বিশ্বজুড়ে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি ছেলেশিশু বিবাহিত জীবন যাপন করছে। এর মধ্যে প্রতি পাঁচজনে একজন ১৫ বছর বয়সের আগেই আবদ্ধ হয়েছে বিবাহবন্ধনে৷

বিশ্বে বাল্যবিবাহের বর্তমান অবস্থা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এ তথ্য জানতে পেরেছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

মোট ৮২টি দেশের জনসংখ্যা ও বিয়ের তথ্য সংগ্রহ করেছে ইউনিসেফ। তালিকার শীর্ষে থাকা সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে এমন বিয়ের হার ২৮ শতাংশ। ১৯ শতাংশ নিয়ে এরপরই রয়েছে মধ্য অ্যামেরিকার দেশ নিকারাগুয়া ও ১৩ শতাংশ নিয়ে আফ্রিকার আরেক দেশ মাদাগাস্কারের নাম।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, বাল্যবিবাহের শিকার শিশুরা দ্রুত স্কুল থেকে ঝরে পড়ে, তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথও ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়ে। এছাড়া এই শিশুরা সঠিক বয়সে বিবাহিতদের তুলনায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক হেনরিটা ফোর এক বিবৃতিতে বলেন, বিয়ে শৈশব কেড়ে নেয়। শিশু বরকে বয়স্কদের সব দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হয়, যেসবের জন্য হয়তো তখনো তারা প্রস্তুত না।

তিনি বলেন, এতো আগে বিয়ে করায় অনেকে বাবাও হয়ে পড়ে খুব দ্রুত। ফলে পড়াশোনা ও ভালো চাকরির সন্ধান বাদ দিয়ে তাদেরকে পরিবারের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের দায়িত্ব নিতে হয়।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে ইউনিসেফ জানিয়েছে, বিশ্বে এই মুহূর্তে ২২০ কোটি শিশুর মধ্যে সাড়ে ৭৬ কোটিই এখন বিবাহিত। তবে এখনো ছেলে শিশুদের তুলনায় মেয়ে শিশুরাই বাল্যবিবাহের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অকাল গর্ভধারণের কারণে অনেকেই ভুগছে স্বাস্থ্য সংকটে।

ইউনিসেফ বলছে, আফ্রিকার দেশ নাইজারেই বাল্যবিবাহের হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেখানে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৫। তবে এটি পরিবর্তন করে ১৮ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার পেছনে দরিদ্রতা একটি অন্যতম বড় কারণ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে মেয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়লে সামাজিকভাবে যে হেনস্তার শিকার হতে হয়, তা এড়াতেও মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মেয়েদের প্রতি পাঁচজনের একজনের বিয়ে হয়েছে ১৮তম জন্মদিনের আগেই। এ হার ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রতি ৩০ জনে একজন।

অক্টোবরে এক প্রতিবেদনে চ্যারিটি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছিল, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত মেয়ে শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে অন্তত পাঁচ কোটি বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হতো।

২০১৫ সালে যে বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে একমত হয়েছিল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ একেবারে নির্মূল করার কথা বলা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড পলিসি অ্যানালাইসিস সেন্টারের এক গবেষণা বলছে, প্রায় প্রতিটি দেশেই বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো কিছু দেশে এখনো ধর্মীয় আচার ও মা-বাবার অনুমতি নিয়ে এর আগেই বিয়ে করার আইনি বৈধতা রয়ে গেছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে

বিবার্তা/জাকিয়া