মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর কোণঠাসা হলেও দমে যাননি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবিলম্বে বিচারমন্ত্রীকে পদত্যাগ করিয়ে নিজের বিরুদ্ধে তদন্ত বানচাল করার চেষ্টা করলেন। সংসদের নিম্ন কক্ষে ডেমোক্র্যাটদের জয়ের পর ঝুঁকি কমাতে চান তিনি।

সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো, প্রকাশ্যে এখনো নির্বাচনে ''সাফল্য'' নিয়ে গর্ব করছেন ট্রাম্প। সেই সাফল্যও নাকি ব্যক্তি হিসেবে তাঁর নিজের, রিপাবলিকান দলের নয়। এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিলেন সেকথাই যে তিনি যেসব প্রার্থীর হয়ে প্রচার চালিয়েছেন, তাঁদেরই জয় হয়েছে। অন্যদিকে যাঁরা তাঁর প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য দেখাননি, তাঁদের হার হয়েছে।

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের দল মধ্যবর্তী নির্বাচনে বহুকাল ''এমন সাফল্য'' পায়নি বলেও দাবি করেন ট্রাম্প।

সংসদের নিম্ন কক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের জয়ের পর ট্রাম্প তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। এমনকি স্পিকার পদের জন্য সে দলের নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি-র প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প ঠাট্টা করে বলেন, যদি ডোমোক্র্যাট দলের কিছু সংসদ সদস্য পেলোসি-র পক্ষে ভোট না দেন, রিপাবলিকান দল তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।

পাশাপাশি ট্রাম্প বিরোধী দলের উদ্দেশ্যে প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছেন। বলেছেন, তারা যদি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত বা অন্য কোনো উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রে তিনিও সংঘাতের পথে যেতে প্রস্তুত। ''সেক্ষেত্রে ওয়াশিংটনে যুদ্ধের মতো পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে'' বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য তদন্ত নিয়ে যে উদ্বিগ্ন, বুধবারই তার প্রমাণ পাওয়া গেল। তাঁরই উদ্যোগে বিচারমন্ত্রী জেফ সেশনস এ দিন পদত্যাগ করলেন। উল্লেখ্য, বেশ কিছুকাল ধরে ট্রাম্প তাঁর (বিচারমন্ত্রী) বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে চাপ বজায় রেখেছিলেন। এফবিআই-র প্রাক্তন প্রধান রবার্ট মালার ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প টিমের সঙ্গে রাশিয়ার অবৈধ যোগাযোগ নিয়ে যে তদন্ত চালাচ্ছেন, সে বিষয়ে চরম অস্বস্তিতে ভুগছেন ট্রাম্প। সেশনস স্বার্থের সংঘাত এড়াতে বিষয়টি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন অর্থাৎ, ট্রাম্পকে সাহায্য করার কোনো উদ্যোগ তিনি দেখাননি।

এবার তাই সেশনসকে সরিয়ে তাঁরই চিফ অফ স্টাফ ম্যাথিউ উইটেকারকে কার্যনির্বাহী বিচারমন্ত্রী নিয়োগ করলেন ট্রাম্প।

বিচারমন্ত্রীর আচমকা বিদায়ের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল। ন্যান্সি পেলোসি এক টুইট বার্তায় এই পদক্ষেপকে রাশিয়া সংক্রান্ত তদন্ত বানচাল করার প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা দেন। কার্যনির্বাহী বিচারমন্ত্রীর উদ্দেশ্যেও তিনি স্বার্থের সংঘাত এড়াতে সেই তদন্ত থেকে নিজেকে দূরে রাখার ডাক দেন।

বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প যেভাবে একাধিকবার মেজাজ হারিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বচসা ও সংঘাতের পথে গেছেন, সেই বিষয়টিরও সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে সিএনএন-এর সাংবাদিক জিম অ্যাকোস্টার সঙ্গে তাঁর বাকযুদ্ধ অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ছিল। এ ঘটনার পর হোয়াইট হাউসে তাঁর প্রবেশাধিকার সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সূত্র এএফপি/রয়টার্স

বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী