শিরোনাম
পাকিস্তান : গণতন্ত্রের স্বপ্ন কত দূর
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০১৮, ১৭:৪৫
পাকিস্তান : গণতন্ত্রের স্বপ্ন কত দূর
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পাকিস্তানে ১১তম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন এ প্রতিবেদন পাঠকের কাছে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, তখনও নির্বাচনের পূর্ণ ফল এসে পৌঁছায়নি, যদিও প্রবণতাটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, জোট গড়ে হলেও ইমরান খানই হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।


পাশাপাশি নির্বাচনের আগে থেকেই এ প্রশ্ন দেশে-বিদেশে ঘুরপাক খাচ্ছে যে, ৭০ বছরের ইতিহাসে প্রায় অর্ধেক সময় যে দেশ শাসন করেছে সেনাবাহিনী, সেই দেশটি কি নিরঙ্কুশ গণতন্ত্র ফিরে পাবে, নাকি সেনাচক্রের কারসাজিতে আবারও ফিকে হয়ে যাবে গণতন্ত্রের স্বপ্ন!


৭০ বছরের ইতিহাসে দেখা যায়, পাকিস্তান নামের দেশটিতে কখনও নামকাওয়াস্তে গণতন্ত্র এসেছে বটে, কিন্তু তারপরই আবার চলে এসেছে সামরিক সরকার।


পোশাকি গণতন্ত্র ও পূর্ণ সামরিকতন্ত্র - এই দুই ধরনের ব্যবস্থাই বারবার পালাবদল করেছে পাকিস্তানে। এবারের নির্বাচন নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে কেউ কেউ 'গণতান্ত্রিক অভ্যূত্থানের' ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন। সেজন্য বরাবরের মতো এবারও সন্দেহ করা হচ্ছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে।


অতীতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সরাসরি অভ্যূত্থান ঘটিয়েছে, আর তা না-হলে বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটিয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় এমন কৌশল নিয়েছে, যেন সেই সরকার আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে।


এসব বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার বন্ধ হয়েছিল ২০০৮ সালে। সে কারণে পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচিত সরকার ২০১৩ সালে তাদের মেয়াদ শেষ করতে পেরেছিল। তখন থেকেই আবার পাকিস্তানের গণতন্ত্রের স্রোত উল্টোদিকে বইতে শুরু করেছে।


সমালোচকরা বলছেন, সামরিক প্রশাসন এখন আবার পূর্ণ ক্ষমতা ফিরে পেতে পুরোনো কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে।


সন্দেহের তিন কারণ
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সন্দেহের কেন্দ্রে এসেছে, সেজন্য তিনটি ঘটনাকে প্রমাণ হিসেবে বলা হচ্ছে।


প্রথমত, আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ বেছে বেছে বিদায়ী সরকারের কয়েকজনকে অভিযুক্ত করেছে। আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন, পাকিস্তানে বিচার বিভাগ বিভিন্ন আইন ব্যবহার করে বিদায়ী সরকারের ডানা কেটে দিয়ে বিরোধী পক্ষগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি করছে।


ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকীর বক্তব্যেও বিষয়গুলো উঠে এসেছে। গত রবিবার রাওয়ালপিন্ডি বার অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে বিচারপতি সিদ্দিকী বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিচারবিভাগে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। নওয়াজ শরিফকে যেন মুক্তি দেয়া না হয়, সেজন্য সংস্থাটি চাপ সৃষ্টি করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।


বিচারপতি সিদ্দিকী এমন বলেছেন যে, তিনি আইএসআই'র বিরুদ্ধে সত্য কথা বলতে ভয় পান না। তিনি বলেছেন, "আমাকে যদি মেরে ফেলতেও চায়, তারপরও আমি ভয় পাই না।"


দ্বিতীয়ত, এবার নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলোকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ জঙ্গীদের কর্মকাণ্ড দেখেও না দেখার ভান করছে।


তৃতীয়ত, ভোটের প্রক্রিয়ায় বা তা পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।


এসবের কিছু কিছু আলামত ইতিমধ্যেই দেখা গেছে।


নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগের অনেক প্রার্থীকে দল ছেড়ে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফে যোগ দিতে অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধ্য করা হয়েছে। যারা দল ছাড়ার টোপে রাজি হননি, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে বা তাদের হয়রানি পোহাতে হচ্ছে।


প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টিও চাপে রয়েছে। দলটির সিনিয়র কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ নতুন করে তোলা হয়েছে।


বামপন্থী আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) গুরুত্বপূর্ণ একজন প্রার্থী গত সপ্তাহে পেশোয়ারে আত্নঘাতী হামলায় নিহত হয়েছেন। একই ধরনের হামলায় আরও দু'জন প্রার্থী নিহত হন। বেলুচিস্তানে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী একজন প্রার্থি গিজেন মারিকে গৃহবন্দি হিসেবে থাকতে হয়েছে। কিন্তু পাশের নির্বাচনী এলাকাতেই জঙ্গী সম্পৃক্ততা আছে, এমন একজন প্রার্থী শফিক মেঙ্গাল নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। তার মতো নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনগুলোর অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।


গণমাধ্যমও অজানা কর্তৃপক্ষ থেকে চাপের মধ্যে ছিল। নির্বাচনের বাছাই করা কিছু খবর প্রচারে তাদের বাধ্য করা হয়।


এমন পরিস্থিতি তৈরির পেছনে সামরিক বাহিনীর হাত সক্রিয় ছিল বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ গণতন্ত্র আসলে অনেক দূরে বলেই বলা হচ্ছে। বরং গণতন্ত্রের আড়ালে সামরিক শক্তির অধীনে একটা শাসনব্যবস্থা বা একটা অভ্যূত্থান হচ্ছে - এই ভয় কাজ করছে বিশ্লেষকদের মাঝে। সূত্র : বিবিসি


বিবার্তা/হুমায়ুন/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com