দেশের অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হওয়ার কারণে ভেনেজুয়েলা ছাড়ছেন দেশটির অনেক নারী। ‘মিস ভেনেজুয়েলা'-র মতো প্রতিযোগিতার হাত ধরে যে নারীরা এতদিন কর্মসংস্থান পেতেন, অর্থনীতির পতনের ফলে সেই সুযোগ হারিয়ে যাওয়ায় দেশ ছাড়ছেন তাঁরা।
এই যেমন আন্দ্রেয়া ডিয়াজ। আসন্ন ‘মিস ইউনিভার্স' প্রতিযোগিতায় চিলি-র প্রতিনিধিত্ব করবেন ২৬ বছর বয়সী আন্দ্রেয়া। অথচ তার জন্ম চিলি-তে নয়, ভেনেজুয়েলার শহর ভালেন্সিয়াতে। প্রথমে পানামা ও পরে মেক্সিকো হয়ে চিলি আসেন তিনি। আপাতত সেখানেই তার বসবাস। প্রশ্ন হলো, যে দেশে তার জন্ম, যে দেশের মাটিতে প্রথম ব়্যাম্পে হাঁটতে শেখেন তিনি, সেই দেশ ছেড়ে ভিনদেশে কেন আন্দ্রেয়া?
এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে একটু পেছন ফিরে তাকাতে হয়।
কারাকাস শহরের রেডিও সঞ্চালক রাফায়েল ব্রিসেনোর মতে, নব্বইয়ের দশক থেকেই ভেনেজুয়েলায় বাড়তে থাকে সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতার চল। বিশেষ করে ‘মিস ভেনেজুয়েলা' শিরোপায় অংশগ্রহণে বাড়ে অল্পবয়সি নারীদের আগ্রহ। শুধু তাই নয়, ‘মিস ইউনিভার্স', ‘মিস ওয়ার্ল্ড' বা ‘মিস আর্থ'-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভেনেজুয়েলার জয়যাত্রা অব্যাহত থাকার ফলে বিভিন্ন সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতা হয়ে ওঠে নারীদের কর্মসংস্থানের নির্ভরযোগ্য উপায়।
এই প্রতিযোগিতার মঞ্চ থেকেই উঠে আসেন বহু মডেল, অভিনেত্রী, টেলিভিশন সঞ্চালিকা থেকে মেয়র বা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীও।
কিন্তু গত কয়েক বছরে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ খাদ্যাভাব ও মুদ্রাস্ফীতি এড়াতে অন্য দেশে বাসা বাঁধছেন। অন্যান্য শিল্পের মতোই এতে ক্ষতিগ্রস্ত সৌন্দর্য্য জগতও। ফলে একের পর এক সুন্দরীরা পাড়ি দিচ্ছেন মেক্সিকো, কলম্বিয়া বা পর্তুগালে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানা গেছে, জীবিকার খোঁজে এই নারীরা পাড়ি দিয়েছেন তুরস্ক বা ভারতের মতো দূরের দেশগুলোতেও।
আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলা ‘মিস ওয়ার্ল্ড' প্রতিযোগিতায় পর্তুগালের হয়ে মঞ্চে নামবেন এক ভেনেজুয়েলান নারী। এই প্রবণতার চিত্র আগেও ‘মিস আর্থ' প্রতিযোগিতায় দেখা গেছে, যখন পেরু ও স্পেন- দুই দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করেন দুই ভেনেজুয়েলান নারী।
পেরুর প্রতিনিধি জেসিকা রুসো বলেন, ‘‘দেশ ছেড়েছি বলে সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতার স্বপ্ন আমি ছাড়িনি। আমি ভবিষ্যতে সারা বিশ্বের ভালো হয় এমন কোনো কাজ করতে চাই।''
অনেকে যদিও সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতাকে দেখছেন নারীর পণ্যায়ন হিসাবে, কিন্তু নারীদের রোজগারের নির্ভরযোগ্য উপায় হওয়ার কারণে এই সমালোচনা সেভাবে ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের কাছে গৃহীত হয় না।
শুধু অর্থনৈতিক নয়, সুন্দরী নারীদের দেশত্যাগের পেছনে রয়েছে আরো একটি কারণ। ভেনেজুয়েলায় থাকাকালীন আন্দ্রেয়া একটি ত্বক পরিচর্যা কেন্দ্রে যান। পরে দেখা যায়, পরিচর্যার বদলে তার মুখে দেখা দিয়েছে ফুসকুড়ি। ফলে কমতে থাকে মডেল হিসাবে ভেনেজুয়েলায় তার কাজের সুযোগ।
অবশ্য চিলিতে আসার পর আন্দ্রেয়ার এই সমস্যা সমাধান হয়েছে। এখানে উন্নত মেকাপের ফলে সহজেই ঢেকে রাখতে পারেন তিনি ত্বকের সব খুঁত।
দুর্বল অর্থনীতি বা সামাজিক চাপ– একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করছেন সেই দেশের উঠতি তারকারা। এতে সেই দেশের শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছে অন্যান্য দেশের সৌন্দর্য্য বাণিজ্য।
সূত্র: এপি।
বিবার্তা/হুমায়ুন/কামরুল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]