শিরোনাম
জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল করছেন ট্রাম্প !
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১০:২৫
জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল করছেন ট্রাম্প !
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার চলতি নিয়ম বাতিলের পরিকল্পনা করেছেন।


দেশটির জনপ্রিয় এক ওয়েবসাইট এক্সিওসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তিনি ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা হবে।


কিন্তু তিনি কি তা করতে পারেন? এই প্রশ্ন অনেকে তুলেছেন। কারণ এই রীতি ১৫০ বছর আগের। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মগ্রহণ করলেই দেশটির নাগরিকত্ব পাবে।


তবে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, এমন যে কেউ এসে সন্তান জন্ম দিলেই সেই সন্তান মার্কিন নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে। এই নিয়ম অত্যন্ত হাস্যকর, এটি বন্ধ হওয়া উচিত। জন্ম নেয়া শিশুটি ৮৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সব সুবিধা ভোগ করবে, এটা বন্ধ হতে হবে।
এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।


ট্রাম্প বলেছেন, তার আইন বিশেষজ্ঞরা তাকে নিশ্চিত করেছেন যে, তেমন কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন নেই। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেই এটা করা সম্ভব।


সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে নিশ্চিত করা নাগরিকত্বের এ অধিকার রুখতে হলে পাল্টা সংশোধনীর প্রয়োজন হবে। তাছাড়া নির্বাহী আদেশবলে ট্রাম্প একাজ করতে গেলে তা আদালতেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।


এদিকে ট্রাম্পের এমন পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ান। এ শীর্ষ রিপাবলিকান বলেছেন, আপনি স্পষ্টতই এ কাজ করতে পারেন না। নির্বাহী আদেশ দিয়ে জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া যাবে না। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন নির্বাহী আদেশ দিয়ে অভিবাসন আইন পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন তখন আমরা তা পছন্দ করিনি। আর কনজারভেটিভ দল হিসাবে আমরা সংবিধানে বিশ্বাসী।


যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রে ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে এই নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা আছে। এই সংশোধনীর প্রথম বাক্যেই বলা আছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিই দেশটির নাগরিক হবে। সে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেখানেই বসবাস করুক, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়।


অভিবাসন নিয়ে কট্টরপন্থীরা বলেছেন, এই ব্যবস্থা অবৈধ অভিবাসনের জন্য চুম্বক হিসেবে কাজ করে থাকে এবং সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য গর্ভবতী নারীদের সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্র আসতে উৎসাহিত করছে।


২০১৫ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৬০ ভাগ মার্কিন নাগরিক জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুযোগ রাখার পক্ষে রয়েছে। আর এই সুযোগ বাতিলের পক্ষে আছে ৩৭ শতাংশ।


যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৮৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে চতুর্দশ সংশোধনী আনা হয়েছিল। ত্রয়োদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল ১৮৬৫ সালে। সেই সংশোধনীর মাধ্যমে দাসত্ব প্রথা বিলুপ্ত করা হয়। এরপর চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া সাবেক ক্রীতদাসদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়েছিল।


১৮৫৭ সালে একটি ঘটনায় সুপ্রিমকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, আফ্রিকান আমেরিকানরা কখনো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারে না। কিন্তু এরপর চতুর্দশ সংশোধনী তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে।


১৮৯৮ সালে সুপ্রিমকোর্ট একটি মামলায় নিশ্চিত করে যে, অভিবাসীদের শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে।


চীনা মা-বাবা যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। ওয়াং কিম আর্ক নামের সেই শিশু ২৪ বছর বয়েসে চীনে বেড়াতে যান। কিন্তু তিনি ফেরার সময় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। তখন ওয়াং যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিয়েছেন।


চতুর্দশ সংশোধনীতে যে অধিকার আছে, সেখানে তার মা-বাবার অভিবাসন অবস্থা কোনো প্রভাব ফেলে না। এই যুক্তি দিয়ে তিনি সফল হয়েছিলেন।


ইমিগ্রেশন হিস্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ইরিকা লী লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়াং কিম আর্কের মধ্যে তখন যে আইনী লড়াই হয়েছে, সেখানে এসেছিল যে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া সবাই দেশটির নাগরিক হবে। তখন থেকে আদালত আর কখনো এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি।


ট্রাম্প কি এই ব্যবস্থা বাতিল করতে পারেন? আইন বিশেষজ্ঞদের বেশিরভাগই মনে করেন, ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করতে পারেন না।


ভার্জিনিয়া ল’ স্কুলের অধ্যাপক এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ কৃষ্ণ প্রকাশ বলেছেন, ট্রাম্প এমন কিছু করছেন, যা অনেক মানুষকে আঘাত করবে। তবে শেষপর্যন্ত বিষয়টি আদালতে যাবে এবং আদালতই সিদ্ধান্ত দেবে বলে তিনি মনে করেন।


যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আর কয়েকদিন বাকি আছে। সে সময় ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের পেছনে রাজনীতি আছে বলে বিশ্লেষকরা করছেন। ট্রাম্প এমন পদক্ষেপ নিয়ে নিজের সমর্থকদের চাঙা করতে চাইছেন।


একই ভাবনা থেকে মাত্র একদিন আগেই হোয়াইট হাউসি মেক্সিকো সীমান্তে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে। দক্ষিণ আমেরিকার তিনটি দেশ থেকে মেক্সিকো হয়ে কয়েক হাজার অবধৈ অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে এই সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com