ক্রিমিয়া উপদ্বীপে ইউক্রেনের নৌবাহিনীর জাহাজ লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার পাশাপাশি তিনটি জাহাজ আটক করেছে রাশিয়া। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার নিয়েছে।
রুশ বাহিনী দুটি ছোট যুদ্ধজাহাজ ও একটি টাগবোট আটক করে। এ সময় বেশ কয়েকজন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। এ নিয়ে দুই দেশই একে-অন্যকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পোরোশেংকো বলেছেন, এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি পার্লামেন্টে সোমবার সামরিক আইন জারির ঘোষণার জন্য আহবান জানাবেন। অপরদিকে রাশিয়া সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন আহবান করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদফতরে স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় এ অধিবেশন বসবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি।
কৃষ্ণ সাগর ও ক্রিমীয় উপকূলে আজোভ সাগরে উত্তেজনা সম্প্রতি বেড়েছে। ইউক্রেনের জাহাজ রুশ সীমানায় ঢুকে পড়েছে বলে রাশিয়া অভিযোগ তোলার পর এই সংকটের শুরু হয়।
‘সি অব আজোভ’ ক্রিমিয়া উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশ রুশপন্থি বিদ্রোহীরা দখল করে রেখেছে। ২০০৩ সালে আজোভ সাগর নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশের নৌযান আজোভ সাগরে অবাধে যাতায়াত করতে পারবে।
কিন্তু ২০১৪ সালে ইউক্রেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দর থেকে আসা বা তার উদ্দেশে যাত্রা করা সব নৌযান পরিদর্শন শুরু করে। সাগরে যেখানে দুদেশের অংশীদারিত্ব আছে সেখানে কের্চ স্ট্রেইট সেতুর নিচে ট্যাংকার স্থাপন করে রুশ বাহিনী।
এরই মধ্যে রবিবার ভোরে ইউক্রেনের বারডিযানস্ক এবং নিকোপল যুদ্ধজাহাজ এবং দি ইয়ানা কাপা জাহাজ কৃষ্ণ সাগরের ওডিসি বন্দর থেকে রওনা হয় আযোভ সাগরের মারিউপোলের উদ্দেশে।
রাশিয়া এ সময় ওই এলাকাতে দুটো যুদ্ধবিমান এবং দুটো হেলিকপ্টার ডেকে আনে। তাদের অভিযোগ নৌযানগুলা অবৈধভাবে তাদের জলসীমায় প্রবেশ করেছিল এবং ওই পথে চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে নিরাপত্তার কারণে।
ইউক্রেন বলছে, রাশিয়া জাহাজের পথ আটকাতে চেষ্টা করে। যদিও এরপর নৌযানগুলো কের্চ স্ট্রেইটের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু দি ইয়ানা কাপা জাহাজকে রাশিয়ার ট্যাংকার দিয়ে ধাক্কা দেয়।
ইউক্রেনের নৌবাহিনীর সদস্যরা জানান, জাহাজ হামলা মুখে পড়লে তারা ওই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তাদের ছয় নাবিক আহত হয়েছে এবং ধাক্কা দেয়ার কারণে ইয়ানা কাপা টাগবোটের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়, জাহাজের রেলিং ও কাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রাশিয়ার কর্মকর্তারা পরে নিশ্চিত করেছে যে, তাদের একটি টহল জাহাজ তিনটি ইউক্রেনের জাহাজকে জোর করে জব্দ করেছে। তবে তাদের দাবি, এ সময় তিন নাবিক আহত হয়েছেন।
এদিকে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের মিটিংয়ের সময় প্রেসিডেন্ট পোরেশেঙ্কো রাশিয়ার এহেন আচরণকে বিনা উসকানিতে হামলা ও উন্মত্ত বলে অভিহিত করেছেন।
আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কের্চ স্ট্রেইট-এ চলাচলের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহবান জানিয়েছে এবং সংযমের সাথে যে কোনো কাজ করার জন্য সবাইকে তাগিদ দিয়েছে।
ন্যাটো বলেছে, তারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে এবং এর আঞ্চলিক অখণ্ডতা, আঞ্চলিক জলসীমায় তার ন্যাভিগেশন অধিকারকে সমর্থন দেয়। সূত: বিবিসি
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]