ভারতে ‘মি-টু’ আন্দোলনের জোয়ার ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্তের তালিকায় উঠে এসেছে অন্তত ৩৭ জন ক্ষমতাশালী ব্যক্তির নাম। তেমন কয়েকজনের কথাই এখানে তুলে ধরা হলো :

প্রথম বোমা ফাটালেন তনুশ্রী

ভারতে যৌন হেনস্তার প্রথম বোমাটি ফাটান সাবেক মিস ইন্ডিয়া ও অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে আনেন ২০০৮ সালের ঘটনা, যার ভিত্তিতে ভারতব্যাপী ঝড় তুলেছে ‘মি-টু’ আন্দোলন। তনুশ্রী জানান, সে বছর ‘হর্ণ ওকে প্লিজ’ ছবির সেটে অভিনেতা নানা পাটেকার তাঁকে যৌনহেনস্থা করেছিলেন।

তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন পাটেকর। আপাতত তনু-নানা দু'জনেই আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন।

অভিযোগের তীর পরিচালকের দিকে
গত বছর পরিচালক বিকাশ বেহেলের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেনপ্রযোজনা সংস্থা ফ্যান্টম ফিল্মসের এক প্রাক্তন কর্মচারী। আর বেহেলের দুই সহযোগী পরিচালক - অনুরাগ কাশ্যপ ও বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে অভিযোগকারী মহিলাকে সমর্থন করে ফ্যান্টম ফিল্মস ভেঙে দেন।

এর পর অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতও বেহেলের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করেন। তবে বিকাশের মতে, পুরো বিষয়টি পেশাগত ঈর্ষার কারণে কাশ্যপ ও মোতওয়ানের সাজানো।

বলিউডের ‘বাবুজী’ও!
লেখক-প্রযোজক বিনতা নন্দ’র দাবি, ১৯ বছর আগে অভিনেতা আলোক নাথ তাঁর সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করেন। বিনতা ছাড়াও অভিনেত্রী সন্ধ্যা মৃদুল, আমাইরা দস্তুর, নবনীত নিশান ও কন্ঠশিল্পী সোনা মহাপাত্র’র মতো সুপরিচিত ব্যক্তিত্বরাও তাঁদের হয়রানির অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

‘আদর্শ’ পিতার চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জনকারী আলোক তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘আজকের দুনিয়ায়, যা-ই হোক না কেন, একজন মহিলার কথাতেই সবাই কান দেয়।’’

সুভাষ ঘাইয়ের কীর্তি
টিভি অভিনেত্রী ও ভারতীয় মডেল কেট শর্মার অভিযোগ, বিশিষ্ট পরিচালক সুভাষ ঘাই তাকে (কেট) জোর করে চুমে খেয়েছেন। কেট শর্মা পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগও দায়ের করেছেন। তবে সুভাষ ঘাই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

কেচ্ছায় জর্জরিত সাজিদ খান
বলিউডের আরেক পরিচালক সাজিদ খানের বিরুদ্ধে অভিনেত্রী সালোনি চোপড়া, সিমরান সুরি ও সাংবাদিক করিশমা উপাধ্যায়সহ একাধিক নারীর যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সামনে এসেছে ‘কাস্টিং কাউচ’-এর নোংরা চিত্র।

সাজিদের বোন চিত্রপরিচালক ফারাহ খান তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির অভিযোগের খবরে দুঃখ পেয়েছেন এবং বলেছেন, অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে সাজিদের উচিত আত্মসমর্পণ করা।

‘অ-শালীন’ রজত কাপূর
দু’জন নারী যৌন হয়রানি ও বেসামাল আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বিখ্যাত মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনেতা রজত কাপুরেরর বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে টুইটারে পোস্ট করে ক্ষমা চেয়ে কাপূর দাবি করেন, তিনি সারা জীবন একজন ভদ্র ও শালীন মানুষ হওয়ার চেষ্টা করে এসেছেন।

গানের জগতেও ‘মি-টু’
একটি সাক্ষাৎকার চলাকালীন এক নারী সাংবাদিকের সাথে ''আপত্তিকর আচরণ'' করার অভিযোগ ওঠে খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পী কৈলাস খেরের বিরুদ্ধে। এর পর আরেক গায়িকা সোনা মহাপাত্র দাবি করেন, কৈলাশ তাঁর সাথেও আপত্তিকর আচরণ করেছেন। কৈলাশের অবশ্য দাবি, এমন কোনো ঘটনা তাঁর মনেই নেই। তবে তিনি এ-ও বলেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু ভুল হয়ে থাকলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।

বিতর্কে আরেক গায়ক
‘মি-টু’র তালিকায় উঠে এলো আরেক গায়ক অভিজিতের নাম। বলিউডের এই গায়ক নাকি একটি পাবে একজন বিমানবালাকে হয়রানি করেছেন। অভিজিৎ ভট্টাচার্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘শুধুমাত্র ‘মোটা ও কুশ্রী’ মেয়েরাই পুরুষদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করছে।’’

তাঁর এই মন্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিতর্কে জড়ানো অবশ্য অভিজিতের জন্য নতুন কোনো ঘটনা নয়।

নগ্ন ছবি পাঠানোর অভিযোগ
নতুন প্রজন্মের আলোচিত অভিনেতা ও কমেডিয়ান উৎসব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে উঠেছে মহিলাদের কাছে নিজের নগ্ন ছবি পাঠানো ও বিনিময়ে নগ্ন ছবি চাওয়ার অভিযোগ। জনপ্রিয় কমেডি দল এআইবি’র নিয়মিত অভিনেতা উৎসব তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে টুইটারে ক্ষমা চেয়েছেন। এদিকে উত্সব চক্রবর্তীর সব ভিডিও এআইবি তাদের চ্যানেল থেকে মুছে দিয়েছে।

এবার ফাঁসলেন বিনোদ দুয়া
পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক বিনোদ দুয়াকে অভব্য আচরণ ও কর্মক্ষেত্রে হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত করেছেন চিত্রনির্মাতা নিষ্ঠা জৈন। এ বিষয়ে দুয়া কোনো মন্তব্য না করলেও তাঁর কন্যা কমেডিয়ান মল্লিকা দুয়া বাবার পাশে দাঁড়ান। তিনি (বিনোদ দুয়া) অনলাইন পোর্টাল ওয়্যার-এর সাংবাদিক। ওয়্যার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘‘আমাদের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (আইসিসি) অভিযোগগুলি সম্পর্কে সচেতন।’’

অভিযুক্ত সাবেক মন্ত্রী এম জে আকবর
সাংবাদিক প্রিয়া রামানি, গজলা ওয়াহাব, সুতপা পল ও তুষিতা প্যাটেলসহ বেশ কয়েকজন যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক ও সম্প্রতি পদত্যাগকারী মন্ত্রী এম জে আকবরের বিরুদ্ধে। তবে ইতিমধ্যে তিনি অভিযোগকারী প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। মামলায় আকবরের হয়ে ভারতের ৯৭জন আইনজীবী লড়ছেন বলে জানা গেছে। তবে ২০ জন নারী সাংবাদিক জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের সহকর্মীদের হয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেবেন।

নারীও অভিযুক্ত
সম্মতি ছাড়াই কমেডিয়ান কানিজ সুরকা-কে মঞ্চে চুম্বনের চেষ্টা করেছিলেন আরেক কমেডিয়ান অদিতি মিত্তল - এমনই অভিযোগ কানিজের। যদিও অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর অদিতি কানিজের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, আসলে তিনি আঘাত দিতে চাননি।

টলিউডেও ‘মি-টু’
অভিযোগ উঠেছে কলকাতার জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখার্জির বিরুদ্ধে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক নারী লিখেছেন সৃজিতের বিরুদ্ধে। সোশ্যাল মিডিয়াতেই এসবের জবাব দিয়েছেন সৃজিত। সূত্র : ডিডাব্লিউ

বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী