
আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে প্রাণঘাতী ভাইরাস ইবোলার প্রাদুর্ভাবকে একটি 'বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা' হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বলা হচ্ছে- এটি এখন একটি ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জনস্বাস্থ্য সংকট’। জেনিভাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার (১৭ জুলাই) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গিব্রাইয়াসুস এ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। তবে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে এখনই কিছু বলা হয়নি।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে তার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কবার্তা হিসেবে ঘোষণাটি এসেছে। এমন সতর্কবার্তা এর আগে এ পর্যন্ত চারবার দিয়েছে সংস্থাটি। তার একটি ছিল পশ্চিম আফ্রিকা। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চলা ইবোলার প্রাদুর্ভাবে এগারো হাজার মানুষের মৃত্যুর পর।
কঙ্গোতে ইবোলা সংক্রমণে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান মি. গিব্রাইয়াসুস বলেছেন, বিশ্ববাসীর নজর দেয়ার সময় এসেছে। এ ঘোষণার ফলে সেটি হয়ত কিছুটা সম্ভব হবে বলে তিনি নিজেই মন্তব্য করেছেন। কঙ্গোতে যে ইবোলা ভাইরাসের যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, সেটি ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ।
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে এর শুরু। দেশটির দুটি প্রদেশে প্রথম এটি দেখা দেয়। এ পর্যন্ত আড়াই হাজার ব্যক্তি এতে আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে তিনভাগের দুইভাগই মারা গেছেন। প্রতিদিন ১২ জন করে নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
ইবোলার লক্ষণ কী?
ইবোলা একটি ভাইরাস। এতে আক্রান্ত হলে খুব হঠাৎ করে জ্বর দেখা দেয়। খুব দুর্বল লাগে। এর পরবর্তী ধাপ হলো বমি ও ডাইরিয়া। শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্তপাত হতে থাকে।
সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তির কেটে যাওয়া ত্বক, তার মুখ, নাক, বমি, রক্ত, মল বা শরীরের অন্য ধরনের তরল কোনো পদার্থের সংস্পর্শে এলে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হতে পারে।
নানা দেশে চলমান রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংঘাতের কারণে ইবোলার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু এ বছরের জানুয়ারি থেকেই ইবোলা চিকিৎসা কেন্দ্র বা স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর ১৯৮টি হামলা হয়েছে, যাতে সাতজন নিহত এবং ৫৮ জন আহত হয়েছেন।
আর একটি সমস্যা হলো স্বাস্থ্যকর্মীদের অবিশ্বাস করছেন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অনেকেই। আর চিকিৎসার সময় অসুস্থ ব্যক্তিদের আলাদা করে রাখা হয়, ফলে তারা চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাতে সংক্রমিত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা এমএসএফ-এর কর্মকর্তা ট্রিশ নিউপোর্ট বলেছেন, প্রাদুর্ভাব শুরুর এক বছর ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নত এখনো দেখা যাচ্ছে না। এখানে দীর্ঘ সহিংসতা আর সংঘাতের কারণে জটিল এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এটি কি অন্য দেশেও ছড়াতে পারে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে এটি ছড়িয়ে পরার আশঙ্কা খুবই বেশি। রোগটির প্রতিষেধক ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর। উগান্ডায় ইতোমধ্যেই রোগটি কয়েকজনের মধ্যে শনাক্ত হয়েছে।
ঝুঁকিতে রয়েছে রুয়ান্ডা। কারণ দেশটির সাথে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর সীমান্তবর্তী অঞ্চল গোমা'তে ইবোলা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে এখনই সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। সূত্র: বিবিসি।
বিবার্তা/রবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
ময়মনসিংহ রোড, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]