শিরোনাম
খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেন যুবরাজ বিন সালমানই: সিআইএ
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৪৮
খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেন যুবরাজ বিন সালমানই: সিআইএ
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানই সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন বলে সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।


তবে সৌদি সরকারের দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত এ সিদ্ধান্ত। সৌদি সরকার দাবি করেছে, প্রিন্স সালমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না।


তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গত মাসে ব্যক্তিগত কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন খাসোগি।


হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রিন্স সালমানের সম্পৃক্ততা এবং সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক রক্ষায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের যুবরাজকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা সিআইএ’র মূল্যায়নে উঠে এসেছে।


সৌদি ১৫ জনের একটি দল সরকারি বিমানে করে অক্টোবরে ইস্তাম্বুলে যায় এবং সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে খাসোগিকে হত্যা করে।


সিআইএ যেসব তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের ছোট ভাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের সঙ্গে খাসোগির টেলিফোনালাপ।


ওই ফোনালাপে খালিদ খাসোগিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গিয়ে সৌদি কনস্যুলেট থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করতে বলেন এবং এই নিশ্চয়তা দেন যে, তার কোনো ক্ষতি হবে না।


জামাল খাসোগি


কিন্তু খাসোগি সেখানে গিয়ে হত্যার শিকার হন। এর দু’দিন পরই খালিদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তড়িঘড়ি করে সৌদি আরবে ফিরে যান। তাকে আর ওয়াশিংটনে ফেরত পাঠানো হয়নি এবং অন্য কাউকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।


তবে খাসোগিকে হত্যা করা হবে, বিষয়টি খালিদ জানতেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। যারা এই ফোনকল সম্পর্কে জানতেন তাদের বরাতে জানা যায়, খালিদ তার ভাইয়ের নির্দেশনামতো খাসোগিকে ফোন করেছিলেন।


এদিকে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সৌদি দূতাবাসের এক মুখপাত্র ফাতিমা বাশেন বলেন, তুরস্ক যাওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত ও খাসোগি কখনো কিছু আলোচনা করেননি।


তিনি আরো দাবি করেন, সিআইএ’র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মূল্যায়ন মিথ্যা। আমরা এসব গুজবের প্রাথমিক ভিত্তি ছাড়াই অবিরত নানা তত্ত্ব শুনে আসছি।


এছাড়া খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পরপরই ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেট থেকে করা একটি ফোনকল আমলে নিয়েছে সিআইএ। ওই ফোনকলে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘাতক দলের সদস্য মাহের মুতরেব জানান, অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে।


পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প সৌদি আরবের কাছে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির স্বার্থে খাসোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজের হাত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন। তবে সিআইএ’র অনুসন্ধানে এ সংক্রান্ত যেসব প্রামাণ্য দলিল উঠে এসেছে তাতে এ হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজকে আর নির্দোষ বলার সুযোগ থাকছে না।


সিআইএ’র সিদ্ধান্তে দেশটিতে যুবরাজ সালমানের প্রকৃত অবস্থানকেও মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশটির প্রকৃত শাসক যুবরাজই। দেশটির কোনো সামান্য বিষয়ও তার নজরদারিতে থাকে।


সিআইএ’র সিদ্ধান্তের সাথে সম্পৃক্ত এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, সৌদি যুবরাজের স্বীকৃত অবস্থান এমন যে তিনি জানেন না বা জড়িত নন, এমন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।


সিআইএ’র মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।


এদিকে সৌদি আরবের ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর সালান বিন রাজিহ সালান বলেছেন, ইস্তাম্বুলের কনস্যুলেটের ভেতর খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নন।


তিনি বলেন, এই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল খাসোগিকে বুঝিয়ে সৌদি আরবে ফিরিয়ে আনার। খাসোগির সঙ্গে ধস্তাধস্তি হবার পর তাকে বিষাক্ত ইনজেকশন দেয়া হয়।


সালাহ এই হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে অভিযুক্ত করেছেন এবং তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছেন। মামলাটি একটি আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং একইসাথে সন্দেহভাজন আরো ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।


সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সালান বলেছেন, খাসোগির মৃত্যুর পর তার দেহ দূতাবাসের ভেতর খণ্ড খণ্ড করে ফেলা হয়। এরপর তার দেহের বিভিন্ন অংশ কনস্যুলেটের বাইরে স্থানীয় এক সহযোগীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই সহযোগীর একটি স্কেচ তৈরি করা হয়েছে এবং দেহাবশেষের খোঁজে তল্লাশি চলছে।


তবে হত্যার দায়ে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের কারো নাম পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি।


তিনি আরো বলেন, তদন্তে জানা গেছে যে ব্যক্তি খুনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনিই দলটির মধ্যে আলোচনাকারী হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করছিলেন। উপ-গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল আহমেদ আল আসিরি ওই ব্যক্তিকে ইস্তাম্বুলে পাঠিয়েছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল খাসোগিকে তার স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে সৌদি আরবে ফিরে যেতে বাধ্য করা।


সালান জোর দিয়ে বলেন, সৌদি যুবরাজ এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। বাদশাহ সালমানের পুত্র যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই হত্যাকাণ্ডের সাথে তার কোনোরকম সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।


তবে সমালোচকরা মনে করছেন, এ ধরনের একটি ঘটনা সম্পর্কে যুবরাজ মোহাম্মদ কিছুই জানতেন না তেমনটি হওয়া খুবই অসম্ভব। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট ও বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com