শিরোনাম
‘নির্বাসনের কথা আমি ভাবতেই পারি না’
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:১৭
‘নির্বাসনের কথা আমি ভাবতেই পারি না’
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের নাটক ও চলচ্চিত্র যার অভিনয়ে আলোকিত হয়েছে, সেই শর্মিলী আহমেদ নিজেকে অভিনয়ের মায়াজালে এমনভাবে জড়িয়েছেন যে, অভিনয়জগত ছাড়া তো পরের কথা, ছাড়ার কথা ভাবতেও পারেন না তিনি।


শর্মিলী আহমেদ অভিনয় শুরু করেন মাত্র চার বছর বয়স থেকে। ১৯৬২ সালে রাজশাহী বেতারে অডিশন দিয়ে প্রথম অভিনয় করেন 'তৈমুর লং' নাটকের নায়িকা চরিত্রে। এরপর আর থেমে থাকেননি তিনি। একের পর এক অভিনয় করেছেন মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রে।


চলচ্চিত্রে প্রথমে তিনি অভিনয় করেছেন নায়িকা চরিত্রে। হাতেগোনা ক'টি ছবিতে নায়িকা ছিলেন শর্মিলী আহমেদ। নায়িকা থাকা অবস্থাতেই ১৯৭৬ সালে 'আগুন' ছবিতে প্রথমবারের মতো মায়ের চরিত্রে অভিনয় করলেন। মমতাময়ী মায়ের চরিত্রে দর্শক তাকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে। এরপর তাকে এই চরিত্রে বার বার হাজির হতে হয়েছে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে।


শর্মিলী আহমেদ অভিনীত ছবি 'ঠিকানা', 'আবির্ভাব', 'পলাতক' ও 'আলিঙ্গন' নির্মিত হয়েছিল ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় চার শ' নাটক আর দেড় শ' ছায়াছবিতে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এভাবেই তিনি জাতীয় মায়ের একটা অনানুষ্ঠানিক উপাধি পেয়ে গেছেন।


সম্প্রতি এই গুণী শিল্পী মুখোমুখি হন বিবার্তা২৪ডটনেটের। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক।



বিবার্তা : বিটিভির শুরু থেকেই কাজ করছেন। আপনার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজকের নির্মাতাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কীরকম?


শর্মিলী আহমেদ : বিটিভিতে যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষ। সে সময় প্রযোজকেরা সময় নিয়ে ধরে ধরে কাজ করতেন। টিভি নাটকে আমার হাতেখড়ি কিন্তু তাদের কাছ থেকেই। কীভাবে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতে হয়, ভালো কাজ করতে হলে কী করতে হবে, খুঁটিনাটি অনেক কিছুই আমি তাদের কাছ থেকে শিখেছি। তারপর প্রজন্মের বদল হয়েছে। সবাইকে দেখেছি ভালো কাজের প্রতি আন্তরিক থাকতে। এখন নতুন ছেলেমেয়েরা কাজ করছে। এরাও সুন্দর কাজ করে। এখন তো নতুনরা ঘরে বসেই সারা পৃথিবীর কাজ দেখে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারছে সহজেই। আমাদের সময় কিন্তু সেই সুযোগ ছিলো না। এখন কারিগরি সুবিধা অনেক। নতুনরা ইচ্ছে করলেই ভালো কাজ করতে পারছে। যদিও অনেকে আবার তা পারছেও না।


বিবার্তা : নতুন প্রজন্মের কার কার সঙ্গে কাজ করে আপনার ভালো লেগেছে?


শর্মিলী আহমেদ : তৌকীর আহমেদের সঙ্গে কাজ করে আমি আনন্দ পেয়েছি। আমার মনে হয়েছে, অভিনেতা তৌকীরের চেয়ে পরিচালক তৌকীর বেশি সমৃদ্ধ। সে প্রচুর পড়াশোনা করে। অভিনয় ক্যামেরা মেকিং অনেক ভালো বোঝে। অমিতাভ রেজার সঙ্গে যদিও আমার খুব বেশি কাজ করা হয়ে ওঠেনি, এরপরও আমি বলবো, সে ভালো কাজ করে। মেগা ধারাবাহিক বন্ধন-এর প্রথম দিকে আমি তার সঙ্গে কাজ করেছি। ভালো লেগেছে অমিতাভের কাজের ধারা। গিয়াসউদ্দিন সেলিমও দারুণ কাজ করে। আফসানা মিমির সঙ্গে কাজ করেও আনন্দ পেয়েছি। এছাড়া নতুনদের আরও অনেকে ভালো কাজ করছে।



বিবার্তা : নারী-পুরুষ দুই রকম নির্মাতার সঙ্গেই আপনার কাজ হয়েছে। তাদের সঙ্গে কাজের কোনো পার্থক্য চোখে পড়েছে কী?


শর্মিলী আহমেদ : নারীদের পরিচালনায় কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি প্রতিটি বিষয়েই ওদের সজাগ দৃষ্টি। অভিনয় ঠিক হচ্ছে কিনা তা মনিটরে বসে দেখছে। লাইট ঠিক আছে কিনা, টেবিল ক্লথ ঠিক কিনা, সবকিছু নিখুঁত চায় ওরা। আফসানা মিমি, তারানা হালিম ও চয়নিকাদের সঙ্গে কাজ করে আমি দেখেছি পুরুষদের তুলনায় নিখুঁত সেটের বিষয়টি মেয়েরাই বেশি ভাবে। এর মধ্যে আবার আবুল হায়াতসহ আরও কয়েকজনও এসব বিষয়ে খেয়াল রাখেন।


বিবার্তা : আপনারা যে অভিনয়গুলো করেছেন এদেশের দর্শকরা এখনো তা মনে রেখেছেন এবং তার ব্যাপক প্রশংসাও করেন। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?


শর্মিলী আহমেদ : ভাল অভিনয় করলে তো সবাই প্রশংসা করবে, তাই না? আমাদের সময়ে অতো টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। আবার অভিনয়ের সাথে কম লোক জড়িত ছিলেন। তাছাড়া এখন ডিজিটাল যুগ। এ যুগের ছেলেমেয়েদের মনমানসিকতা আধুনিক চিন্তাধারার।



বিবার্তা : এখনকার সময়ে যারা অভিনয় করেন, তাদের অভিনয় থেকে আপনাদের সময়ের অভিনয়ের মান নাকি অনেক ভাল ছিল।


শর্মিলী আহমেদ : এখন যারা অভিনয় করছেন তারা একদিনে তো আর ভাল অভিনয় করবে না। অভিনয় করতে করতে একসময় তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এখানে প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকতে পারে তারাই ভালো করে।


বিবার্তা : এই যে যুগ যুগ ধরে অভিনয় করছেন। কখনো কি এ মাধ্যম ছেড়ে নির্বাসনে যেতে মন চায়নি?


শর্মিলী আহমেদ : না, এমনটি আমার কখনোই মনে হয়নি। আর তা এজন্য যে, চার বছর বয়স থেকে আমি অভিনয় করছি। অভিনয় আমার জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। আমি এ কাজে এমন অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, অভিনয় ছাড়া দিন কাটাতে আমার কষ্ট হয়। তাই নির্বাসনের কথা আমি ভাবতেই পারি না। আর পারবোও না কখনো।


বিবার্তা/অভি/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com