যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেও জীবনের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে গেল ইয়েমেনের সাত বছরের শিশু আমাল হুসেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল তার ছবি। না-খেতে-পাওয়া, কঙ্কালসার চেহারার আমাল এই কয়েকদিনে যুদ্ধদীর্ণ ইয়েমেনের মুখ হয়ে উঠেছিল।
তার পরিবারের তরফে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর আসলামের এক শরণার্থী শিবিরে আমাল মারা গেছে। আমালের মা মরিয়ম আলি বলেছেন, আমার মন ভেঙে গিয়েছে। আমাল খুব হাসিখুশি ছিল। আমার অন্য বাচ্চাদের নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে।
চরম অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা আমালকে সম্প্রতি ইয়েমেনে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্বাস্থ্য শিবিরে আনা হয়েছিল। সেখানেই ওই ছবিটি তোলা হয়।
আমালের চিকিৎসক জানান, ডায়েরিয়ায় ভুগছিল মেয়েটা। প্রতি দু’ঘণ্টায় দুধ খাওয়ানো হচ্ছিল। কিন্তু এতটাই অসুস্থ ছিল যে প্রতি বারই তা বমি করে দিচ্ছিল। তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু অর্থের অভাবে শরণার্থী শিবিরেই আমালকে ফিরিয়ে আনে পরিবার। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে তার।
আমালের চিকিৎসক ডা. মেকিয়া মাহদি বলেছেন, তার মতো আরো অনেক রোগী আছে আমাদের এখানে।
দু’চোখে শূন্যতা, পাঁজর বার করা আমালের ছবি ফেসবুকে অন্তত ৪৩ হাজার বার শেয়ার করা হয়েছিল। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ছবিটিকে ‘উলঙ্গ, তাই যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ও অশালীন’ তকমা দিয়ে ব্লক করে। আর তাতেই প্রতিবাদের ঝড় তোলেন নেটিজেনরা। মর্মান্তিক একটি ছবিকে এভাবে ব্লক করে দিয়ে ইয়েমেনের বাস্তবকেই অস্বীকার করা হচ্ছে বলে সরব হন তারা। পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ফেসবুক।
আমালের মৃত্যুতে ইয়েমেনের যুদ্ধপরিস্থিতির জন্য সরাসরি আঙুল উঠছে সৌদি আরবের দিকেই। ইয়েমেনের এই দুরবস্থা আসলে সৌদির সঙ্গে ইরানের ছায়াযুদ্ধের ফল। ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের ইয়েমেন থেকে হটাতে ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে সৌদি। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও রয়েছে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে তিন বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিল আমালের পরিবার। জাতিসংঘের এক হিসেব বলছে, ইয়েমেন অন্তত ১৮ লাখ শিশু আমালের মতো অপুষ্টিতে ভুগছে।
পুলিৎজারজয়ী ফটোগ্রাফার টেইলর হিকস এই ছবি তুলেছিলেন আসলাম শহরে ইউনিসেফের এক মোবাইল ক্লিনিকে। তিনি গত সপ্তাহে এক রেডিও সাক্ষাতকারে বলেন, আমালের ছবি তোলা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও বেদনাদায়ক। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি বলেন, তার ছবির মাধ্যমেই ফুটে উঠেছে ইয়েমেনে অপুষ্টি ও অনাহারে থাকা মানুষের অবস্থা কতটা দুঃখজনক ও ভয়াবহ।
এদিকে পরিস্থিতি পাল্টাতে সৌদিকে অস্ত্র সরবরাহকারী ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তা কার্যকরী করতে হবে জানিয়েছে তারা।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস বলেছেন, করছি করব নয়, শান্তির জন্য পদক্ষেপ এবার নিতেই হবে। সূত্র: আনন্দবাজার ও আলজাজিরা
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]