শিরোনাম
মালদ্বীপে প্রবাসী ভারতীয়দের ভবিষ্যৎ
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:১৫
মালদ্বীপে প্রবাসী ভারতীয়দের ভবিষ্যৎ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মালদ্বীপের পররাষ্ট্রনীতিতে ''ইন্ডিয়া ফার্স্ট'' নিয়ম অনেক দিনের পুরনো। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের শাসনামলে এ নিয়মও ''পুরনো'' হতে চলেছে। আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের মালদ্বীপ এখন ভারতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মনোযোগী হয়েছে চীনের প্রতি। দেশটির এ নতুন প্রবণতা শুধু নয়া দিল্লির সাউথ ব্লকেই বিস্ময় ও অস্বস্তি সৃষ্টি করেনি, মালদ্বীপপ্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যেও জন্ম দিয়েছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা।


প্রবাসী ভারতীয়দের সেই শঙ্কা ও উদ্বেগ ফুটে উঠেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমেও। মালদ্বীপ ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে : ইন্ডিয়ান ডেন্টিস্ট ইব্রাহিম সাঈদ (ছদ্মনাম) মালদ্বীপে আছেন ২০১৬ সাল থেকে। খুব তাড়তাড়ি দেশে ফিরে যাবেন - এমন ইচ্ছাও তাঁর ছিল না। থাকবে কেন? ভারতের কেরালায় ফিরে গিয়ে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা এ কাজ করে মাসে আয় করবেন ৩০০ মার্কিন ডলার। আর একই সময় দিয়ে ওই কাজে মালদ্বীপে আয় হয় মাসে ১,০০০ মার্কিন ডলার, এর বাইরে রোগীপিছু একটা কমিশনও আছে।


ইব্রাহিম বলেন, এদেশে বেশ ভালোই আছি। তবে এখানে আর কতো দিন থাকতে পারব, সেটা বুঝা যাবে এই সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের পর। প্রেসিডেন্ট (ইয়ামিন) যদি একদিন বলে দেন যে ভারতীয়দের আর দরকার নেই, তাহলে?


ইব্রাহিম একা নন, মালদ্বীপ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরুর পর মালদ্বীপপ্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে দেশটিতে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা ও ভয় বাসা বেঁধেছে।


মালদ্বীপে প্রবাসীদের শীর্ষে অবস্থান বাংলাদেশীদের। এর পরের অবস্থানই ভারতীয়দের। সরকারিভাবে তাদের সংখ্যা ২১ হাজার হলেও চোরাই পথে আসা অনিবন্ধিতদের মিলিয়ে এ সংখ্যা ৩০ হাজারের মতোই হবে বলে মনে করা হয়। এরা কাজ করে নির্মাণ, সেবা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে।


ইব্রাহিমের কথায় ফিরে যাই। গত ক'মাস ধরে তিনি মালদ্বীপের গণতন্ত্রে ধ্বস এবং ভারতের সাথে দেশটির সম্পর্কে টানাপোড়েনের খবরাখবর পড়ে আসছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জানতে পারেন যে কেরালাপ্রবাসী মালদিভিয়ানদের পোষ্যদের ভিসা দিতে অস্বীকার করেছে ভারত। আর তারই পাল্টা হিসেবে ভারতীয়দের ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু করা বন্ধ করে দেয় মালদ্বীপ। এ অবস্থার আর কোনো রদবদল ঘটেনি।


ইব্রাহিম জানান যে তিনি এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রবাসী ভারতীয়দের নিয়ে মালদিভিয়ানদের বিরূপ মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন। মালদিভিয়ানরা বলছে যে তারা মালদ্বীপে আর ভারতীয়দের দেখতে চায় না। এমনকি তাঁর নিয়োগকর্তাও এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে।


কিভাবে - জানতে চাইলে ইব্রাহিম বলেন, তারা আমার কমিশন ৫০% কমিয়ে দিয়েছেন। অন্তত একবার হুমকি দিয়েছেন চাকরি খাওয়ার। এ নিয়ে কিছু বলতে গেলেই তারা বলবেন, ''তুমি চলে যাও। ভারত ও মালয়শিয়া থেকে বহু ডেন্টিস্ট এখানে আসার জন্য বসে আছে।''


এ সবই হচ্ছে মালদ্বীপ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে। অথচ গোত্র, ভাষা ও সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের কারণে দু'টি দেশ বহুকাল ধরে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।


দ্বীপদেশটিতে ভারত প্রতিবছর ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ওষুধ, টেক্সটাইল এবং কৃষি ও পোল্ট্রিপণ্য রফতানি করে থাকে। আবার প্রতিবছর কয়েক হাজার মালদ্বীপবাসী শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ভারত যায়। ফলে দেশটির লোকজন ভারতকে ''বিগ ব্রাদার'' হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত।


তবে মালদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন তাঁর গত চার বছরের শাসনামলে দেশটির পররাষ্ট্রনীতির ঐতিহ্যবাহী ''ইন্ডিয়া ফার্স্ট'' নীতিতে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিতে এবং ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও পাকিস্তান ও সউদি আরবের সহায়তা ও বিনিয়োগ আকর্ষণে সফল হয়েছেন।


২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চীনের সাথে একটি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি হয় মালদ্বীপের। তার ক'দিন পরই মালদ্বীপে ভারতের রাষ্ট্রদূত অখিলেশ মিশ্রের সাথে লোকাল কাউন্সিলের কয়েকজন সদস্যের পরিকল্পিত বৈঠক বাতিল করা হয়। আর এপ্রিলে মালদ্বীপ ভারতকে বলে, ভারত যেন মালদ্বীপকে উপহার হিসেবে দেয়া ক'টি হেলিকপ্টার ফিরিয়ে নিয়ে যায়।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com