ইয়েমেনে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে পাঁচ বছরের কম ৮৫ হাজার শিশু চরম অপুষ্টিতে মারা গেছে। শীর্ষস্থানীয় দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এ কথা জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থাটি বলেছে, এই সংখ্যা যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্মিংহামের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সংখ্যার সমান।
জাতিসংঘ গত মাসে হুঁশিয়ার করেছে, ইয়েমেনের এক কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের প্রান্তে রয়েছে। দেশটিতে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে করতে পুনরায় আলোচনা শুরুর চেষ্টা করছে সংস্থাটি। যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এ যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ইয়েমেন। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট বিমান হামলা শুরু করলে ইয়েমেনে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যায়। হুতিরা ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আব্দুরাব্বু মনসুর হাদিকে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, যুদ্ধে অন্তত ছয় হাজার ৮০০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরো ১০ হাজার ৭০০ জন।
যুদ্ধ ও জোটের আংশিক অবরোধের কারণে দেশটির দুই কোটি ২০ লাখ লোককে মানবিক ত্রাণ সহায়তার ওপর বেঁচে থাকার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জরুরি খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে এবং কলেরার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে এক কোটি ২০ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃতপক্ষে কতজনের মৃত্যু হয়েছে সেই সংখ্যা নির্ধারণ করার অত্যন্ত কঠিন। দেশটির অর্ধেক ভূখণ্ডের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে, সেখানে কোনো রকম চিকিৎসা সুবিধা কাজ করছে না। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা অবরোধের মুখে থাকায় অনেক মানুষকে অভাবে অনাহারে দিন পার করতে হচ্ছে।
জাতিসংঘের সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, তাদের হিসাবে এপ্রিল ২০১৫ থেকে অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চরম অপুষ্টিতে ভোগা ৮৪,৭০০ শিশুর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
বাড়তে থাকা খাদ্যমূল্য ও গৃহযুদ্ধের কারণে মান হারাতে হতে থাকা ইয়েমেনি মুদ্রা আরো অনেক পরিবারকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সংস্থাটি ইয়েমেনের আরো মানুষকে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়ার জন্য সৌদি জোটের অবরোধকে দায়ী করেছে। ত্রাণ সরবরাহে দেশটির প্রধান বন্দরনগরী হুদায়দাহতে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
ইয়েমেনের মোট খাদ্য আমদানির ৯০ শতাংশই হুদাইদাহ বন্দর দিয়ে আসতো। হুতিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বন্দরটি দখলে নেয়ার জন্য সৌদি জোট হামলা শুরু করায় বাণিজ্যিক আমদানি কমে যায়। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্যিক আমদানির পরিমাণ এক মাসে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কমেছে।
সংস্থাটি হুঁশিয়ারি করে বলেছে, যদি প্রচণ্ড অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা না দেয়া হয় তবে বছরে প্রায় ২০-৩০ শতাংশ শিশু প্রাণ হারাবে। সূত্র: বিবিসি ও পার্সটুডে
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]