শিরোনাম
এবার অ্যামনেস্টির সম্মাননা হারালেন সুচি
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১১:১৫
এবার অ্যামনেস্টির সম্মাননা হারালেন সুচি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিকে দেয়া তাদের সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।


সংস্থাটি সোমবার এক ঘোষণায় জানিয়েছে, সুচি তার এক সময়কার নৈতিক অবস্থান থেকে ‘লজ্জাজনকভাবে’ সরে যাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর সেখান থেকে নতুন করে আরো সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনায় এর আগেও আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সুচিকে দেয়া তাদের খেতাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠেছে সুচির বিরুদ্ধে।


কানাডার পার্লামেন্টের দেয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড শহরের দেয়া সম্মাননা, গ্লাসগো নগর কাউন্সিলের দেয়া ফ্রিডম অব সিটি খেতাবসহ আরো অনেক সম্মাননা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো লন্ডনভিত্তিক এই সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।


এর আগে জাতিসংঘও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বর্মী সেনাবাহিনীর অভিযানকে মানবতা-বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছে এবং এই অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের বিচারের কাঠগগায় দাঁড় করানোর আহবান জানিয়েছে।



২০০৯ সালে সুচিকে ‘অ্যাম্বাসাডর অব কনশেন্স’ বা ‘বিবেকের দূত’ খেতাব দিয়েছিল অ্যামনেস্টি। গৃহবন্দী থাকার সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় সুচির শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই সম্মাননা দেয়া হয়েছিল।


সংস্থাটির মহাসচিব কুমি নাইডু এক চিঠির মাধ্যমে সুচিকে এই খেতার প্রত্যাহারের খবর দিয়েছেন।


তিনি চিঠিতে লিখেছেন, আট বছর আগে গৃহবন্দী থাকা নেত্রী ক্ষমতা গ্রহণের পর তার রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা ভুলে সামরিক বাহিনীর চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে ছিলেন উদাসীন।


তিনি আরো লিখেছেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আপনাকে দেয়া ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনশেন্স’ সম্মাননা অব্যাহত রাখার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না।


অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সংস্থার একজন দূত হিসেবে সুচির কাছে প্রত্যাশা ছিল শুধু মিয়ানমারের ভেতরে নয়, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের অবিচারের বিরুদ্ধে আপনি আপনার নৈতিক কর্তৃত্ব ও ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু আমরা গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত। কারণ আপনি আর আশা, সাহস ও মানবাধিকার রক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেন না।


অ্যামনেস্টি বলছে, সুচির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর তার প্রশাসন একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল।


রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযানের কথা উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, গত বছর নিধনযজ্ঞ চলার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী হত্যা করেছে হাজারো মানুষ। ধর্ষিত হয়েছে অগণিত নারী ও শিশু, আটক ও নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ, শিশু ও কিশোরও। শতাধিক গ্রাম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।


সংস্থাটি আরো বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় অস্বীকার করে সুচি ও তার দফতর তাদেরকে রক্ষা করেছেন। রোহিঙ্গাদের পক্ষে সুচির দাঁড়ানোর ব্যর্থতাই এর মূল কারণ।


মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, ভয়ঙ্কর নিপীড়ন ও নির্যাতনের এইসব ঘটনা অস্বীকার করে সুচি বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে কিংবা রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত লাখো রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নের বা পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ। নৃশংসতা থামাতে ভবিষ্যতে সরকারের উদ্যোগ কেমন হতে পারে তা সহজেই বোঝা যায় যখন একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের কথা অস্বীকার করে রাষ্ট্রযন্ত্র।


সংস্থাটি বলছে, সামরিক বাহিনীর বিস্তর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আইন তৈরি ও সংশোধনের বেশ কিছু ক্ষমতা ছিল বেসামরিক সরকারের হাতে। কিন্তু সুচির সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দু'বছরের মাথায় মানবাধিকার কর্মী, শান্তিকর্মী ও সাংবাদিকদের হুমকি, ভয়, হয়রানি এমনকি কারাবরণও করতে হয়েছে।


সংস্থাটি আরো বলেছে, সুচি সাহায্য করুণ আর নাই করুন, মিয়ানমারে বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে তারা তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবে। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com