শিরোনাম
জাপার এবার মিশন হলো নতুন প্রজন্ম : তাজ রহমান
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৫৯
জাপার এবার মিশন হলো নতুন প্রজন্ম : তাজ রহমান
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে কখনই গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা হয়নি। ২৭ বছরেও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষগুলো এরশাদের স্বর্ণযুগ দেখেছে। তবে নতুন প্রজন্মকে আমাদের সম্পর্কে আরো জানাতে হবে। জাপার এবার মিশন হলো নতুন প্রজন্মকে জানানো।


মঙ্গলবার বনানীতে নিজের ব্যবসায়িক কার্যালয়ে বিববার্তার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তাজ রহমান এসব কথা বলেন।


বিবার্তা : দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন?


তাজ রহমান : পরিস্থিতি আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল মনে হলেও নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জনমনে শংকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আবারও দুটি দল মুখোমুখি অবস্থানে। রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তভাবে রাজনীতি করতে পারছে না, যা গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় পড়ে না। রাজনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সহঅবস্থান। যা আমাদের মাঝে নেই, বিশেষ করে বিএনপি-আওয়ামী লীগের মাঝে একেবারেই নেই। এদের রাজনীতি গণমুখী নয়, ক্ষমতামুখী।


বিবার্তা : আপনার দৃষ্টিতে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা কী সঠিকভাবে হচ্ছে?


তাজ রহমান : বাংলাদেশে কী কখনও গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা হয়েছে? ১৯৯০ সালে আন্দোলন করলো গণতন্ত্রের জন্য। ২৭ বছরে কি দেশে কোনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? জাতির কাছে এটাই আজ আমাদের প্রশ্ন। বর্তমান সরকারের সরকারের উদ্দেশে বলবো, উন্নয়নের সাথে মানুষের মতপ্রকাশ ও সুশাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।


বিবার্তা : আপনার দৃষ্টিতে সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা কী?


তাজ রহমান : আমার মতে ব্যর্থতার চেয়ে সফলতাই বেশি। বিশেষ করে জঙ্গীদমনে সরকারের ভূমিকা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সরকার সফলতা দেখিয়েছে।


তবে সন্ত্রাস-গুম-হত্যা-দুর্নীতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে। গণতন্ত্রের চর্চা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। বিশেষ করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লাগামহীন টেন্ডারবাজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।


বিবার্তা : বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?


তাজ রহমান : আমার দুঃখ হয়, এত বড় একটি দল হওয়া সত্বেও সরকারের বিরুদ্ধে তারা কোনো ধরণের আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা (বিএনপি) বলে, সরকারের অত্যাচারের কারণে মাঠে নামতে পারছি না! অথচ বিএনপি আমাদের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে ৬৪টি মামলা দিয়েছে। আমাদেরকে জেলে থেকে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছিলো। সকল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছিলো, লুটপাট করেছিলো আমাদের বাড়ী-ঘর। তারপরও আল্লাহর রহমতে আমরা আজও শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে আছি। অথচ মাত্র কয়েক বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেই তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে “যেমন কর্ম তেমন ফল”।


বিবার্তা : আওয়ামী লীগ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?


তাজ রহমান : আওয়ামী লীগ সম্পর্কে কিছু বলা মানে হচ্ছে, 'সত্যি বললে মা মাইর খায় আর মিথ্যে বললে বাবা হারাম খায়’। বঙ্গবন্ধুর পর আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, প্রতিটি বারই এরশাদ তথা জাতীয় পার্টির সমর্থনে এসেছে। কিন্তু ক্ষমতায় আসীন হয়ে তারা এ কথা বেমালুম ভুলে যায়। আমরা শুধু দিয়েই গেলাম, বিনিময়ে কিছুই পেলাম না। তবু দোয়া করি, তারা (আওয়ামী লীগ) ভালো থাকুক।


বিবার্তা : আপনাদের অনেকে ''গৃহপালিত বিরোধীদল'' বলে...


তাজ রহমান : যারা সমালোচনা করার তারা আজীবনই করবে। আমরা কী করে গৃহপালিত বিরোধীদল হলাম? রাষ্ট্রীয় পদ আছে প্রায় ৩৭০০টি, আমাদের দেয়া হয়েছে ৪টি। এরা ক্ষমতায় এসে আমাদের নির্বাচিত কয়েকজন এমপিরও সংসদ সদস্যপদ বাতিল করেছেন। রংপুর এরশাদের ঘাঁটি হওয়া সত্বেও তারা রংপুরকে তাদের ঘাঁটি বানানোর চেস্টা করছেন। অনেক এমপি সরকারীদলের লোকের কথা না শুনলে উন্নয়নের বরাদ্দ পাচ্ছেন না। আমরা গৃহপালিত হলে পল্লীবন্ধু এরশাদের মামলাগুলো তো প্রত্যাহার হলো না! তবে আমাদের দল থেকে তিন জন মন্ত্রী থাকায় জনমনে আমাদের নিয়ে বিভ্রান্তি আছে, তা অস্বীকার করছি না।


বিবার্তা : আগামীতে কী আপনারা জোটগতভাবে নির্বাচন করবেন ?


তাজ রহমান : আসলে শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত-বৃটেনসহ বিশ্বের অনেক দেশেই জোটগত নির্বাচনের নজির আছে। জোটগত নির্বাচন খারাপ কিছু নয়, তবে জোট করে নির্বাচন করলে অনেক আসনে সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে যায়। জাতীয় পার্টি নিজস্ব জোট সম্মিলিত ঐক্যজোটের ব্যানারে ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।


বিবার্তা : আপনার দল সম্পর্কে কিছু বলুন?


তাজ রহমান : জাতীয় পার্টি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। তাছাড়া মানুষ আওয়ামী লীগ-বিএনপির শাসনে অতিষ্ঠ। আমাদের দেশে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষগুলো এরশাদের শাসনামলে ফিরে যেতে চায়। কারণ তারা এরশাদের স্বর্ণযুগ দেখেছে, তবে নতুন প্রজন্মকে আমাদের সম্পর্কে আরো জানাতে হবে। জাপার এবার মিশন হলো নতুন প্রজন্মকে জানানো। বঙ্গবন্ধু ছাড়া যেমন স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন রচিত হবে না তেমনিভাবে এরশাদ ছাড়া এদেশের উন্নয়নের ইতিহাস রচিত হবে না।


বিবার্তা : আপনার নির্বাচনী এলাকায় আপনি ও আপনার দলের কী অবস্থা?


তাজ রহমান : আমার নির্বাচনী এলাকা জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। আমি নির্বাচন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। এলাকার মাটি ও মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক। তাছাড়া এটি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। সঠিকভাবে নার্সিং করতে পারলে অবশ্যই আমি এ আসনটি পল্লীবন্ধু এরশাদকে উপহার দিতে পারবো।


১৯৯১ সালে এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাজ রহমান। তিনি সে সময় সিলেট জেলা ছাত্রসমাজের সদস্য-সচিবের ভূমিকা পালন করেন। এরশাদ মুক্তি আন্দোলন করতে গিয়ে একাধিকবার কারাবরণও করেন তিনি। এরপর পর্যায়ক্রমে ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, যুব সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা, বৃটেন জাপার সদস্য সচিব, জাপার কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং সর্বশেষ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। সদাহাস্যোজ্জ্বল তাজ রহমান দলের নেতাকর্মীদের খুবই প্রিয়ভাজন। বিশেষ করে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাজ রহমানেকে ব্যক্তিগতভাবে খুবই মূল্যায়ন করেন। তাজ রহমান রাজনীতির পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ীও। তিনি লন্ডন থেকে প্রকাশিত লন্ডন বাংলা টাইমসের প্রধান সম্পাদক। গ্লোবাল ভিলেজ কন্সট্রাকশন, এমটি গ্রুপ এবং টি কমিউনিটেশনের স্বত্বাধিকারী।


বিবার্তা/বিপ্লব/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com