শিরোনাম
জলবায়ু পরিবর্তন: ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:০৬
জলবায়ু পরিবর্তন: ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকির মধ্যে থাকা শীর্ষ ১৫টি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে কম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কাতার।


নতুন একটি জরিপে দাবি করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের ১৫টি দেশ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে নবম স্থানে। এছাড়া ১৫টি দেশের মধ্যে নয়টি বিভিন্ন দ্বীপদেশ।


২০১৮ বিশ্ব ঝুঁকি প্রতিবেদনে ১৭২টি দেশের ভূমিকম্প, সুনামি, হারিকেন ও বন্যার ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে।


জার্মানির রুহর বিশ্ববিদ্যালয় বোখাম এবং ডেভেলপমেন্ট হেল্প অ্যালায়েন্স নামে একটি জার্মান বেসরকারি মানবিক সংস্থা যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করে।


এই জরিপে গবেষকরা মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিশুদের দুর্দশার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তাদের তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী প্রতি চারটি শিশুর মধ্যে একটি দুর্যোগ-প্রবণ এলাকায় বসবাস করে।


এছাড়াও জাতিসংঘের পরিসংখ্যানেও দেখা যায় যে, গত বছর সংঘাত-সংঘর্ষ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া অর্ধেকেরও বেশি মানুষের বয়স ১৮ বছরের নীচে।


জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের স্তর বেড়ে যাওয়াসহ আরা নানা কারণে তালিকার শীর্ষে রয়েছে বেশিরভাগ দ্বীপদেশের নাম। এরমধ্যে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভানুয়াতু দ্বীপটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, তারপরেই রয়েছে প্রতিবেশী দেশ টোঙ্গা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আরেক দ্বীপদেশ ফিলিপিন্স। যার মোট লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ কোটি।



তবে জার্মান গবেষকরা মনে করেন ওশেনিয়া সার্বিকভাবে সবচেয়ে ঝুঁকি-প্রবণ অঞ্চল। তাদের মতে, আফ্রিকার দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হিসেবে শীর্ষ ৫০টি দেশের তালিকায় যেমন স্থান পেয়েছে। তেমনি সামাজিক বিপর্যয়ের তালিকাভুক্ত ১৫টি দেশের মধ্যে ১৩টি আফ্রিকার।


এমন পরিস্থিতিকে গবেষকরা এমন চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এজন্য তারা উদাহরণ হিসেবে টানেন ইউরোপকে। সম্প্রতি ইউরোপের দেশগুলোতে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে তীব্র দাবদাহ আঘাত হানে। অনেক স্থানে খরায় সেখানকার কৃষিখাত সরাসরি ক্ষতির শিকার হয়েছে।


তবে ইউরোপের দেশগুলো সে সময় এই দাবদাহ মোকাবেলায় যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেগুলোকে ইতিবাচক উদাহরণ হিসাবে নেয়ার কথা বলছেন গবেষকরা।


ঝুঁকির এই সূচকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কার পাশাপাশি সেই দুর্যোগ মোকাবেলায় সেই দেশ কতোটুকু প্রস্তুত সেটাও বিবেচনায় নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে হিসাব করা হয়, সেই দেশগুলোতে নির্মিত ভবনগুলোর পরিস্থিতি বা বিল্ডিং কোড, দারিদ্রসীমার মাত্রা এবং দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেয়ার পরিকল্পনা।


এ কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-প্রবণ হওয়া সত্ত্বেও অনেক দেশের নাম ঝুঁকির তালিকায় নেই। যেমন প্রতিনিয়ত ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা জাপান ও চিলি। এই দুই দেশের নাম শীর্ষ ২০ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের বাইরে রয়েছে।


এছাড়া রয়েছে হল্যান্ড, যারা শত শত বছর ধরে সমুদ্রের স্তর বেড়ে যাওয়ার সাথে যুদ্ধ করেছে। অথচ ঝুঁকির তালিকায় তাদের অবস্থান ৬৫টিতে।


জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে ২০১৮ সালকে একটি সচেতনতার বছর বলে আখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা। মানুষের মধ্যে এবারই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকাটা কতো জরুরি।


জলবায়ু সম্মেলন শুরু:


পোল্যান্ডের কাটোভিৎসে শহরে সোমবার থেকে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয়েছে।‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস’ বা কপ নামে পরিচিত জাতিসংঘের এই বার্ষিক আয়োজনের ২৪তম আয়োজন এটি। প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী সম্মেলন ১৪ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের প্রায় ২৩ হাজার অংশগ্রহণকারী এবার কপ২৪-এ উপস্থিত থাকবেন।


তবে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের এবার সম্মেলনে অংশ নেয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারছেন না।



কপ২৪-এর সভাপতি পোল্যান্ডের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি মিখাল কুরতিকা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।


গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে বিশ্ব এখনো অনেক দূরে আছে।


সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা এখনো যথেষ্ট কাজ করছি না, পর্যাপ্ত গতিতে এগোচ্ছি না।


২০১৫ সালে প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে স্বাক্ষরিত চুক্তির বাস্তবায়ন ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়ার কথা। সেটি কার্যকর করতে একটি রুলবুক বা নীতিমালা তৈরিই কপ২৪-এর মূল লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বের তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে যা ছিল, তার চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়তে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।


তবে গত অক্টোবরে জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ বা আইপিসিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণ করতে চাইলে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে বলে জানায় বিশ্বের প্রায় ৯০০ বিজ্ঞানীর যৌথভাবে লিখিত আইপিসিসির ওই প্রতিবেদনে।


কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চার বছর ধরে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বৃদ্ধি থেমে থাকলেও আবার তা বাড়তে শুরু করেছে।


বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের গতির চেয়ে মানুষের গৃহীত পদক্ষেপগুলো অনেক ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ইস্যুতে বিরোধ রয়েছে।


প্যারিস চুক্তির আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলো যেন তাদের অর্থনীতিকে পরিবেশবান্ধব করতে পারে সেজন্য ধনীদেশগুলোকে তহবিল প্রদান করতে বলা হয়েছিল। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য ধনীদেশগুলোই মূলত দায়ী। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন। সূত্র: বিবিসি, ডয়চে ভেলে ও এএফপি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com