শিরোনাম
‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি’
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০১৭, ১৬:৪৭
‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি’
তৌফিক ওরিন
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহ-সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী নুরজাহান আক্তার সবুজ। জন্ম ১৯৭৮ সালের ৫ আগস্টশরিয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার একরাজনৈতিক পরিবারে। ফলে ছোটবেলা থেকেই মানুষের সেবা করার মানসিকতা জন্মাতে থাকে। স্কুলজীবন থেকেই লালন করেন মুজিব আদর্শ। আর উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির পর জড়িয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে।


পরবর্তীকালে রাজধানীর ইডেন কলেজে পড়ার সময়ে কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান। এরপরে লিয়াকত-বাবুর নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন।


শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিবার্তা কার্যালয়ে বসে তাঁররাজনীতিতে আসা, রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বসহ সংগঠন ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন বিবার্তা২৪.নেট-এর সঙ্গে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌফিক ওরিন


বিবার্তা : আপনার রাজনীতিতে আসার গল্পটা কেমন?


সবুজ : আমি একজন আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমার বাবার পরিবার ও মায়ের পরিবার উভয়ই আওয়ামী রাজনীতির সাথে দীর্ঘ দিন সক্রিয়ভাবে জড়িত। আমি দেখেছি, আমার নানা আমৃত্যুজাজিরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালোবেসে ও তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি।

বিবার্তা : রাজনীতির শুরুর দিকের সময়টা আপনার জন্য কেমন ছিল?


সবুজ : আমি যখন রাজনীতিতে আসি ওই সময়টা মেয়েদের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ প্রতিকূল ছিল। কারণ, বিএনপির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে হয়েছে। ১৯৯৩-৯৪ সেশনে ইডেন কলেজে ভর্তির পর ওই সময়টা মোটেও সুখকর ছিল না। ইডেনের তৎকালীন ভিপি হেলেন জেরিন খানছাত্রলীগকর্মীদের ওপর ব্যাপকহারে নির্যাতন করতো। হলে আমাদের সিটে অন্য ছাত্রীদের তুলে দিত। জিনিসপত্র নষ্ট করে দিত। বই, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ এমনকিসার্টিফিকেট পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছিল ছাত্রদলের মেয়েরা। হোস্টেল সুপারকে দিয়ে বারবার নোটিশ পাঠিয়েছে। ভয় ভীতি দেখিয়েছে। এরকম অবস্থায় টিকে থেকে রাজনীতি করেছি।




বিবার্তা : বিরোধী দলের এত প্রতিকূল অবস্থার ভেতরেও কি কোনো স্মরণীয় মুহূর্ত নেই?


সবুজ : স্মরণীয় মুহূর্ত যা আছে সব বিরোধী দলে। সরকার ক্ষমতায় থাকলে স্মরণীয় মুহূর্ত সচরাচর তৈরি হয় না। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলো রাজপথ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। দল বিরোধীতে থাকাকালেআমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তটি আসে। আমার জীবনের সেই স্মরণীয় মুহূর্ত হচ্ছে আপাকে (শেখ হাসিনা) প্রথম দেখা। একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এসেছিলাম হোসনে আরা হাসু আপার (সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ইডেন ছাত্রলীগ) সাথে। তখন আমরা প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বিশাল সমাবেশের ওই দিন খুবই বৃষ্টি হচ্ছিল। ব্যাপক বৃষ্টিতে লাল গালিচার রঙে আশপাশ লাল হয়ে গিয়েছিল। ওই সময়ে আমরা যে কষ্ট করছিলাম সেটা আপাকে দেখার পর সুখে পরিণত হয়েছিল। আপাকে দূর থেকে দেখতে পেয়েছি, এটাও একজন কর্মীর কাছে অনেক গর্বের।



বিবার্তা : রাজনীতিতে আসার পর আওয়ামী রাজনীতির অতীত ও বর্তমান আপনি কিভাবে মূ্ল্যায়ন করবেন?


সবুজ : বিরোধীদলের রাজনীতি আমাদের বর্তমানরাজনৈতিক অবস্থার সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, আমরা রাজনীতিতে এসেই নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমরা হলের বাইরে থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছি। ওই সময়ে অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। হল থেকে ২/৩ বার বের করে দিয়েছে। একজন মেয়ে হয়ে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হয়েছে। ২০০১ সালের পর একদিন ভোর রাতে নাসির উদ্দিন পিন্টু সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ইডেন করেজের হল আক্রমণ করে। তারা সদর দরজা ভেঙে হলে ঢুকে যায়।


আমরা আমাদের রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদেরকে নিয়ে এক রুমের বাসা ভাড়া করে থেকেছি। বাইরে থেকে আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। আমরা তখন ভাত পর্যন্ত চিন্তা করে খেতাম, পরের দিনের কথা ভেবে। ওই সময়ের অনেকেই আজ হারিয়ে গেছে। এত কষ্ট করে যারা রাজনীতি করেছে তাদের অনেককেই যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি নতুনদের ভিড়ে। নতুনরা আসবে, নতুন পুরনোসমন্বয় করে রাজনীতি হবে। আমি মনে করি, রাজনীতি একটি মহান ব্রত। আর রাজনৈতিক সংগঠন কিভাবে সমাজের উন্নয়নে কাজ করবে, কীভাবে মানুষকে আরো উন্নত জীবন পরিচালনায় সাহায্য করবে এইগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।



বিবার্তা : বর্তমানে আপনার রাজনৈতিক অবস্থানকেমন?


সবুজ : আমার এলাকা শরিয়তপুর-১ (জাজিরা-পালং) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছি। আমি প্রায় ৪/৫ বছর ধরে বিভিন্ন রকম সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমার এলাকার পদ্মাপাড়ে কুন্ডুচর নামক স্থানের অনেক অংশ পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। আমি ওই সব গৃহহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি তাদের মাঝে নগদ অর্থসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি। আমার এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক উৎসব যেমন ঈদ, পূজা বা অনান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে মানুষের পাশে থেকে তাদের আনন্দকে পরিপূর্ণ করতে সাধ্যমত চেষ্টা করি।


দীর্ঘ সময় রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু কখনো দলের কাছ থেকে কোনো সাহায্য আশা না করে সংগঠনকে সমসময় সমৃদ্ধ করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে গেছি।



বিবার্তা : আগামীতে নৌকা প্রতীককে পুনরায় বিজয়ী করতে কী ধরণের কাজ করতে হবে বলে আপনি মনে করেন?


সবুজ : কয়েক দিন আগে একটা জরিপে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দেশের জনগণের আস্থা ৭২ শতাংশ। নির্বাচনের সময় এই ৭২ শতাংশের কতজন টিকবে, এটা সত্যিই বলা মুশকিল। আর এটাও আজ স্বীকৃত যে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা দলের উর্ধ্বে। আমাদের দল ও নেত্রীর জনপ্রিয়তাকে সমন্বয় করে নির্বাচনে ইতিবাচকফলাফলনিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।


আমাদের সরকার জনকল্যাণমুখীঅনেক কাজ করেছে। এটা ভোটের রাজনীতি। জনগণ যাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বা জনগণ যাদের সমর্থন দেবে, তারাই সরকার গঠন করবে। যেহেতু সরকার উন্নয়নমূলক ও জনকল্যাণমূলক অনেক কাজ করেছে, এগুলো আমাদের বেশি করে প্রচার করতে হবে। মানুষ বুঝে থাকলে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।


বিবার্তা/ওরিন/মৌসুমী


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com