শিরোনাম
দেশের সফটওয়্যার বাজারে এখন তরুণদের রাজত্ব
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২১, ১৮:২৪
দেশের সফটওয়্যার বাজারে এখন তরুণদের রাজত্ব
সিনেসিস আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ চৌধুরী।
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

নিজস্ব ও দেশীয় প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের সফটওয়্যার তৈরি করা কোম্পানির নাম সিনেসিস আইটি লিমিটেড। সিনেসিস আইটি একটি নাম। একটি দেশীয় ব্র্যান্ড। দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুনামের সাথে নিজস্ব প্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সফটওয়্যার তৈরি করে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ই-গভর্নেন্স, ই-হেলথ অ্যান্ড টেলিহেলথ, কন্টাক্ট সেন্টার সল্যুউশন, টেন্ডার-বাজার ডটকমের মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এটি সিএমএমআই লেভেল ৩ সার্টিফাইড একটি আইসিটি প্রতিষ্ঠান। তথ্যঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া যথাযথভাবে পরিপালনের স্বীকৃতি হিসেবে আইএসও ২৭০০১:২০১৩ সনদ এবং আইএসও ৯০০১ অর্জন করেছে দেশীয় ব্র্যান্ড সিনেসিস আইটি। সরকারি ও বেসরকারি খাতে নিজস্ব সেবাগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি।


সম্প্রতি বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপকালে কথাগুলো বলেন সিনেসিস আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ চৌধুরী। আলাপে উঠে এসেছে সিনেসিস আইটির কার্যক্রম, সিবিভিএমপি সেবার নানান দিকসহ লোকাল মার্কেটের সফটওয়্যার ব্যবসায়ীদের বর্তমান হালচাল। আলাপের কিছু অংশ বিবার্তার পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো।



সিনেসিস আইটির কর্ণধার সোহরাব আহমেদ চৌধুরী।


বিবার্তা : বর্তমান দেশীয় সফটওয়্যার বাজার ও ব্যবসার অবস্থাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?


সোহরাব আহমেদ চৌধুরী : বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বেসিসের হিসেব মতে বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ এর বেশি ছোট-বড় সফটওয়্যার এবং আইটি কোম্পানি রয়েছে। এই সব কোম্পানিতে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি আইটি প্রফেশনাল কাজ করছে। এই ইন্ডাস্ট্রির আকার প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। বেশিরভাগ আইটি কোম্পানিই ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এবং কনটেন্ট ক্রিয়েশন, ডাটা প্রসেসিং এবং সফটওয়্যার মেইনটেনেন্সের কাজ করে। বেশির ভাগ কোম্পানি দেশের লোকাল মার্কেটে কাজ করছে। তবে বড় বড় কোম্পানিগুলো দেশের স্বার্থে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, ই-গভর্নেন্স এবং ই-লার্নিংয়ের কাজ করে যাচ্ছে। আমার মতে, দেশের আইটি সেক্টরে একটি বুম হয়েছে যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমরা এই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং দেশের লোকাল মার্কেট ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জনে সক্ষম হবো।


বিবার্তা : দেশীয় বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে সফটওয়্যার আমদানি করে কেন?


সোহরাব আহমেদ চৌধুরী : আসলে দেশের আইটি কোম্পানিগুলো সম্পর্কে বড় বড় কোম্পানিগুলোর ধারণা এখনো আগের মতোই রয়ে গেছে। অনেকেরই ধারণা দেশে তৈরি প্রযুক্তি হয়তো সাস্টেইনেবল না, অথবা চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম নয়। ফলে তারা দেশীয় প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহী নয়। অথচ আমরা দেশীয় প্রযুক্তিতে এমন কিছু সফটওয়্যার আনতে সক্ষম হয়েছি, যা সাশ্রয়ী এবং ক্ষেত্র বিশেষে অনেক আধুনিক ও শক্তিশালী। যেমন, আমাদের কল সেন্টার সল্যুউশন দিনে প্রায় ৩ লাখ কল গ্রহণ করতে সক্ষম। এই বিপুল পরিমাণ কল গ্রহণের সক্ষমতাপূর্ণ বিদেশি সফটওয়্যার যদি আপনি কিনতে যান তাহলে অনেক বেশি খরচ পড়বে। তাছাড়াও অবকাঠামো আপনার নিজস্ব অফিসে সেটআপ করতে হবে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিন্তু সিনেসিস আইটি সমমানের সেবা প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছে অনেক কম খরচে।


এরকম বহু উদাহরণ রয়েছে। সিনেসিস আইটির পাশাপাশি দেশের অনেক বড় বড় আইসিটি কোম্পানি তাদের নিজস্ব এবং দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বমানের সফটওয়্যার তৈরি করছে। এমনকি সেইসকল সফটওয়্যার বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। আমাদের মতে, দেশের যেই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা তা আমাদের দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমেই পূরণ করতে সক্ষম। এমনকি বিদেশেও আমাদের দেশী সফটওয়্যার রফতানিতে সক্ষম। আমার বিশ্বাস, যদি বড় বড় কোম্পানিগুলো এইসব সেবাগুলো সম্পর্কে আরও জানে এবং সেবাগুলো গ্রহণে আগ্রহী হয়, তবে দেশের আইটি খাত আরও অনেক বেশি উন্নতি লাভ করবে এবং সিনেসিস আইটির মতো দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আরো বেশি উৎসাহের সাথে কাজ করতে পারবে।


বিবার্তা : আপনি বলেছেন দেশীয় আইটি কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব ও দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বমানের সফটওয়্যার তৈরি করছে। এসব সফটওয়্যারগুলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?


সোহরাব আহমেদ চৌধুরী : হ্যাঁ, দেশীয় কোম্পানিগুলো এখন অনেক আধুনিক এবং উন্নতমানের সফটওয়্যার তৈরি করছে। এগুলো বিশ্ব বাজারে বিশ্বাসযোগ্য করতে মূলত সফটওয়্যার এর ইন্টেগ্রিটি বা শুদ্ধতা প্রয়োজন এবং ব্যবহারকারীর কাছে সফটওয়্যার এর ব্যবহার যোগ্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। এছাড়াও প্রতিনিয়ত আপডেটের মাধ্যমে সফটওয়্যারের মধ্যেকার যে ছোট ছোট ত্রুটিগুলো থাকে সেগুলো সারিয়ে তোলা প্রয়োজন। দেখুন, বাংলাদেশের সফটওয়্যারগুলোর মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা ডিবাগিং এবং ইউজার ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রতিনিয়ত করি না। আমরা ভার্সন আপডেটও করি না। সফটওয়্যার বাজার প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। সেই সাথে হার্ডওয়্যার ও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এই হার্ডওয়্যারের সাথে সফটওয়্যারের প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। সাথে সাথে ব্যবহারকারী কি চাচ্ছে তার দিকেও নজর দিতে হবে। এগুলো যদি করা যায় তাহলে আমি মনে করি বাংলাদেশী সফটওয়্যারগুলো বিশ্ব বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে।



ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নেপথ্যের কারিগর সোহরাব আহমেদ চৌধুরী।


বিবার্তা : সিনেসিস আইটি কী ধরনের কাজ করছে? বিবার্তার পাঠকদের জন্য সংক্ষেপে যদি বলতেন. . .


সোহরাব আহমেদ চৌধুরী : সিনেসিস আইটি লিমিটেড সিএমএমআই লেভেল ৩ সার্টিফাইড একটি আইসিটি প্রতিষ্ঠান যা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ই-গভর্নেন্স, ই-হেলথ অ্যান্ড টেলিহেলথ, কন্টাক্ট সেন্টার সল্যুউশন, টেন্ডার-বাজার ডটকমের মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছে। এছাড়াও তথ্যঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া যথাযথভাবে পরিপালনের স্বীকৃতি হিসেবে আইএসও ২৭০০১:২০১৩ সনদ এবং আইএসও ৯০০১ অর্জন করেছে সিনেসিস আইটি। ৫৫০ জনেরও বেশি লোকবল নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ বিডিবিএল ভবনের মূল অফিস থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন পর্যন্ত সিনেসিস আইটি বাংলাদেশ সরকারের ১৫০টির ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে কাজ করছে এবং জাতীয় পর্যায়ে ২৫টির ও অধিক কন্টাক্ট সেন্টার পরিচালনা করে যাচ্ছে। এসব প্রজেক্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, এনইআইআর, সিবিভিএমপি, ই-টিন, একপে, ওয়াসা লিংক ১৬১৬২, ইএফডিএমএস, ই-স্টাইপেনড, অনলাইন জিডি, এমপিও অটোমেশন, জিইআরপি, ইএমআইএস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩, কোভিড ১৯ টেলি হেলথ সেন্টার, সুখি পরিবার ১৭৬৭৬, প্রবাস বন্ধু, স্বাস্থ্য সেবার হেল্পলাইন ৭৮৯, মাইন্ড টেল ৭৮৯৯ সহ আরো অনেক জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কল সেন্টার রয়েছে।


বিবার্তা : প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিনেসিস আইটির বিশেষত্ব কি?


সোহরাব আহমেদ চৌধুরী : দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিনেসিস আইটি সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ই-গভর্নেন্স, ই-হেলথ, কন্টাক্ট সেন্টার সল্যুশন, টেন্ডার বাজার ডটকম ইত্যাদি সংক্রান্ত সেবা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সিনেসিস আইটি বর্তমানে ২০টিরও বেশি এসএমএস সার্ভিস গেটওয়ের মাধ্যমে সরকারের ডিজিএইচএস, এলজিআরডি, ডিএই, বিএসটিআই, বাংলাদেশ আর্মি, ওয়াসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিয়ে থাকে। ৭টিরও বেশি মোবাইল অ্যাপস, ৭০টিরও বেশি ড্যাশ বোর্ড মনিটরিং সিস্টেম, ৫টিরও বেশি অনলাইন ভেরিফিকেশন, ২টিরও বেশি হাই টিপিএস, ৩ টিরও বেশি ই-চালান ব্যবস্থা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। উল্লেখ্য যে, পাবলিক সেক্টরে ডিজিটাল সার্টিফিকেট প্রবর্তন হতে শুরু করে এনআইডি ইন্টিগ্রেশন এবং আইডেন্টিটি সল্যুউশনে সিনেসিস আইটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এছাড়াও সিনেসিস আইটি মোবাইল হেলথ অ্যান্ড টেলিহেলথ সেবার মাধ্যমে প্রায় ২.৫ কোটির ও বেশি মানুষকে এবং শুধু করোনাকালিন ১.২৫ কোটি মানুষকে সেবা দেয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশর সর্ববৃহৎ টেলিহেলথ সেবা প্রদানকারি সংস্থা হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। মূলত, সরকারি ও বেসরকারি খাতে এগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সিনেসিস আইটি।


বিবার্তা : সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি) প্রকল্প কী? এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই।


সোহরাব আহমেদ চৌধুরী : দেখুন, সম্প্রতি সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন এবং সেবা প্রাপ্তিকে আরও সহজ করার লক্ষ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব বাড়ার পাশাপাশি সকলেই দায়িত্বশীলতার সাথে তথ্য নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক বেশি সতর্ক। সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি) দেশের মানুষকে তথ্য নিরাপত্তার সাথে সাথে সরকারকে বড় একটি রাজস্ব আদায় এবং টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন নিয়মাবলী প্রবর্তনের কাজ করে যাচ্ছে। ২০১০ সালে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৬৭.৯২ মিলিয়ন সেটা ২০১৯ সালে এসে দাঁড়ায় ১৬৫.৫৭ মিলিয়ন। সিবিভিএমপি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতিটি সিম কার্ড নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবির সত্যতা সঠিকভাবে যাচাই করাসহ ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্টেও নিয়ে আসা হয়েছে ডিজিটালাইজেশন। সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি)-এর আওতায় এখন পর্যন্ত দেশের সব মোবাইল অপারেটরের মোট ২৬০ মিলিয়নেরও বেশি সিম কার্ড নিবন্ধন করা হয়েছে। এর মধ্যে মোট ইউনিক সাবস্ক্রাইব ১৩৫ মিলিয়ন। এছাড়াও প্রতিদিন গড়ে ১.৪ লাখেরও বেশি মানুষ বিভিন্ন মাধ্যমে সিবিভিএমপি-সিস্টেমে নিবন্ধিত হচ্ছে। এনআইডি-তে ৯৯.৭%, পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ০.১৮%, জন্ম নিবন্ধনে ০.১০% এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সে ০.০১%। সিবিভিএমপি প্রতিটি মোবাইল অপারেটরের সিম ডাটার সর্বাধিক লেনদেনের ডাটাবেস তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছে। যেটি প্রতি সেকেন্ডে ৫০০টি ডাটা রেজিস্ট্রেশন করতে পারে। এটি শুরু হওয়ার ১৪০০ এর অধিক দিনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ সেকেন্ডের জন্যও কোন ধরনের ত্রুটি ঘটেনি। সিবিভিএমপি দেশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সাথে সাথে দেশের প্রবৃদ্ধির পথে কয়েক ধাপ এগিয়েছে। তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনেও অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে চলছে।


বিবার্তা : বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রবর্তনের জন্য উইসিস উইনার পুরস্কার-২০২১ পেয়েছে বাংলাদেশ। বিটিআরসির তত্ত্বাবধায়নে সিবিভিএমপি প্রকল্পটির নেপথ্যে কাজ করছে দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি। এই অর্জনকে আপনি কীভাবে দেখছেন?


সোহরাব আহমেদ চৌধুরী : সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি) প্রকল্পটি ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। বিটিআরসি দেশের এতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য সিনেসিস আইটির মতো দেশীয় কোম্পানিগুলোর প্রতি আস্থা রেখেছে, যার জন্য আমরা তাদের কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের সেই আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে। বিটিআরসির উদ্যোগ ও সঠিক নির্দেশনা এবং মোবাইল অপারেটরের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্যই প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তাছাড়াও প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপে এই প্রকল্প অনন্য উদহারণ হয়ে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। সর্বোপরি আমরা কৃতজ্ঞ বিটিআরসির কাছে, কৃতজ্ঞ এমটব এবং গ্রামীণফোনসহ অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছে যাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় এই প্রকল্পটি এতো সফলতার মুখ দেখেছে। এছাড়াও কৃতজ্ঞতা আমাদের টিম মেম্বারদের প্রতি, যাদের নিরলস প্রচেষ্টায় শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পটি এক সেকেন্ডের জন্য ও ডাউনটাইম হয়নি। আমার বিশ্বাস, এরকম সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং দেশীয় প্রযুক্তির সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।


বিবার্তা : এবারের আসিটি খাতে বরাদ্দ প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আপনার মতামত কেমন?


সোহরাব আহমেদ চৌধুরী : গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন এবং দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা জানি এই (২০২১-২২) অর্থবছরে বাজেটে আইসিটি খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। যা কিনা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩০৬ কোটি টাকা বেশি। এর থেকেই বুঝা যাচ্ছে সরকার এই খাতে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। আমি মনে করি, এর মাধ্যমে সফলতাও আসছে। আমরা এই যে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) করছি এর মাধ্যমে কিন্তু ব্যাপক রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ইএফডিএমএস বা ইলেকট্রনিক ফিজিক্যাল ডিভাইস দিয়ে যে দোকান থেকে সরাসরি ভ্যাট আদায়ের একটি প্রকল্প পাইলট পর্যায় রয়েছে এগুলো যখন চালু হবে তখন দেশের রাজস্ব আদায় ও বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। ফলে আমার মতে, সরকারের আইসিটি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আমি সাধুবাদ জানাই এবং আশা করি এর মাধ্যম দেশের আরও কিছু নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ডিজিটালাইজেসন হবে এবং সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন তাতে আমরা কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবো।



সফটওয়্যার উদ্যোক্তা সোহরাব আহমেদ চৌধুরী।


বিবার্তা : কেমন সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি দেখতে চান?


সোহরাব আহমেদ চৌধুরী : সত্যি বলতে আমরা কিন্তু আমাদের স্বপ্নের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি এমন একটি সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি দেখতে চাই যেখানে তরুণরা নতুন নতুন ইনোভেশন আনবে। তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। এটি হচ্ছেও, দেশের সফটওয়্যার বাজারে এখন তরুণদের রাজত্ব। এই বাজারকে আরো সমৃদ্ধি করতে তরুণদের আরো উৎসাহী করতে হবে। বিশ্ব বাজারের সাথে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ করে দিতে হবে। দেশের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার যদি তাদের নিজস্ব মাধ্যমে বিদেশে প্রচার করে তাহলে এই খাত হতে আরো বেশি নতুন নতুন উদ্ভাবন আসবে এবং দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি আরো বেশি সমৃদ্ধি লাভ করবে বলে আমার ধারণা।


বিবার্তা/গমেজ/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com