শিরোনাম
'চীনা বুদ্ধির' কূটনীতি
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০১৮, ১৬:৪৬
'চীনা বুদ্ধির' কূটনীতি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ইরান, ইসরাইল আর সৌদি আরব - মধ্যপ্রাচ্যের এই তিন শক্তিধর দেশ প্রায় ক্ষেত্রেই থাকে একে অপরের বিপরীত শিবিরে । এদের সম্পর্ককে বর্ণনা করা যায় এভাবে - হয় 'বৈরী', নয়তো 'কোনো সম্পর্কই নেই' । কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এদের সবার সাথেই চীনের বেশ ভালো সম্পর্ক । কেন, এবং কি করে এটা সম্ভব হচ্ছে?
জটিল হিসেব


ইরান, সৌদি আরব, ইসরাইল - প্রত্যেকেরই অপরের সম্পর্কে রয়েছে গভীর সন্দেহ ও তিক্ততা। এর মধ্যে ইরান ও সৌদি আরব হচ্ছে শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ, এবং তারা সিরিয়া, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনে তাদের মিত্রদের দিয়ে পেছন থেকে প্রক্সি যুদ্ধ চালাচ্ছে।


ইরান ও সৌদি আরব - দুটি দেশই আবার ইসরাইলের সমালোচক এবং কারোরই ইসরায়েলের সাথে কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু ইরানের যে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি - তাকে হুমকি বলে মনে করে ইসরাইল ও সৌদি আরব দুদেশই। উভয় দেশ আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র, যে যুক্তরাষ্ট্র আবার ইরানের প্রধান শত্রু।


এরকম একটা ধাঁধার মধ্যই এ তিন দেশের সাথেই ভালো সম্পর্ক রেখে চলেছে চীন। এই তিন শক্তির আঞ্চলিক বৈরিতা চীনের ওপর কোনো প্রভাবই ফেলেনি। কারণ, চীন মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর দেশগুলোর ক্ষেত্রে দূরদর্শী নীতি নিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ দেশগুলোর সাথে রাষ্ট্রীয় সফর বিনিময় হয়েছে। জুন মাসেই চীন সফর করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।


ইরানের জন্য এক বড় যোগাযোগের পথ


ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার সময়ই চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক জোরদার হয়। ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় চীন ছিল ইরানের অস্ত্রের এক বড় যোগানদাতা। পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে মার্কিন ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চীন-ইরান বাণিজ্য অক্ষুণ্ণ ছিল।


গত ১০ জুন ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি চীন সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। চীনও এ থেকে লাভবান হয়েছে, তারা ইরানের তেল আমদানি করেছে।


ইরানের অবস্থান মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ইউরোপের মাঝখানে এমন এক জায়গায় যে তারা চীনের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ' নামে বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি হয়ে উঠবে এক নতুন বাণিজ্য করিডর, যাতে ৮ লক্ষ কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় করা হতে পারে।


ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে ছয়টি শক্তিধর দেশের সাথে যে চুক্তি হয়েছিল তা থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ায় চীন-ইরান সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ইরান থেকে পশ্চিমা কম্পানিগুলো নিষেধাজ্ঞার কারণে চলে যাওয়ায় ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে যাচ্ছে চীনা কোম্পানিগুলো।


ইসরাইলে চীনা বিনিয়োগ


ইসরাইলের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি চীনের সাথেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ইসরায়েল। গত বছর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চীন সফরের সময় দুদেশের মধ্যে ২,৫০০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে। চীন থেকে ইসরাইলে পর্যটকও যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি - বছরে এক লাখেরও বেশি।


ইসরাইলের উচ্চ প্রযুক্তি সেক্টরে চীন বিনিয়োগ করেছে প্রায় ১৬০০ কোটি ডলার।


তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অন্য চিত্র। চীনই আবার জাতিসঙ্ঘের যখনই সুযোগ পেয়েছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।


চীন আর সৌদি আরবের সম্পর্ক : শুধুই তেলের নয়


গত বছর মার্চে যখন সৌদি বাদশা সালমানকে চীনে স্বাগত জানালেন প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং সেটা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারকের সাথে সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারকের সাক্ষাৎ।


চীন মধ্যপ্রাচ্যে তার উপস্থিতি বাড়াতে সৌদি আরবে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী। তারা ইতিমধ্যেই সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, যদিও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের সব ক্ষেত্রে মতৈক্য নেই।


ইয়েমেনের সৌদি-সমর্থক সরকারকে চীন হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন দিচ্ছে, কিন্তু সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে চীন আবার সৌদি আরবের শত্রু বাশার আল-আসাদ সরকারের পক্ষে।


প্রশ্ন হলো, এসবের মধ্যে কিভাবে চীন ভারসাম্য বজায় রেখে তিনটি দেশের সম্পর্ক রক্ষা করছে?


মার্কিন কম্পানি স্ট্রাটফর-এর বিশ্লেষক এমিলি হথর্ন বলছেন, যে দেশগুলো পরস্পরের বৈরি তাদের প্রত্যেকের সাথে চীন সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে পারছে কয়েকটি কারণে।


"চীন সবসময়ই ধর্ম বা রাজনৈতিক আদর্শের মধ্যে জড়িয়ে না পড়ে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখতে চায়। মধ্যপ্রাচ্যের মতো একটি অঞ্চল, যেখানে রাজনৈতিক মেরুকরণ অত্যন্ত তীব্র, সেখানে চীন কোনো পক্ষ না নিয়ে চলতে পারছে।"


চীনের সাথে বাণিজ্য করে ও বিনিয়োগ নিয়ে অংশীদাররা খুশি। কারণ, পেইচিং কোনো আদর্শ চাপিয়ে দিচ্ছে না, যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্য দেশের ক্ষেত্রে হয়।


তা ছাড়া পেইচিং অন্য দেশকে সমর্থনের সাথে তাদের মানবাধিকারের নীতিকে জড়িয়ে ফেলছে না।


এমিলি হথর্ন বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে চীনের তিনটি লক্ষ্য - জ্বালানি নিরাপত্তা, হাই টেক সেক্টরে বাণিজ্যের সুযোগ এবং বেল্ট এ্যান্ড রোড উদ্যোগে বিনিয়োগ। এগুলোর সাথে ইরান, ইসরাইল ও সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারটা মিলে যায়।


হথর্ন আরো বলছেন, চীন এখন পর্যন্ত সফল হয়েছে, তবে ভবিষ্যতে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব একটা সময় সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন ইরানের ক্ষেত্রে চীন যা করছে তা মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে খোলাখুলি উপেক্ষা করার শামিল এবং ওয়াশিংটনের চোখে এটা ধরা পড়বে। সূত্র : বিবিসি


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com