শিরোনাম
ট্রাম্পকে নিয়ে বিস্ফোরক বই
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:২৫
ট্রাম্পকে নিয়ে বিস্ফোরক বই
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিখ্যাত আমেরিকান অনুসন্ধানী সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডের নাম এ প্রজন্মের অনেকের জানা নাও থাকতে পারে। বব হচ্ছেন সেই সাংবাদিক, যিনি ওয়াটারগেট কেলেংকারি ফাঁস করে ১৯৭০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পতন ডেকে এনেছিলেন। ওয়াশিংটনে ক্ষমতার কেন্দ্রে এমন সব লোকদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা এতোটাই যে কোথায় কি ঘটছে কিছুই তার অজানা থাকে না।


প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা বব উডওয়ার্ডের নতুন একটি বইয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ভেতরের বহু বিস্ফোরক তথ্য বেরিয়ে এসেছে, যা নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ চলছে এখন।


'ফিয়ার : ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস' নামের এ বইয়ে বব উডওয়ার্ড এমনসব লোকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে লিখেছেন যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলেছেন এবং বর্ণিত বৈঠকগুলোতে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।


'চলো আমরা সিরিয়ায় গিয়ে আসাদকে মেরে ফেলি'


২০১৭ সালের এপ্রিলে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা ঘটলো। ধরা হলো, সিরিয়ান সরকারি বাহিনীই এ কাজ করেছে। এ নিয়ে ট্রাম্প তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসকে নাকি বলেছিলেন, "চলো আমরা সিরিয়ায় যাই, আসাদকে (গালি) মেরে ফেলি, ওদের সবাইকে (গালি) মেরে ফেলি।'' কী ভয়ানক কথা!


মি. ম্যাটিস প্রথম তা মেনে নিলেও পরে বলেছিলেন, তিনি এমন কিছু করবেন না।


'আপনি হাজিরা দেবেন না, দিলে আপনাকে জেলে যেতে হবে'


ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় রাশিয়ার সাথে যোগাযোগের অভিযোগের যে তদন্ত করছে রবার্ট মুলারের বিশেষ কৌঁসুলিরা - তার সামনে হাজিরা দিতে হলে প্রেসিডেন্ট তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জবাব ঠিকমত দিতে পারবেন কিনা - তা দেখতে একটা 'পরীক্ষামূলক মহড়ার' আয়োজন করেছিলেন তার আইনজীবী জন ডাউড। সেই মহড়ায় দেখা গেল, চোখা চোখা প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে মি. ট্রাম্প হয়রান হয়ে পড়ছেন, এক পর্যায়ে ক্রুদ্ধভাবে এই তদন্তকে ভুয়া বলে বর্ণনা করে বসেন।


জন ডাউড বললেন, "আপনি সাক্ষ্য দিতে যাবেন না। এটা করলে আপনাকে কমলা রঙের জাম্পস্যুট পরতে হবে (অর্থাৎ জেলে যেতে হবে)।"


ডাউড তখন মি মুলারের সাথে দেখা করে বললেন তিনি প্রেসিডেন্টের সাথে তদন্তকারীদের সাক্ষাতের বিরোধী। কারণ তিনি চান না যে প্রেসিডেন্টকে 'একটা নির্বোধের মত' দেখাক, এবং বিশ্বের সামনে গোটা জাতিকে লজ্জা পেতে হয়।


কিন্তু পরে ডাউড যখন জানলেন যে প্রেসিডেন্ট সাক্ষ্য দেবেন বলে মনস্থির করেছেন, তার পরদিনই তিনি (ডাউড) পদত্যাগ করলেন।


প্রেসিডেন্টের ডেস্ক থেকে কাগজ চুরি করেছিলেন তার উপদেষ্টারা


উডওয়ার্ড তাঁর বইতে লিখেছেন, ট্রাম্পের বিপজ্জনক প্রবণতার ধারণা পাওয়া যায় একটি ঘটনায়।ঘটনাটি এ রকম - তিনি একটি দলিলে স্বাক্ষর করতে চেয়েছিলেন, যার মাধ্যমে উত্তর আমেরিকান ফ্রি ট্রেড চুক্তি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। তিনি যাতে এতে স্বাক্ষর করতে না পারেন সেজন্য তার প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গ্যারি কোহন এবং হোয়াইট হাউসের স্টাফ সেক্রেটারি রব পোর্টার দলিলগুলো ট্রাম্পের ডেস্ক থেকে সরিয়ে নিয়ে লুকিয়ে ফেলেন।


উডওয়ার্ড ঘটনাটিকে বর্ণনা করেছেন 'একটি প্রশাসনিক ক্যু দেতা-র চাইতে কম কিছু নয়' হিসেবে।


বদমেজাজী প্রেসিডেন্ট


উডওয়ার্ড লিখেছেন, বদমেজাজী ট্রাম্প সব সময়ই হোয়াইট হাউসে তার কর্মকর্তাদের বকাঝকা করেন।


বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসকে ট্রাম্প একবার বলেছিলেন,আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। আমি চাই না আপনি আর কোনো আলোচনায় থাকুন। আপনার দিন শেষ হয়ে গেছে।"


নিজের প্রথম চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রাইবাসকে 'ইঁদুরের সাথে' তুলনা করে ট্রাম্প বলেছিলেন, 'ও শুধু তিড়িংবিড়িং করে ছোটাছুটি করে।'


অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্সকে প্রকাশ্যেই অপমান করেছিলেন ট্রাম্প। আর আড়ালে বলেছিলেন, "এই লোকটা একটা মানসিক প্রতিবন্ধী, দক্ষিণ থেকে আসা একটা একটা নির্বোধ। মফস্বলের আইনজীবী হবার যোগ্যতাও তার নেই।"


প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্পর্কে অন্যরা যা বলতেন


ট্রাম্প নিজে অন্যদের নিয়ে যেরকম কটু কথা বলেন, তার স্টাফরাও পাল্টা বলতে ছাড়েননি। উডওয়ার্ডের বইতে সেরকম কিছু তথ্যও আছে।


তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কোহনের মতে ট্রাম্প একজন 'পেশাদার মিথ্যেবাদী'।


তার চিফ অব স্টাফ কেলি একবার ট্রাম্প সম্পর্কে বলেন, 'তিনি একটি নির্বোধ (ইডিয়ট) এবং তাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করা বৃথা।


প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেছিলেন, পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ট্রাম্পের জ্ঞানবুদ্ধি ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়া একটা ছেলের মতো।


ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেডরুমকে 'শয়তানের কারখানা' বলে বর্ণনা করেছেন মি. কেলির পূর্বসুরী রেইন্স প্রাইবাস। এখান থেকেই নিয়মিত টুইটার বার্তা ছাড়েন প্রেসিডেন্ট।


উডওয়ার্ড আরো লিখেছেন, ট্রাম্প নিজে মনে করেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার চেয়ে চমৎকার কাজ আর কেউ করতে পারেননি।


তার সাথে ট্রাম্পের টেলিফোন কথোপকথনের একটি রেকর্ডিং প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। তাতে প্রেসিডেন্ট বলছেন, উডওয়ার্ডের বইয়ের কথা তাকে বলা হয় নি, তার সাক্ষাৎকারও কখনো চাওয়া হয়নি।


কিন্তু উডওয়ার্ড বলছেন, এ কথা একেবারেই ঠিক নয়। সূত্র : বিবিসি


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com