্ট সেখানে একটা লোকাল ব্র্যান্ড তো কোনোদিনই যেতে পারবে না। তাছাড়া ২০ বছরের পুরানো একটা বিদেশী ব্র্যান্ডের সাথে লোকাল একটা নতুন ব্র্যান্ড মার্কেটে এসে যুদ্ধ করে তো টিকতে পারবে না। ড্যাফোডিল পিসির বেলায়ও তাই হয়েছে।


বিবার্তা : আপনাদের ডিসিএল মোবাইল ফোন রয়েছে। এবিষয়ে যদি কিছু বলতেন. . .


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : মার্কেটে লোকাল ব্র্যান্ড দোয়েল সফল হতে পারেনি। একইভাবে ড্যাফোডিল পিসি ল্যাপটপ নিয়ে ‍যখন আমরা মার্কেটে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলাম না তখন চিন্তা করলাম কীভাবে মার্কেটে আবার নতুন করে যাওয়া যায়। ২০১৬ সালে ড্যাফোডিল পিসি ল্যাপটপ বন্ধ রেখে আমরা ডিসিএল নামে একটা মোবাইল নিয়ে মার্কেটে যাই। এতে আবার কাস্টমারদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পেলাম। এটা আমাদের খুব আশান্বিত করল। খুব ভালোভাবেই ক্লিক করল আমাদের ব্র্যান্ডটা।


বিবার্তা : ড্যাফোডিল পিসি থেকে আবার ডিসিএল ল্যাপটপে এলেন কেন?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : ডিসিএল মোবাইল মার্কেটে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় আমরা চিন্তা করলাম ড্যাফোডিল পিসি নামে যে ল্যাপটপটা শুরু করেছিলাম সেটা এখন ডিসিএল নামেই আবার চালু করবো। সে অনুসারেই ২০১৭ সালের শেষের দিকে আমরা ডিসিএল নামের ল্যাপটপ ব্র্যান্ডটা মার্কেটে লঞ্চ করি। ডিসিএল ল্যাপটপটা ডিসিএল মেবাইলের মতোই মার্কেটে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিপণ্য অভাবনীয় উন্নতির ফলে চারিদিকে এখন ল্যাপটপের জয়জয়কার। মার্কেটে ল্যাপটপের পাশাপাশি অনেকেরই ডেস্কটপ বিক্রি কমে গেছে। কিন্তু সে তুলনায় আমাদের ডেস্কটপ পিসি মার্কেটে বিক্রি কোনোভাবে কমেনি। আগের মতোই আছে।



বিবার্তা : বর্তমানে দেশে লোকাল ব্র্যান্ডের অবস্থান কেমন?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : যে কোনো লোকাল ব্র্যান্ড মার্কেটে গ্রহণযোগ্যতা পেতে একটু সময় লাগে। এক্ষেত্রে এখন দেশের মার্কেটের পরিবেশ অনেকটা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ওয়ালটন লোকাল ব্র্যান্ড হিসেবে বেশ এগিয়ে রয়েছে। আরো কয়েকটা লোকাল ব্র্যান্ড তাদের কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করছে। লোকাল ব্র্যান্ডকে টিকিয়ে রাখতে সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমার ধারণা আস্তে আস্তে এভাবে দেশে লোকাল ব্র্যান্ডের জন্য একটা ভালো পরিবেশ তৈরি হবে।


বিবার্তা : ওয়ালটন যেমন ল্যাপটপের কারখানা ‍শুরু করেছে, ড্যাফোডিলের কী এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : অবশ্যই আছে। ২০১৮ সালের মধ্যেই ডিসিএল ব্র্যান্ডের মোবাইল ও ল্যাপটপের ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।


বিবার্তা : আপনাদের টার্গেট ক্রেতা কারা?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : ড্যাফোডিল গ্রুপ কিন্তু মার্কেটে পরিচয় হলো একটা এডুকেশন ভেঞ্চার হিসেবে। আমরা বলি আইটি অ্যান্ড এডুকেশন। ডিসিএল ব্র্যান্ডের শুরুটাই ছিল স্টুডেন্টদের টার্গেট করে। আমরা এই জাগায়টাতেই বেশি কাজ করতে চাই। তাই স্টুডেন্টের প্রতি সবচয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে অন্যদের দিকেও যে গুরুত্ব দেই না এমন না।



বিবার্তা : ডিসিএল ব্র্যান্ডের মোবাইল ও ল্যাপটপে স্টুডেন্টের জন্য কি কি সুবিধা থাকছে?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : শুরু থেকেই আমরা স্টুডেন্টদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছি। দেশে আমরাই প্রথম স্টুডেন্টদের জন্য ডেস্কটপ পিসি, ল্যাপটপ ও মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে ইএমআই সুবিধা দিয়েছি। ইএমআই ইনস্টলমেন্টের মাধ্যমে আমরাই প্রথম ডেস্কটপ পিসি ও ল্যাপটপ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এক্ষেত্রে স্টুডেন্টদের উপর বাড়তি কোনো ইন্টারেস্টের বোঝা, চার্জ বা ব্যাংক চার্জ চাপিয়ে দেই না। শুধু প্রোডাক্টের যে এমআরপি থাকে তার উপরে একটা কমিটমেন্ট এনসিওর করা যে আমাদের পেমেন্টটা দিতে হবে। এই দায়িত্ব নিতে হবে তার গার্ডিয়ান বা তার প্রতিষ্ঠানকে।


বিবার্তা : ডিসিএল এর বিক্রয়োত্তর সেবা কেমন?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : ডিসিএল ব্র্যান্ডের মোবাইল ও ল্যাপটপে আমরা প্রথম দুই বছর সার্ভিস ওয়ারেন্টি দিচ্ছি। এটা একটা সাহসী উদ্যোগ। আমরা প্রত্যেকটা প্রোডাক্ট ভালো করে কোয়ালিটি পরীক্ষা করে মার্কেটে দিচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস আছে যে এই প্রোডাক্টে সহজে সমস্যা হবে না। তবুও আমরা দুই বছর সার্ভিস সাপোর্ট দিচ্ছি। আমাদের টার্গেট হলো ক্রেতার হাতে এমন প্রোডাক্ট তুলে দেয়া যাতে সার্ভিস সাপোর্ট কম লাগে। ডিসিএল ব্র্যান্ডের মোবাইল ও ল্যাপটপের সার্ভিস সাপোর্ট আমাদের চ্যানেল পার্টনারদের মাধ্যমে দেয়া হয়ে থাকে।


বিবার্তা : ভবিষ্যতে ডিসিএলকে কীভাবে দেখতে চান?


জাফর আহমেদ পাটওয়ারী : ডিসিএল ব্র্যান্ড সব সময় প্রোডাক্টের হাই কোয়ালিটি বজায় রেখে একটা প্রোডাক্ট ক্রেতার হাতে তুলে দিতে চায়। আগামীতে ডিসিএল ব্র্যান্ডের সব প্রোডাক্ট আসবে বিদেশী ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, প্রাইসিং ও সার্ভিস সাপোর্ট ঠিক রেখেই। আমরা সেই আস্থার জায়াগাটা তৈরির জন্য কাজ করছি। আশা করছি ক্রেতারা বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর কোয়ালিটি যাচাই ও তুলনা করে আমাদের প্রোডাক্টটা কিনবে।


বিবার্তা/উজ্জল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com