শিরোনাম
ইতালীয় সাংবাদিকের দাবি
হামলার পর ৩৫টি মরদেহ সরিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০১৯, ১৬:৪২
হামলার পর ৩৫টি মরদেহ সরিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ ঘাঁটি লক্ষ্য করে ভারতীয় যুদ্ধবিমান মিরাজ ২০০০-এর বোমাবর্ষণের কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৩৫টি মৃতদেহ সরিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তানে সেনাবাহিনী। মৃতদের মধ্যে ছিল জইশ জঙ্গি, সাবেক পাক সেনাকর্তা ও প্রশিক্ষণ নিতে আসা আত্মঘাতী সদস্যরাও।


পাকিস্তানের স্থানীয় প্রশাসনের কর্মীদের কাছ থেকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এই খবর জোগাড় করেছেন ইতালীয় সাংবাদিক ফ্রান্সেসা মারিনো। তার এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ফার্স্ট পোস্ট-এ।


ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানে তুমুল উত্তেজনা চলছে। এ ঘটনার পর পাকিস্তানকে সময়মতো সমুচিত জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ভারত। সেই লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ধ্বংস করা হয় একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি।


এতে প্রায় ৩০০ ‘জঙ্গি’ প্রাণ হারায় বলে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম দাবি কর। তবে পাকিস্তানের প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির কথা প্রথম থেকেই উড়িয়ে দিচ্ছিল।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষদর্শীরা মারিনোকে জানিয়েছেন, বোমাবর্ষণের পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কিন্তু ততক্ষণে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। পুলিশকেও ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। যারা অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এসেছিলেন, সেই স্বাস্থ্যকর্মীদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিল সেনাবাহিনী।


মারিনোর দাবি, ভারতীয় বোমার আঘাতে নিহত হয়েছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) এক সাবেক অফিসার, যাকে কর্নেল সেলিম বলেই চিনতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গুরুতর আহত হয়েছে আর এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল জারার জাকরি। ভারতীয় বোমায় নিহত হয়েছে পেশোয়ার থেকে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতে যাওয়া জইশ জঙ্গি মুফতি মইন। মারা গিয়েছে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আই-ই-ডি)ফেব্রিকেশনে অন্যতম সেরা জইশ বিশেষজ্ঞ উসমান গনি-ও।


যদিও বালাকোটের জাব্বা টপের ঠিক নিচেই একটি কাঠ ও মাটি দিয়ে বানানো কাঁচা বাড়ি ভারতীয় বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়াতেই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জইশ শিবির, এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা। কারণ, প্রশিক্ষণ দিতে এই বাড়িতেই রাখা হয়েছিল জইশের ফিদায়েঁ বাহিনীর ১২ জন সদস্যকে। বোমার আঘাতে তারা প্রত্যেকেই মারা গেছে, এমনটাই দাবি মারিনোর।


ভারতীয় বোমার আঘাতে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জইশ শিবির, তা নিয়ে গত মঙ্গলবার থেকেই চলছে ব্যাপক বিতর্ক। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, তারা যা করতে চেয়েছিলেন, তা করতে পেরেছেন। জইশ শিবিরে কতটা ক্ষতি হয়েছে সেই তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে আছে। সময় হলেই তা সামনে আনা হবে।


অপরদিকে পাকিস্তানের দাবি ছিল, ভারতীয় বোমায় দু-একটি গাছ ও ফসল ছাড়া আর কোনো কিছুই সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি


ঘটনার পরের দিনই বালাকোটের কাছে কয়েকটি গ্রামে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থার প্রতিনিধিদেরও নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। সেই সাংবাদিকদের স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছিলেন, সামান্য আঘাত এবং কিছু গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির কথাই। কেউ বলেছিলেন, জাব্বা টপে কোনো জইশ জঙ্গি থাকতেন না, কেউ কেউ আবার একটি শিবির থাকার কথা জানিয়েছিলেন সাংবাদিকদের। যদিও ভারতের বোমাবর্ষণের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সাংবাদিকদের। কোনো কোনো সাংবাদিক আবার জানিয়েছিলেন, জাব্বা টপের কাছে তাদের যেতে দেয়নি পাক সরকার। আর এই জাব্বা টপের কাছেই বোমাবর্ষণ করেছিল ভারতের মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান।


মারিনের দাবি, অত্যাধুনিক সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার দিয়ে তোলা ছবির মাধ্যমেই ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন,জাব্বা টপের ঠিক নীচে পাহাড়ের গায়ে চারটি জইশ কাঠামো ধ্বংস করেছে ভারতীয় যুদ্ধবিমান। কিন্তু সেই ছবি এখনও সামনে আনেনি ভারত।


১ মার্চ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস (র)-এর একটি গোপন বৈঠকে পাঁচটি মৃত্যু নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আরো অন্তত ২০টি মৃত্যু হতে পারে বলে অনুমান করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা, এমনটাই জানাচ্ছেন ওই ইতালীয় সাংবাদিক। জাব্বা টপের ওপরে একটি মাদ্রাসাই ছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর লক্ষ্য। সেই তথ্য ভারতীয় বিমানবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ‘র’-এর গোয়েন্দারাই।


মারিনোর দাবি, ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল, পুলওয়ামা হামলার পরপরই নিয়ন্ত্রণরেখার আশপাশে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন শিবির থেকে সরে গিয়ে পাকিস্তানের ভিতরে বালাকোটের জাব্বা টপের পাশের মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছিল জইশ জঙ্গিরা। ভারতের প্রত্যাঘাতের ভয়েই ছিল এই শিবির বদল। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


বিবার্তা/মাইকেল/জাকিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com