শিরোনাম
ফেসবুকে এখনো রোহিঙ্গা-বিদ্বেষী হাজার পোস্ট
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১২:০৪
ফেসবুকে এখনো রোহিঙ্গা-বিদ্বেষী হাজার পোস্ট
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা-বিদ্বেষী এক হাজারের বেশি পোস্ট ফেসবুকে ঘোরাফেরা করেছে। যেখানে তাদের হত্যা করার আহবানসহ ঘৃণাত্মক নানারকম কথাবার্তা দেখা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।


অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিষয় ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও, এই সামাজিক নেটওয়ার্কটিকে এখনো মিয়ানমারের এই মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।


রয়টার্স বলছে, কিছু কিছু পোস্ট ছয় বছর ধরে অনলাইনে রয়েছে।


ফেসবুকে নিয়মনীতি মোতাবেক জাতিগত কোনো গোষ্ঠীর ওপর ‘সহিংসতা কিংবা অমানবিক’ আক্রমণ নিষিদ্ধ।


যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুক এ ধরনের আক্রমণাত্মক পোস্ট শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সাধারণত সাইট ব্যবহারকারীদের ওপর নির্ভর করে, এর সফটওয়্যার বার্মিজ ভাষা বুঝতে যথেষ্ট দক্ষ নয়।


বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, ফেসবুক সব ধরনের ফ্ল্যাগড ম্যাটেরিয়াল (যা নিয়ে কারো আপত্তি আছে) সরিয়ে ফেলেছে।


ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে স্কুল অব ল’র হিউম্যান রাইটস সেন্টারের সাথে যৌথভাবে অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল। এর আগে জাতিসংঘের তরফ থেকে সমালোচনার মুখে পড়ে ফেসবুক, সেইসাথে মার্কিন ও ব্রিটিশ রাজনৈতিক নেতারাও সমালোচনা করেন।


২০১৭ সালের আগস্ট থেকে সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতনে মুখে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, বার্মিজ সৈন্যরা এবং সন্ত্রাসীরা তাদের সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।


রয়টার্স বলেছে, তাদের হাতে আসা অধিকাংশ রোহিঙ্গা-বিরোধী মন্তব্য, ছবি এবং ভিডিও বার্মিজ ভাষায় পোস্ট করা। সেগুলোতে যা বলা হয়েছে:


- রোহিঙ্গাদের গুলি করতে, আগুন লাগিয়ে দেয়া এবং শুকরকে খাওয়ানোর আহবান জানানো হয়েছে,


- গণহত্যার দাবি, একজন লিখেছেন, আমরা তাদের সাথে লড়াই করবো, ঠিক যেভাবে হিটলার ইহুদির দমন করেছেন


- মুসলিম-বিরোধী পর্নোগ্রাফিক অশ্লীল ছবি,


- তাদেরকে কুকুর ও ধর্ষণকারী হিসেবে তুলে ধরা।


এক বিবৃতিতে ফেসবুক স্বীকার করেছে যে, ঘৃণাত্মক মনোভাব ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কারা দায়ী সেটি খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে ছিল। মিয়ানমারের মতো দেশে যেখানে বহু লোক প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।


ফেসবুক বলেছে, আমরা ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে এবং ঘৃণা উসকে দেয়া ঠেকাতে সাধ্যমত কঠোর পরিশ্রম করছি।


গত বছর পণ্য নীতি এবং কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে যে, অফলাইন থাকা অবস্থায় সম্ভাব্য ক্ষতি ঠেকাতে রিপোর্ট করা কন্টেন্টে দ্রুত সাড়া দেয়া, সক্রিয়ভাবে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য শনাক্ত করার পদ্ধতির উন্নতি।


রয়টার্স বলেছে, মিয়ানমার সম্পর্কিত বেশিরভাগ তথ্য ফেসবুক আরেকটি ফার্ম অ্যাকেঞ্চার থেকে আউট-সোর্স করেছে, যেখানে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের রিপোর্ট হলে তা যাচাইয়ের জন্য ৬০ জনের ওপর নির্ভর করা হয়।


মিয়ানমারে পাঁচ কোটি মানুষের বাস, তাদের মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ নিয়মিতভাবে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে।


গত মার্চে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উসকে দেয়ার পেছনে ফেসবুক ব্যবহারের বড় ধরনের ভূমিকা ছিল।


এরপর ফেসবুক প্রধান মার্ক জুকারবার্গকে জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় সামাজিক এই নেটওয়ার্কের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মার্কিন সিনেটরদের কাছে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয়।


ব্রিটেনের ডিজিটাল, সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও খেলাধুলা সংক্রান্ত বিভাগ যারা ফেকনিউজ বা ভুয়া খবর নিয়ে নিজস্বভাবে তদন্ত করেছে, তারা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য মোকাবেলায় ফেসবুকের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তার তথ্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি।


কমিটি তাদের রিপোর্টে জানায়, সামাজিক মাধ্যমটি রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার বন্ধ করতে কোনোকিছু করেছে - এমন প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com