শিরোনাম
মিয়ানমারের বিচার দাবি আসিয়ানের ১৩২ এমপির
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০১৮, ১৭:১৩
মিয়ানমারের বিচার দাবি আসিয়ানের ১৩২ এমপির
ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে জড়িতদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের দাবি জানিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশের ১৩২ জন সংসদ সদস্য। এজন্য তদন্তের আহবানও জানিয়েছেন তারা।


রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাখাইনে জাতিগত নিধন শুরু হওয়ার এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগের দিন শুক্রবার দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে তারা সম্মিলিত এ আহবান জানান।


সংবাদ মাধ্যম দি গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের (এপিএইচআর) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা রাখাইনে প্রাণঘাতী অভিযানের দায়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।


১৩২ সংসদ সদস্যের পক্ষে মালয়েশিয়ার জোট সরকারের রাজনীতিবিদ চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, নিজের অপরাধ নিয়ে মিয়ানমার তদন্ত করতে অক্ষম ও অনিচ্ছুক। কাজেই আমরা এমন একটি স্তরে রয়েছি যে, মিয়ানমারকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নিতে হবে।


তিনি বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যেতে আরও ১৩১ এমপির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আমি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে আহবান জানাচ্ছি।


মালয়েশিয়ার এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, মিয়ানমারে যারা এই ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যতে একই অপরাধ করার জন্য তাদের মুক্তভাবে ছেড়ে দেয়া যায় না।


মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানে ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা ও গ্রামের পর গ্রাম এ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীটির বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নারীরা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। জাতিসংঘের ভাষায় যেটি জাতিগত নিধনের জ্বলন্ত উদহারণ।


যৌথ এক বিবৃতিতে আসিয়ান এমপিরা বলেন, রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকার এবং দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়াতে হবে।


বিবৃতিদাতা আইনপ্রণেতারা হচ্ছেন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, সিঙ্গাপুর ও পূর্ব তিমুরের পার্লামেন্ট সদস্য।



সেখানে বলা হয়, মিয়ানমার রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর না করায় রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় তাদের বিচারের মুখোমুখি করার এখতিয়ার হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নেই।


এ অবস্থায় কেবল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদই পারে আইসিসির মাধ্যমে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরুর ব্যবস্থা করতে।


বিবৃতিদাতা এমপিরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানকেও এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আসিয়ানের সদস্য দেশ ইন্দোনেশিয়া আগামী বছর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যোগ দিচ্ছে অস্থায়ী সদস্য হিসেবে।



ইন্দোনেশিয়া ও আসিয়ান যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের জন্য মিয়ানমার সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করে- সে আহ্বানও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।


জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংগি লি যাতে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্ত করার সুযোগ পান, সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ এমপিরা।


তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে সুবিচারের অভাব কেবল রোহিঙ্গাদের নয়, কাচিন ও শানপ্রদেশে অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপরও প্রভাব ফেলছে, যেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের কারণে হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।



এপিএইচআরের পর্ষদ সদস্য ইন্দোনেশিয়ার এমপি ইভা কুসুমা সুন্দরী বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে এর বিচার হবে সেই আশায় বসে থাকার সময় পেরিয়ে গেছে। সত্যিকারের সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার ম্যানডেট তাদের আর নেই।


ইভা কুসুমা সুন্দরী বলেন, আসিয়ান দেশগুলোর হস্তক্ষেপ না করার ভয়ঙ্কর নীতি থেকে সরে আসার এটাই সঠিক সময়। এখনই সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সংকট এখন মানবতার। জোটের সদস্য একটি দেশে নির্বিচারে এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড আমরা চলতে দিতে পারি না।



উল্লেখ্য, গত জুনে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠনের একটি জোট আইসিসি প্রসিকিউটরদের কাছে রোহিঙ্গা নিপীড়নের তথ্য পাঠায়। আইসিসির তদন্তের জন্য শুনানির নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রসিকিউটর ফাতৌ বেনসৌদা।


সূত্র: দি গার্ডিয়ান


বিবার্তা/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com