শিরোনাম
উষ্ণায়ন: পৃথিবী বাঁচাতে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা জাতিসংঘের
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ১১:১৩
উষ্ণায়ন: পৃথিবী বাঁচাতে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা জাতিসংঘের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে ধরণীকে বিপর্যয় থেকে বাঁচানোর জন্য নতুন করে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।


জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিবেদন অনুযায়ী তাপমাত্রার বিপজ্জনক বৃদ্ধি এড়াতে বিশ্বকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতিসংঘের বৈশ্বিক উষ্ণতা বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।


গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের গ্রহটি ১২ বছরের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির চূড়ান্ত সীমা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। যেটা প্রাক-শিল্পযুগের মাত্রার থেকেও বেশি। এতে করে আবহাওয়া পরিস্থিতি অস্বাভাবিক রূপ নেবে বিশেষ করে চরম দুর্ভিক্ষ, দাবানল, বন্যা সেইসঙ্গে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য সংকটের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ব নেতারা কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় আগামীতে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বিশ্বকে। আর কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সময়ও দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।



প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সম্পতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট এবং বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ ঝড়, বন্যা ও খরা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে।


আইপিসিসি বলেছে, বর্তমানে যে হারে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে যাবে।


তাপমাত্রার এই সীমা অতিক্রম এড়াতে, বিশ্বের উচিত, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুত, সুদূরপ্রসারী ও নজিরবিহীন পরিবর্তন আনা।


৬ হাজারেরও বেশি সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে পোল্যান্ডে হতে যাচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন। সেখানে বিশ্বনেতাদের উপর এ বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে জৈবজ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে। তবে গত ৩০ বছরে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়েছে, তা অপসারণ করতে ভারতের আয়তনের দ্বিগুণ এলাকায় জৈব জ্বালানি উৎপাদনকারী ফসল উৎপাদন করতে হবে। তাহলেই ১ হাজার ২০০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইডকে ভূগর্ভে পাঠানো সম্ভব হবে।


গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক জেনিফার মর্গান বলেছেন, বিজ্ঞানীরা অদূর ভবিষ্যতের জন্য যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, সেসব ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে।



আইপিসিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ভয়াবহতা খুব দ্রুতই টের পাবে বিশ্ববাসী। ছোট-বড় দ্বীপ, উন্নয়নশীল দেশ ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


বৈশ্বিক উষ্ণতা বিষয়ক প্রতিবেদনটির প্রধান সমন্বয়কারী লেখক অরোমার রেভির মতে, সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান কাজে লাগিয়ে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে বড় ধরণের পদক্ষেপ নিতে নাগরিক এবং ভোক্তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।


তিন বছর ধরে চলা গবেষণা ও এক সপ্তাহ ধরে বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে তর্কবিতর্কের পর জাতিসংঘের ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এর সদস্যরা গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার ইচানে বৈঠক করে জলবায়ু নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের কৌশল গ্রহণে সরকারকে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।


এখন তাপমাত্রার বৃদ্ধি যদি ১.৫ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখতে হয়, তা হলে ২০৫০ সালের মধ্যে পুরো পৃথিবীকে ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ হতে হবে।


অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাইমেট রিসার্চ প্রোগ্রামের প্রধান এবং আইপিসিসি রিপোর্টের মূল লেখক মাইলস অ্যালেন বললেন, ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ হওয়া মানে প্রকৃতি থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ ও ত্যাগের মধ্যে একটা সমতা রাখা। সেটা অর্জন করতে হলে প্রতি বছর আনুমানিক ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার শক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে, যা কিনা বিশ্বের জিডিপির ২.৫ শতাংশ। গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি অবশ্যই কমাতে হবে। কমাতে হবে গ্যাজেটের ব্যবহার। সেই সঙ্গে জোর দিতে হবে ‘জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং’য়ে। সূত্র: বিবিসি ও ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com